নয়াদিল্লি, 26 জুলাই: কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার অনুমতি দিলেন লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা ৷ সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর খবর অনুযায়ী, অধ্যক্ষ বিরোধী জোটকে অনাস্থা আনার অনুমতি দিলেও, কখন এই প্রস্তাবটি আলোচনার জন্য লোকসভার কক্ষে পেশ করা হবে, তা জানাননি ৷ তিনি শুধু বলেন, ‘‘সব দলের নেতাদের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করব এবং তার পরে আপনাদের জানাব কোন সময়ে এই অনাস্থা প্রস্তাব আলোচনার জন্য সংসদে তোলা হবে ৷’’ উল্লেখ্য, লোকসভার 543টি আসনে এনডিএ জোটকে বাদ দিলে বিজেপির দখলে 301টি আসন রয়েছে ৷ অর্থাৎ, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে লোকসভায় এই মুহূর্তে ক্ষমতায় রয়েছে মোদি সরকার ৷
উল্লেখ্য, মণিপুরে মেইতেই এবং কুকি জনজাতির মধ্যে গত 3 মার্চ থেকে চলা সংঘাত এবং তার জেরে মণিপুরে মহিলাদের উপর নির্যাতন এবং অগণিত মানুষের মৃত্যুর অভিযোগে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে আজ লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে বিরোধীজোট ৷ বিরোধীদের সেই অনাস্থা প্রস্তাব পেশের অনুমতি দিয়েছেন অধ্যক্ষ ৷ এ দিন বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের তরফে কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ অনাস্থা প্রস্তাবের নোটিশ পেশ করেন ৷ এর পর অধ্যক্ষ প্রশ্ন করেন, কতজন সাংসদ এই প্রস্তাবের নোটিশে সম্মতি জানাচ্ছেন ? অধিবেশন কক্ষের অধিকাংশ সাংসদ সেই প্রস্তাব পেশের সম্মতি দিলে, অধ্যক্ষ সেটিকে গ্রহণ করেন এবং জানান অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সময় পরে নির্ধারণ করা হবে ৷
তবে, অনাস্থা নিয়ে ভাবছে না কেন্দ্রীয় সরকার ৷ এ নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবকে স্বাগত জানাচ্ছে ৷ তাঁরা এই অনাস্থা নিয়ে চিন্তিত নন ৷ কারণ, সরকার সবরকম পরিস্থিতির জন্য তৈরি ৷ অর্জুন রাম মেঘওয়ালের এই আত্মবিশ্বাসের একমাত্র কারণ, এনডিএ সরকারের সংখ্যা ৷ লোকসভায় এখনও পর্যন্ত বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় রয়েছে ৷ তাদের সাংসদ সংখ্যা 301 ৷ আর এনডিএ-র বাকি জোট শরিকদের মিলিয়ে সংখ্যাটা 320-র উপরে ৷ এখানে উল্লেখ্য, শিব সেনা বর্তমানে দু’ভাগে বিভক্ত ৷ একদিকে উদ্ধবগোষ্ঠী এবং অন্যদিকে একনাথ শিন্ডেগোষ্ঠী ৷ ফলে তাদের 18 জন সাংসদদের কারা কোন দিকে সমর্থন করবেন তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে ৷
20 জুলাই সংসদের বাদল অধিবেশনের শুরুর দিন থেকেই মণিপুর ইস্যুতে উত্তাল হয়ে রয়েছে লোকসভা ও রাজ্যসভা ৷ বিরোধীদের হট্টগোলে বারেবারে মুলতুবি হয়েছে দুই কক্ষে অধিবেশন ৷ এই পরিস্থিতিতে অশান্ত মণিপুর এবং সেখানে নারী নির্যাতনের অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেছেন বিরোধী জোট ৷ কিন্তু, সংসদীয় মন্ত্রীর তরফে এ নিয়ে কোনও উল্লেখ করা হয়নি ৷ তার পরেও বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের তরফে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৷
আরও পড়ুন: সংসদ চত্বরে মোমবাতি হাতে 'ইন্ডিয়া'র সাংসদরা, আসছে বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব
উল্লেখ্য, এর আগে 62-র চিনযুদ্ধের পর জওহরলাল নেহরুর সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা পেশ করেছিল বিরোধীরা ৷ ইন্দিরা গান্ধির সময়ে মোট পনেরোবার অনাস্থা পেশ হয় ৷ প্রতিবারেই তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে সফল হন ৷ লালবাহাদুর শাস্ত্রী, রাজীব গান্ধি, অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং মনমোহন সিংয়ের সরকারের বিরুদ্ধেও অনাস্থা আনা হয়েছিল ৷ লালবাহাদুর শাস্ত্রীর সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে একটানা 24 ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আলোচনা হয়েছিল লোকসভায় ৷
