ETV Bharat / bharat

কোভিড-19 ভ্যাকসিন নিয়ে কিছু ধারণা ও আসল তথ্য

author img

By

Published : Dec 27, 2020, 2:35 PM IST

COVID-19 vaccines: Myths and facts
কোভিড-19 ভ্যাকসিন নিয়ে কিছু ধারণা ও আসল তথ্য

কোরোনার ভ্যাকসিন নিয়ে কিছু ধারণা তৈরি হয়েছে। যার অনেকটাই সঠিক নয়। ফলে ভ্যাকসিন বাজারে আসার আগে জেনে নেওয়া দরকার যে এটা নিয়ে কী কী ভুল ধারণা রয়েছে।

কলকাতা, 27 ডিসেম্বর : বছরের শুরু থেকে কোরোনা ভাইরাস নাস্তানাবুদ করছে গোটা বিশ্বকে। কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে । অনেকে সুুস্থ হয়েছেন। আবার এখনও অনেকে কোরোনায় আক্রান্ত। এই পরিস্থিতিতে একমাত্র আশার আলো দেখাচ্ছে ভ্যাকসিন। ভারত-সহ একাধিক দেশ ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শেষ করে ফেলেছে। ট্রায়ালও শুরু হয়েছে। কোথাও কোথাও টিকাকরণ শুরু হয়ে গিয়েছে।

কিন্তু কোরোনার ভ্যাকসিন নিয়ে কিছু ধারণা তৈরি হয়েছে। যার অনেকটাই সঠিক নয়। ফলে ভ্যাকসিন বাজারে আসার আগে জেনে নেওয়া দরকার যে এটা নিয়ে কী কী ভুল ধারণা রয়েছে।

ধারণা: তাড়াহুড়োয় তৈরি হয়েছে ভ্যাকসিন। তাই এটি সুরক্ষিত নয়।

সত্যি: এটা ঠিক যে কোরোনার ভ্যাকসিন দ্রুতগতিতে তৈরি হচ্ছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে এটা সুরক্ষা ও পরীক্ষার নিয়মকে অবহেলা করা হচ্ছে। বরং সমস্ত নিয়ম মেনে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে ভ্যাকসিন। এর ফলে ভ্যাকসিন যে সুরক্ষিত সেটাও প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে।

ধারণা: ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও কোভিড-19 সংক্রমণ হতে পারে।

সত্যি: সংক্রমণ রুখতে অন্য ভ্যাকসিনের মতো কোভিড-19 রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। সেই ভাবেই তা তৈরি করা হচ্ছে যাতে সার্স-কোভ-2 এর বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা যায়। তবে ভ্যাকসিন নেওয়ার শরীর কিছুটা সময় নেবে এই ভাইরাস প্রতিরোধ করার ক্ষমতা তৈরি করতে।

ধারণা: এমআরএনএ ভ্যাকসিন প্রাকৃতিক ডিএনএ স্ট্রাকচারকে বদলে ফেলতে পারে।

সত্যি: কয়েকটি ভ্যাকসিন এমআরএনএ প্রযুক্তিতে তৈরি হচ্ছে। তা ভাইরাসের একটি অংশ নিয়েই তৈরি হচ্ছে। যা শরীরে সার্স-কোভ-2 ভাইরাস থেকে অংশ নিয়ে প্রোটিন তৈরিতে সাহায্য করবে। সেই প্রোটিনকে চিহ্নিত করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অ্যান্টিবডি তৈরি করবে। তবে এমআরএনএ ও ডিএনএ এক জিনিস নয়। এমআরএনএ কখনওই মানুষের ডিএনএ-র সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারে না।

ধারণা: ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারাত্মক হতে পারে।

সত্যি: মাথা ধরা, পেশিতে ব্যথা, ক্লান্তি ও জ্বরের মতো সমস্যা হতে পারে। যা দুই একদিনে নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যাবে। তবে বড় কোনও সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই গবেষকদের মত। যদিও ব্রিটেনে কোরোনার ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলাকালীন টিকা নেওয়া কয়েকজনের শীরের অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা গিয়েছিল।

ধারণা: ভ্যাকসিনের জেরে বন্ধ্যাত্ব আসতে পারে।

সত্যি: সম্প্রতি অভিযোগ ওঠে যে কিছু সংস্থা ভ্যাকসিন তৈরিতে সিনসাইটিন-১ নামে একটি স্পাইক প্রোটিন ব্যবহার করছে। যার ফলে মহিলার মধ্যে বন্ধ্যাত্ব আসতে পারে। কিন্তু এই তথ্য একেবারেই সত্যি নয়।

ধারণা: ভ্যাকসিন শরীরে একটা চিপ বসিয়ে দেবে।

সত্যি: কিছু ব্যক্তি বা সরকার নজরদারি চালানোর জন্য ভ্যাকসিনের মাধ্যমে মানব শরীরে মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দিতে পারে বলে খবর ছড়ায়। ভ্যাকসিনের মাধ্যমে কারও শরীরে মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দেওয়া একেবারেই সত্যি নয়। সম্প্রতি কিছু ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থা ভ্য়াকসিন তৈরিতে কী কী লাগছে, তা প্রকাশ্যে এনেছিল।

ধারণা: কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণের পর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হওয়াটা অনেক ভালো।

সত্যি: এটা ঠিক নয়। প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা পর্যায় পর্যন্ত সুরক্ষা দেয়। পুরোটা দেয় না। সেই কারণে অনেকের দুবার সংক্রমণ হয়েছে। কিন্তু ভ্যাকসিন দ্বিতীয়বার সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে। আর এটা জীবন নিয়েও কোনও শঙ্কা তৈরি করে না।

ধারণা: আমার কোভিড হয়েছিল, তার মানে আমার ভ্যাকসিনের প্রয়োজন নেই। কোভিড হওয়ার কারণে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে, তা ভ্যাকসিনের থেকে ভালো।

সত্যি: অধিকাংশ সংক্রমণে ভ্যাকসিনের তুলনায় প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই ভালো। কিন্তু কোভিডের বিষয়টি ব্যতিক্রমী। তবে এটা সত্যি কি না, তা জানার জন্য আরও গবেষণা করতে হবে। কারণ, কোভিড হলেই সারাজীবন সেই রোগের হাত থেকে একেবারে বাঁচা যাবে, এমন তথ্য এখনও সামনে আসেনি। তাই সকলকেই ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু যাঁদের সম্প্রতি কোভিড হয়েছে, তাদের উচিত অপেক্ষা করা। তাতে অন্যরা আগে টীকা নেওয়ার সুযোগ পাবেন।

ধারণা: যদি অন্যরা ভ্যাকসিন নেয়, তাহলে আমার নেওয়ার দরকার নেই। কারণ, আমি হার্ড ইমিউনিটি থেকে উপকৃত হব।

সত্যি: আমরা হার্ড ইমিউনিটি থেকে অনেক দূরে রয়েছি। এটা তৈরি হতে আরও এক-দেড় বছর সময় লাগবে। এখন দেশে রোজ 3 হাজার জন কোভিডে মারা যাচ্ছেন। ফলে হার্ড ইমিউনিটির জন্য অপেক্ষা না করাই ভালো।

ধারণা: যাঁদের মারাত্মক অ্যালার্জি আছে, তাঁদের কোভিড-19 এর ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত নয়।

সত্যি: সমস্ত ভ্যাকসিন থেকেই অ্যালার্জি সংক্রমণ হতে পারে। এটাও তার ব্যতিক্রম নয়। ভ্যাকসিনের ফলে অ্যালার্জি হওয়ার ঘটনা বিরল। যত বেশি মানুষ ভ্যাকসিন নেবেন, তত এই বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য আসতে শুরু করবে। তাই এই নিয়ে দ্বিধায় থাকা উচিত নয়। কিন্তু যাঁদের মারাত্মক অ্যালার্জি আছে, তাঁদের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ দেওয়া।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.