ETV Bharat / bharat

সামাজিক ক্ষমতায়নের জন্য আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সই দায়ী

author img

By

Published : Oct 10, 2020, 3:57 PM IST

যে কোনও আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেমে তথ্যই হল মৌলিক গঠনগত উপাদান । ভারতে 700 মিলিয়নেরও বেশি ইনটারনেট সাবস্ক্রাইবার রয়েছেন, 1.21 বিলিয়ন ফোন ইউজার আছেন এবং 1.26 বিলিয়ন আধার কার্ড ব্যবহারকারী আছেন, যারা প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ডেটা ব্যবহার করছেন । ভারতে বিশ্বের কিছু বড় বড় ইনটারনেট সংস্থার বৃহত্তম ইউজার বেস আছে । আলোচনায় কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি, যোগাযোগ এবং আইনমন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ ।

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স

সাধারণ নাগরিকের সার্বিক বিকাশ, সুশাসন এবং ক্ষমতায়নের জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের জেরে নতুন বিশ্বব্যাপী বেঞ্চমার্ক তৈরি হয়েছে । আর তা সম্ভব হয়েছে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার সাফল্যের জন্য । ডিজিটাল প্রযুক্তির সুযোগসুবিধা যা কিছু রয়েছে, যা কয়েক বছর আগে পর্যন্ত সম্ভ্রান্ত শ্রেণীর বিলাসবাসনেরই অঙ্গ ছিল, বর্তমানে সাধারণ জনগণের কাছেও সহজলভ্য হয়ে পড়েছে । দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজন নানা ধরনের ব্যবস্থার নিরন্তর উদ্বর্তন, দ্রুত এবং পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণশীল প্রতিক্রিয়া এবং গঠনগত ক্ষমতা যাতে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা যায় । কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তথা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের উদ্ভব কেবলমাত্র ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনই নয় বরং প্রযুক্তি পরিসরে অন্যতম প্রধান দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন, যা সামগ্রিকভাবে বিকাশমূলক হিসাবেই দেখা উচিত এবং মানবতার কল্যাণের জন্য তার এষণা করা উচিত ।

যে কোনও আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেমে তথ্যই হল মৌলিক গঠনগত উপাদান । ভারতে 700 মিলিয়নেরও বেশি ইনটারনেট সাবস্ক্রাইবার রয়েছেন, 1.21 বিলিয়ন ফোন ইউজার আছেন এবং 1.26 বিলিয়ন আধার কার্ড ব্যবহারকারী আছেন, যারা প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ডেটা ব্যবহার করছেন । ভারতে বিশ্বের কিছু বড় বড় ইনটারনেট সংস্থার বৃহত্তম ইউজার বেস আছে । ভারত বিশ্বকে সবচেয়ে সাশ্রয়ী ইনটারনেট পরিষেবা প্রদান করে । ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্র, যা ইতিমধ্যেই বিশ্বকে তাদের কদর চিনতে বাধ্য করেছে, দুনিয়ার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারার মতো মানব সম্পদের উপস্থিতিও নিশ্চিত করেছে । এর পাশাপাশি রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্ব, যিনি সবসময় নাগরিকদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহারের উৎসাহ দেন । এই সব কিছু মিলিয়ে ভারতে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের বৈপ্লবিক উত্থানের জন্য মঞ্চ একেবারে প্রস্তুত ।

2018 সালে ভারত সরকার ন্যাশনাল AI স্ট্র্যাটেজি প্রকাশ করেছিল । তখন থেকে দেশে বৈদ্যুতিন এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের তরফে মজবুত AI ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । সেন্টার ফর এক্সেলেন্স ইন ডেটা অ্যানালিটিক্স (CEDA) তৈরি করা হয়েছে যাতে সরকারি দফতরগুলিতে বিশেষজ্ঞ ডেটা অ্যানালিটিক্স পরিষেবা প্রদান করা যায় । IT ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে, সেন্টার্স অফ এক্সেলেন্স তৈরি করা হয়েছে বেঙ্গালুরু, গান্ধিনগর, গুরুগ্রাম এবং ভাইজাগে, যেখানে এখনও পর্যন্ত 113টি স্টার্টআপের উন্মেষ করা হয়েছে, 29টি ‘ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টিস’ তৈরি করা হয়েছে এবং 56টি ‘সেক্টোরাল সলিউশনস’ গড়ে তোলা হয়েছে । ‘ফিউচার স্কিলস প্রাইম’ অনলাইনে ক্ষমতাবৃদ্ধির প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে যাতে নতুন নতুন প্রযুক্তির দুনিয়ায় পেশাদারদের আরও এবং ফের দক্ষ করে তোলা যায় । এবং লাখ লাখ পেশাদারদের সুবিধার জন্য নতুন কর্মসংস্থানেরও বন্দোবস্ত করা যায় । AI—এ গাঁটছড়া বাঁধা এবং জ্ঞান আদানপ্রদানের জন্য ‘ওয়ান স্টপ’ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হিসাবে চালু করা হয়েছে ন্যাশনাল আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স পোর্টাল । খুব শীঘ্রই ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অন আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স চালু করবে বৈদ্যুতিন মন্ত্রক । তবে তা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার তরফে অনুমোদন পাওয়ার পর ।

পাবলিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যেমন আধার,UPI, GSTN এবং GeM—থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সরকার ঠিক করেছে, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা, লজিসটিক্স, ভাষাগত অনুবাদ প্রভৃতি ক্ষেত্রে একাধিক পাবলিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলবে । 2020 সালের স্বাধীনতা দিবসের দিন প্রধানমন্ত্রী ন্যাশনাল ডিজিটাল হেলথ মিশন—এর ঘোষণা করেছিলেন । আর তার সঙ্গেই স্বাস্থ্যে পাবলিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে । বৈদ্যুতিন এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের তরফে AI—নির্ভর ন্যাচরাল ল্যাঙ্গোয়েজ ট্রান্সলেশন মিশন গঠন করা হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গবেষণা কেন্দ্র, ইন্ডাস্ট্রি এবং স্টার্ট আপগুলির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে, যার মাধ্যমে ভারতীয় ভাষায় কথা বলতে পারবে, এমন প্রযুক্তিসম্পন্ন ইনটারনেট গড়ে তোলা সম্ভব হবে । একই ভাবে, ভারত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রক শিল্প সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং স্টার্ট আপের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে কাজ করছে এবং বর্তমানে সেক্টোরাল পাবলিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলির চূড়ান্ত করার কাজের বিভিন্ন স্তরে অবস্থান করছে । এই সব প্ল্যাটফর্মগুলি এই সব সেক্টরে AI—নির্ভর পরিষেবা দিচ্ছে এবং একইসঙ্গে ইউজারদের ডেটা নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত উদ্বেগের নিরসনে উদ্যোগী হচ্ছে । এই সব প্ল্যাটফর্মগুলি ভারতীয় স্টার্টআপগুলির জন্যও প্রভূত সুযোগ তৈরি করবে ।

প্রযুক্তিক্ষেত্রে বিকাশ পরিবর্তন নিয়ে এসেছে । তবে পাশাপাশি উদ্বেগও বয়ে এনেছে । যখন বড়সড়ভাবে কমপিউটারাইজেশনের প্রক্রিয়া চলছিল, তখনও কাজ হারানোর উদ্বেগ ছিল । কিন্তু পরবর্তীকালে কম্পিউটার এবং তথ্যপ্রযুক্তি অন্যতম বৃহত্তম কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র হিসাবে পরিচিত হয় । আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স একইভাবে কিছু কিছু পেশার জায়গা নিয়ে নেবে কিন্তু নতুন কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি করবে । বিশ্বের উচিত এই মোড় বদলকে সক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাতে এটি সমাজে নতুন করে বৈষম্য না তৈরি করতে পারে । যদিও ফিউচার স্কিলস প্রাইম—এর মতো উদ্যোগের মাধ্যমে ভারত ইতিমধ্যেই তথ্যপ্রযুক্তিক্ষেত্রে, শ্রমশক্তিকে ভবিষ্যতের কর্মসংস্থানের যোগ্য করে তুলতে ভারত কাজ শুরু করে দিয়েছে । সামাজিক ক্ষমতায়নের জন্য AI—নির্ভর ভারতের কর্মসূচিতে দেশের সাধারণ মানুষের সার্বিক বিকাশ এবং ক্ষমতায়নের জন্য উত্তোলনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে । এবং পাশাপাশি AI সিস্টেমের কারণে কর্মচারীদের কাজ হারানো এবং আতিশয্য কমার উদ্বেগেরও নিরসন করা হয়েছে ।

আর্টফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের দৌলতে বৃহত্তর সামাজিক ক্ষমতায়ন সম্ভব, বিশেষ করে সমাজের দরিদ্র তথা প্রতন্ত অংশের । এমনভাবে একে গড়ে তোলা উচিত যাতে মানুষজন যে সব সমস্যার মুখে পড়েন, তার সমাধান হয় । স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা, লজিসটিক্স এবং ভাষার ক্ষেত্রে AI—কে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা ভারতের লক্ষ্য, সামাজিক ক্ষমতায়নে AI—কে কাজে লাগানোর আমাদের প্রতিশ্রতির দ্বারা অনুপ্রাণিত ।

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স গড়ে তোলার বিষয়ে ডেটা রিসোর্সেস একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চলেছে । যদিও তথ্যের অপপ্রয়োগ এবং নিয়ম ভেঙে ইউজার তথা গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য দখলের চেষ্টার মতো ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করার মতো পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকা উচিত AI সিস্টেমগুলির । ভারত সরকার ইতিমধ্যেই মজবুত ‘পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন বিল’ সংসদে এনেছে, যার মাধ্যমে ডিজিটাল সময়ে ইউজারদের গোপনীয়তা রক্ষার পাশাপাশি উন্নত ‘ডেটা ইকোনমি’ গড়ে তোলারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । এখানে এটা উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক যে ভারতীয় নাগরিকদের তথ্যের অপপ্রয়োগ ঘটিয়ে ডিজিটাল দুনিয়ায় একাধিপত্য স্থাপনের চেষ্টাকে ভারত সরকার কড়া হাতে মোকাবিলা করবে । সম্প্রতি কিছু কিছু মোবাইল অ্যাপের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপ, এ কথা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয় যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার ভারতীয় নাগরিকদের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করা এবং ভারতের তথ্যের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সংকল্পবদ্ধ ।

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স থেকে বেশ কিছু নৈতিক এবং আইনি উদ্বেগও সৃষ্টি হয়, যার সমাধান হওয়া উচিত । AI সিস্টেম কার্যকর করার বিধিতে যে অ্যালগোরিদম রয়েছে, তাকে সমস্ত পুরোনো ধ্যানধারণা এবং পক্ষপাত থেকে মুক্ত হতে হবে । উদাহরণস্বরূপ, ‘ফেস রেকগনিশন’ সিস্টেমে কোনও বর্ণ বা জাতিগত পক্ষপাত বা খবরের প্রতি ঝুঁকে থাকার প্রবণতা থাকবে না । সোশাল মিডিয়া সিস্টেমগুলিকেও কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতি ঝুঁকে থাকা চলবে না । প্রথাগত আইনকানুন, যা নির্দিষ্ট মৌলিক সীমার আওতাধীন, বর্তমানে তা ‘ট্রান্স—ন্যাশনাল’ প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে । বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা, শত্রুপক্ষ যে কোনও সমাজের শান্তি ভঙ্গ করতে পারে এবং ভারতে সাম্প্রতিক CAA বিক্ষোভ ও দিল্লি হিংসার ক্ষেত্রে আমরা তার প্রমাণ পেয়েছি । এই ধরনের উদ্বেগকে একজোট হয়ে মোকাবিলা করা উচিত বিশ্ববাসীর ।

ভারত গ্লোবাল পার্টনারশিপ অন আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স—এর (যা দায়িত্বশীল AI গড়ে তোলার জন্য বহুস্তরীয় একটি সম্মিলিত পদক্ষেপ) অন্যতম গঠনকারী দেশ । দ্বিপাক্ষিক স্তরে ভারত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে একজোট হয়েও কাজ করছে AI—নির্ভর ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার লক্ষ্যে । ভারতের বৃহত্তম AI সামিট ‘RAISE 2020’—এর লক্ষ্য, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইকোসিস্টেম গঠনে বিশ্বের নানা দেশের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে কাজ করা এবং এমন ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা যা মানবতার প্রতি দায়িত্বশীল এবং সামাজিক ক্ষমতায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ।

RAISE 2020—এ আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য মুখিয়ে আছি!

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.