পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ইএফটিএ বাণিজ্য চুক্তি কীভাবে উপকৃত করবে ভারতীয়দের? - EFTA Trade Deal

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Mar 23, 2024, 4:32 PM IST

Etv Bharat
ভারত-ইএফটিএ ব্লকের মধ্যে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তি৷

India-EFTA Deal: ভারত এবং ইএফটিএ ব্লকের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরেছেন ডঃ রাধা রঘুরামপাত্রুনি। ইএফটিএ (ইউরোপিয়ান ফ্রি ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন) হল একটি আইজিও যার সঙ্গে আইসল্যান্ড, লিচেনস্টাইন, নরওয়ে এবং সুইজারল্যান্ড যুক্ত।

হায়দরাবাদ, 23 মার্চ: ভারত এবং চার দেশের ইএফটিএ ব্লক 10 মার্চ, 2024-এ একটি ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ৷ এই বাণিজ্য চুক্তিটি উন্মুক্ত ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত বাণিজ্যের পাশাপাশি দেশগুলির আর্থিক উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে সুযোগ তৈরি করবে ৷

গত 10 বছরে ভারতের অর্থনীতি বিশ্বের 11তম বৃহত্তম অর্থনীতি স্থান থেকে পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে উঠে এসেছে। ব্যবসা, উৎপাদন ও রফতানিতে নতুন উচ্চতা স্পর্শ করেছে ভারত ৷ তার জন্য দেশের বিস্তৃত পরিসরে সংস্কার চলছে, যা বাণিজ্যের পথ আরও সুগম করছে।

ইএফটিএ (ইউরোপিয়ান ফ্রি ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন) হল একটি আইজিও (ইন্টার-গভর্নমেন্টাল অর্গানাইজেশন) তার সঙ্গে আইসল্যান্ড, লিচেনস্টাইন, নরওয়ে এবং সুইজারল্যান্ডের মতো দেশ যুক্ত। ইএফটিএ ইউরোপিয় ইউনিয়নের অংশ নয়। এ পর্যন্ত ইএফটিএ কানাডা, চিলি, চিন, মেক্সিকো এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলি সহ মোট 40টি অংশীদার দেশের সঙ্গে 29টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ভারত 2008 সাল থেকে ইএফটিএ-র সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে।

2022-23 সালে ইএফটিএ দেশগুলিতে ভারতের রফতানির অঙ্ক ছিল 1.92 বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে আমদানি ছিল 16.74 বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইএফটিএ দেশগুলির সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক লেনদেনে ক্রমাগত ঘাটতি রয়েছে ৷ এটি 2021-2022 সালে 23.7 বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অঙ্ক নিয়ে শীর্ষে ছিল এবং তারপরে 2022-23 সালের মধ্যে 14.8 বিলিয়ন মার্কিন ডলারে হ্রাস পায় এবং 2023 এর এপ্রিল-ডিসেম্বরের মধ্যে এটি ফের 15.6 মার্কিন ডলারে উন্নিত হয়েছে।

ভারত-ইএফটিএ-র দ্বিমুখী বাণিজ্য 2021-22 সালে 27.23 বিলিয়ন ডলারের তুলনায় 8.58 বিলিয়ন ডলার কমে 2022-23 সালে 18.65 বিলিয়ন ডলার হয়। ইএফটিএ দেশগুলিতে প্রধান ভারতীয় রপ্তানির পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে রাসায়নিক, আধা-প্রক্রিয়াজাত পাথর, নৌকা ও জাহাজ, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি।

ভারত এপ্রিল 2000 থেকে ডিসেম্বর 2023 এর মধ্যে সুইজারল্যান্ড থেকে প্রায় 10 বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (FDI) পেয়েছে৷ সুইজারল্যান্ড ভারতের 12তম বৃহত্তম বিনিয়োগকারী দেশ৷ এপ্রিল 2000 থেকে ডিসেম্বর 2023 এর মধ্যে নরওয়ে থেকে FDI প্রবাহ ছিল 721.52 মিলিয়ন ডলার, আইসল্যান্ড থেকে 29.26 মিলিয়ন ডলার এবং লিচেনস্টাইন থেকে 105.22 মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

ইএফটিএ এতে মোট ভারতীয় রপ্তানির অংশ 0.4% যেখানে আমদানি 2.4%। বাণিজ্যিক ঘাটতির এই প্রেক্ষাপটে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা এই চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনায় অত্যন্ত সতর্ক ছিলেন। করমুক্ত লেনদেনে একটি বিস্তৃত বাণিজ্য ঘাটতি হতে পারে, এই আশঙ্কা করেছিলেন ভারতীয় রপ্তানিকারকরা। এই চুক্তিটি অন্যান্য পণ্যগুলির মধ্যে ভারতীয় পশু পণ্য, মাছ, প্রক্রিয়াজাত খাবার, উদ্ভিজ্জ তেলের জন্য শুল্কমুক্ত ইএফটিএ বাজারে বাণিজ্যিক লেনদেনের আরও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পণ্য সংক্রান্ত বাণিজ্যের পাশাপাশি ভারত উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রযুক্তি স্থানান্তরে বিনিয়োগের জন্যও উন্মুখ হতে পারে৷ বর্তমান চুক্তিতে পণ্য ও পরিষেবা বাণিজ্যের চুক্তি, মূল নিয়ম, মেধাস্বত্ব অধিকার, বিনিয়োগ প্রচার ও সহযোগিতা, সরকারি সংগ্রহ, বাণিজ্যে প্রযুক্তিগত বাধা এবং বাণিজ্য সুবিধা সহ 14টি অধ্যায় রয়েছে।

বৃহত্তর বাজারে বিনিয়োগের চুক্তিতে আগামী 15 বছরে 1 মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ভারতে 100 বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। ভারত-ইএফটিএ বাণিজ্য চুক্তি শুধুমাত্র বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রেই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে প্রযুক্তি-সচেতন দেশগুলির সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার সুযোগও উন্মোচন করতে পারে যেগুলি।

ইএফটিএ-র মধ্যে, সুইজারল্যান্ড হল নরওয়ের পরে ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। সুইজারল্যান্ডকে বিশ্বের অন্যতম উদ্ভাবনী অর্থনীতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্সে সুইজারল্যান্ড ধারাবাহিকভাবে এক নম্বরে ছিল। গত অর্থবছরে ভারত ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ছিল 17.14 বিলিয়ন ডলারের (1.34 বিলিয়ন ডলার রফতানি এবং 15.79 বিলিয়ন ডলারের আমদানি)।

2022-23 সালে, সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক ঘাটতি ছিল 14.45 বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। সুইজারল্যান্ড থেকে ভারতের প্রধান আমদানি পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে সোনা (12.6 বিলিয়ন ডলার), যন্ত্রপাতি (409 মিলিয়ন ডলার), ফার্মাসিউটিক্যালস (309 মিলিয়ন ডলার), কোকিং এবং স্টিম কয়লা (380 মিলিয়ন ডলার), অপটিক্যাল যন্ত্র এবং অর্থোপেডিক যন্ত্রপাতি (96 মিলিয়ন ডলার), ঘড়ি (211.4 মিলিয়ন ডলার), সয়াবিন তেল (202 মিলিয়ন ডলার), এবং চকলেট (7 মিলিয়ন ডলার)।

ভারত থেকে প্রধান যে পণ্যগুলি রপ্তানি হয় সেগুলি হল, রাসায়নিক, রত্ন এবং গয়না, নৌকা, যন্ত্রপাতি, নির্দিষ্ট ধরনের কাপড় এবং পোশাক। সুইজারল্যান্ড হল ভারতের জন্য সোনা আমদানির সবচেয়ে বড় উৎস, এখানে প্রায় 41 শতাংশ শেয়ার রয়েছে, যা ভারতের মোট মূল্যবান ধাতু আমদানির 5 শতাংশেরও বেশি। নোভারটিস এবং রোচে সহ বিশ্বের কয়েকটি বড় ফার্মা সংস্থা সুইজারল্যান্ডে রয়েছে। এই সংস্থাগুলি ভারতেও রয়েছে। 2022-23 সালে ভারত ও নরওয়ের মধ্যে দ্বিমুখী বাণিজ্য ছিল 1.5 বিলিয়ন মার্কিন ডলারের।

বর্তমান ইএফটিএ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির অধীনে, দুটি ব্যবসায়িক অংশীদারী পরিষেবা এবং বিনিয়োগে বাণিজ্যকে উন্নীত করার জন্য নিয়মগুলি সহজ করবে৷ এর পাশাপাশি তাদের মধ্যে লেনদেন হওয়া সর্বাধিক সংখ্যক পণ্যের উপর শুল্ক উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে বা বাদ দিয়েছে। শীঘ্রই কম দামে উচ্চ-মানের সুইস পণ্যগুলিতে ভারতের বাজারে পাওয়া যাবে৷ কারণ, এটি সাত থেকে দশ বছরের মধ্যে অনেক সুইস পণ্যকে করমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে টুনা এবং স্যামনের মতো সামুদ্রিক মাছ; জলপাই এবং অ্যাভোকাডোর মতো ফল; কফি ক্যাপসুল; বিভিন্ন তেল (যেমন কড লিভার এবং অলিভ অয়েল), চকোলেট এবং বিস্কুট সহ বিভিন্ন ধরণের মিষ্টি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার। এছাড়া অন্যান্য পণ্যগুলি হল স্মার্টফোন, সাইকেলের যন্ত্রাংশ, চিকিৎসা খাতের সরঞ্জাম, ঘড়ি, ওষুধ, রং, বিভিন্ন ধরনের কাপড়, পোশাক, লোহা ও ইস্পাতের যন্ত্রপাতি-সরঞ্জাম।

চুক্তি বাস্তবায়নের পর পাঁচ বছরের মধ্যে কাটা ও পালিশ করা হিরের উপর শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২.৫ শতাংশ করা হবে। ভারত সোনার উপর কোনও রকম কর ছাড় দেয়নি। কাগজে কলমে, এই চুক্তি 40 শতাংশের হারের উপর 1 শতাংশ ছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছে৷ তবে কার্যকর শুল্ক 15 শতাংশই রাখা হয়েছে৷ যার ফলে এ ক্ষেত্রে কোনও প্রকৃত সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না।

ওয়াইনের ক্ষেত্রে, কর ছাড়ের প্রকৃতি অস্ট্রেলিয়ার মতোই৷ এখানে 5 মার্কিন ডলারের কম দামের ওয়াইনের ক্ষেত্রে কোনও ছাড় নেই৷ 5 মার্কিন ডলার থেকে 15 মার্কিন ডলারের কম দামের ওয়াইনের ক্ষেত্রে শুল্কের পরিমাণ 150 শতাংশ থেকে কমিয়ে 100 শতাংশ করা হবে৷ তারপর 10 বছরে ধীরে ধীরে আরও 50 শতাংশে হ্রাস পাবে।

ইএফটিএ থেকে বর্তমান 100 বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ থেকে উপকৃত হবে এমন কিছু খাত হল খামার, নবায়নযোগ্য শক্তি, রং ও রাসায়নিক, ব্যয়বহুল যন্ত্রপাতি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাত এবং পরিষেবা খাত যা ভারতীয় রপ্তানির একটি বড় অংশ। গ্রিন টেকনোলজি খাতে বিনিয়োগ সহ ইএফটিএ দেশগুলিতে অবসর এবং পেনশন তহবিল থেকেও বিনিয়োগ আসবে।

ডিজিটাল বাণিজ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস, জৈব-প্রযুক্তি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং রাসায়নিক, অর্থ ও ব্যাঙ্কিং সেক্টর, উচ্চ-প্রযুক্তি নির্ভর কৃষিকাজ, সরবরাহ চেন লজিস্টিকস এবং সবুজ প্রযুক্তি ইএফটিএ-র অন্তর্গত দেশগুলির সঙ্গে এই চুক্তি ভারতকে 'আত্মনির্ভর' হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে সমর্থন করতে পারে।

আরও পড়ুন:

ভারতের বাজারে চিনকে আটকাতে সঠিক ছিল আরসিইপি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত

মহিলাদের কর্ম সংস্থান বৃদ্ধি করতে পারে দেশের জিডিপি: বিশ্ব ব্যাংক

আরও শক্তিশালী দেশের অর্থনীতি, তৃতীয় ত্রৈমাসিকে পূর্বাভাস ছাপিয়ে বাড়ল জিডিপি

ABOUT THE AUTHOR

...view details