পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

চাকরি ছেড়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা! সুন্দরবনের গরিব মানুষের 'মসিহা' চিকিৎসক ফারুক হোসেন

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 17, 2023, 7:45 PM IST

Free Medical Services of Doctor: সাধারণ মানুুষের সেবাই পরম ধর্ম ৷ এই বাণীকে পাথেয় করে জনসাধারণের সেবা করে চলেছেন চিকিৎসক ফারুক হোসেন ৷ বিনামূল্যে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের সেবায় নিয়োজিত করেছেন নিজের জীবন ৷

Etv Bharat
চাকরি ছেড়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা চিকিৎসকের

চিকিৎসক ফারুক হোসেন

সন্দেশখালি, 17 ডিসেম্বর: ছিল মোটা মাইনের চাকরির হাতছানি! ছিল আরও অনেক লোভনীয় কাজের প্রস্তাব! কিন্তু, সাধারণ মানুষের সেবার আশায় মোটা বেতনের চাকরি ছাড়তে দু'বার ভাবেননি তিনি। কোনও গণ্ডির মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ না রেখে আজও গরিব মানুষের সেবা করে চলেছেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। তিনি সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার এমবিবিএস চিকিৎসক ফারুক হোসেন।

শুধু নিখরচায় চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়াই নয়!গ্রামের অনাথ আদিবাসী ছেলে-মেয়েদের জন্য একটি মিশন স্কুলও খুলেছেন সেখানে। যেখানে গরিব ছেলে-মেয়েরা বিনামূল্যে শিক্ষা পেয়ে আসছে। সমাজের প্রতি চিকিৎসকের এই কর্মকাণ্ড ইতিমধ্যে চর্চায় এসেছে। সাড়া ফেলেছে গোটা সুন্দরবন অঞ্চলেও ।যদিও এসব নিয়ে এতটুক ভাবতে নারাজ ডাক্তার বাবু। বরং তিনি এভাবেই গরিব মানুষের পাশে থেকে আজীবন সেবা করে যেতে চান।

ডাক্তার ফারুক হোসেনের কাছে চিকিৎসা পরিষেবা নিতে এসে হাসনা বানু বিবি বলেন, "সন্দেশখালি-সহ সুন্দরবন অঞ্চলে বেশিরভাগ মানুষই গরিব। এখানে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থা যথেষ্ট পিছিয়ে। তাই, ডাক্তার ফারুক হোসেন গরিব মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বিনামূল্যে সেবা করে চলেছেন। ওনার কাছ থেকে আমরা অনেক উপকার পেয়ে থাকি। তাই, উনি আমাদের কাছে ভগবানের মতো।"

যদিও, নিজেকে ভগবানের সঙ্গে তুলনা করতে নারাজ চিকিৎসক ফারুক ৷ তাঁর কথায়, "মানুষ আমাকে ভগবান হিসেবে মনে করলেও আমি একজন রক্ত মাংসে গড়া সাধারণ মানুষ। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং কর্তব্য থেকেই এই পরিষেবা দিয়ে আসছি। সুন্দরবনের বেশিরভাগ মানুষই দিনমজুর। ভিজিট দিয়ে ডাক্তার দেখানো তো দূরের কথা! তাঁদের ওষুধ কেনার সামর্থ্যটুকুও নেই। তাই, যতদিন বাঁচব ততদিন এভাবেই সেবা দিয়ে যাব ৷"

তবে, চিকিৎসক হওয়ার এই পথ মসৃণ ছিল না ৷ জানা যায়, সন্দেশখালি 1 নম্বর ব্লকের শাঁকদহ গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম হয় তাঁর। বাবা ছিলেন পেশায় দিনমজুর। ফলে, পরিবারে অভাব অনটন ছিল নিত‍্যসঙ্গী। তবে সমস্ত বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে 2012 সালে বাঁকুড়া সম্মেলনী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাস করে ডাক্তারি পেশার সঙ্গে যুক্ত হন ফারুক হোসেন। সেই থেকেই শুরু ৷ প্রথম দিকে তিনি বীরভূমের দুবরাজপুরের একটি সরকারি হাসপাতাল এবং বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পরে তা ছেড়ে দিয়েছিলেন কেবলমাত্র সুন্দরবনের পিছিয়ে পড়া গরিব মানুষের কথা ভেবে।

জানা যায়, 2014 সালে শাঁকদহ গ্রামেই তিনি 'নব দিগন্ত' নামে একটি সংস্থা খোলেন। সেই সংস্থার উদ্যোগে সেখানে চালু হয়েছে আদিবাসীদের জন্য একটি মিশনারি স্কুল। মূলত নার্সারি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত অনাথ স্কুলছুট শিশুদের দায়িত্ব নিয়ে পড়াশোনা করানো হয় মিশনারি ওই স্কুলে। পাশাপাশি, সুন্দরবন অঞ্চলের প্রায় শতাধিক কলেজ পড়ুয়াকে প্রেশার- সুগার মাপার ট্রেনিং ও ইসিজি মেশিন ব্যবহারের ট্রেনিংও দিয়েছেন তিনি ৷ অন্যদিকে, সুন্দরবনের প্রান্তিক মহিলাদের সচেতন করতে স্যানিটারি ন‍্যাপকিন ব‍্যবহার কেন করতে হয় তা বুঝিয়েছেন ৷ বিনা খরচে তাঁদের হাতে ন‍্যাপকিনও দিয়ে থাকেন চিকিৎসক ফারুক হোসেন।

বর্তমানে বেশকিছু জায়গায় নিজের চেম্বার করেছেন চিকিৎসক ফারুক ৷ সেখান থেকে যে অর্থ উপার্জিত হয়, তা তিনি ব‍্যবহার করেন গরিব মানুষের চিকিৎসা পরিষেবায়। আপাতত তাঁর তৈরি মিশনারি স্কুলে সপ্তাহে একদিন করে বিনামূল্যে এই চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয় ৷ জানা গিয়েছে, বিনামূল্যে পরিষেবা দেওয়ার স্বীকৃতি স্বরূপ 2021 সালে ডাক্তার ফারুক হোসেনের নাম উঠে আসে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস-এ। একইভাবে 2022 সালে ইন্ডিয়া আইকন রেকর্ডস-এ যুক্ত হয়েছে চিকিৎসক ফারুক হোসেনের নামও।

আরও পড়ুন

1. বিয়েতে রক্তদান শিবিরের আয়োজন, মেহেন্দি হাতে নিজেও দিলেন রক্ত দিলেন কনে

2.বৃষ্টিতে ভিজবে না জামাকাপড়, নিজে থেকে জ্বলবে আলো; নয়া আবিষ্কার বসিরহাটের দুই পড়ুয়ার

3.খুনের ঘটনা অতীত, রবীন্দ্র নৃত্যনাট্যকে আঁকড়ে ধরে নিজেকে চেনাচ্ছে বারাসতের মনুয়া

ABOUT THE AUTHOR

...view details