পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

মাজারে হিন্দু চমতের চৌকিদারিত্বে চমৎকৃত মুসলিমরা

By

Published : Jan 4, 2020, 1:32 AM IST

Updated : Jan 5, 2020, 7:47 PM IST

সাম্প্রদায়িকতার ইশুতে গোটা দেশ যখন অশান্ত, তখন এক মাজারকে দীর্ঘ 39 বছর ধরে পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন চমত সেতুয়া ।

mazar
সুফি চাঁদসা বাবার মাজার

মেদিনীপুর, 3 জানুয়ারি : এক- দু'বছর নয় ৷ দেখতে দেখতে কেটে গেছে 39 বছর ৷ আজও ঠিক প্রথম দিনের মতোই কর্মতৎপর তিনি ৷ একজন হিন্দু হয়েও যেভাবে এতগুলো বছর মুসলিম ধর্মস্থান আগলে রেখেছেন, তা শুনলে অবাক হতে হয় ৷ শুধুই কী নিরাপত্তা দেওয়া, প্রতিমাসে এবং বছরের একটি দিন এলাকার শিশুদের মুখে দু'মুঠো অন্ন প্রসাদ হিসেবে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন ৷ কিন্তু এ কাজের জন্য অন্যের কাছে হাত পাততে গররাজি চমত সেতুয়া ৷

সালটা 1980 ৷ মেদিনীপুর শহরের কোতোয়ালি থানার অন্তর্গত বেড়বল্লভপুরের একটি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় সুফি চাঁদসা বাবার মৃত্যু হয়। পরে ওই এলাকায় তাঁকে সমাধিস্থ করা হয় । মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের একাংশ মনে করতেন চাঁদসা বাবা আল্লার প্রেরিত দূত । পরে লোকজনের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিয়ে এই সমাধিস্থানের উপর একটি মাজার তৈরি করে এক হিন্দু পরিবার। আর এই হিন্দু পরিবারের নেতৃত্বেই শুরু হয় ধর্মপ্রচার । বিগত 39 বছর ধরে সেই মাজারের নিরাপত্তায় সদা তৎপর ওই পরিবারের সদস্য চমত সেতুয়া । ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে মাজারটি । আর্থিক সাহায্য নিয়েই বছরে একবার এবং সপ্তাহে বৃহস্পতিবার করে এলাকার লোকজনকে খাওয়ানো শুরু করেন চমত । যেখানে কোনও ধর্ম বিভাজন নেই । এক আসনে বসে প্রসাদ খান হিন্দু -মুসলমান সকলে । প্রতি সপ্তাহে উভয় সম্প্রদায়ের প্রায় 300-400 ছেলেমেয়ে মাজারে খেতে আসে। সুফি চাঁদসা বাবার মৃত্যু বার্ষিকীর দিন ভিড় আরও বাড়ে । সংখ্যাটা পৌঁছায় লাখে।

প্রসাদে থাকে পোলাও, বেগুন ভাজা, সাদা ভাত, ডাল, তিন রকমের তরকারি, চাটনি ও পায়েস । এটা সাপ্তাহিক । আর বার্ষিকীর আয়োজনে থাকে আরও অনেককিছু যুক্ত হয় প্রসাদের থালায়। তবে, এই প্রসাদের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে আর্থিক সাহায্য চান চমত। এভাবেই কেটে গেছে 39 বছর । কেন করেন এতবছর ধরে এই কাজ ? চমতের কথায়, উদ্দেশ্য একটাই । মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি রক্ষা করা ।

তবে একটা চিন্তা প্রায়শই ঘুরপাক খায় চমতের মাথায় । দিনের পর দিন যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, তাতে আগামীদিনে এতজনকে প্রসাদ খাওয়ানো প্রায় অসম্ভব । এবিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তাঁর আক্ষেপ, সাহায্যের জন্য কলকাতা থেকে দিল্লি সব জায়গায় গেছেন তিনি, কিন্তু কোনও লাভ হয়নি । কোনও সাহায্য পাননি তিনি । কেউ এগিয়ে আসেনি । বারবার যাবতীয় কাগজপত্র দেখিয়েছেন । পরিবর্তে পেয়েছেন আশ্বাস । আপাতত অনিশ্চয়তায় মাঝেই মাজার আগলে চমত।

দেখুন ভিডিয়ো...
Intro:গোটা দেশ যখন অশান্ত ,তখন এক মুসলিম মাজারকে দীর্ঘ 39 বছর ধরে পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন বৃদ্ধ চমত সেতুয়া ,শুধু সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত না ,বর্তমান যুগে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগামী দিনে ভক্তদের কি খেতে দেবেন সেই আক্ষেপ বৃদ্ধের মুখে l Body:গোটা দেশ যখন অশান্ত ,তখন এক মুসলিম মাজারকে দীর্ঘ 39 বছর ধরে পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন বৃদ্ধ চমত সেতুয়া ,শুধু সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত না ,বর্তমান যুগে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগামী দিনে ভক্তদের কি খেতে দেবেন সেই আক্ষেপ বৃদ্ধের মুখে l

সালটা হবে 1980 নাগাদ ,সেই সময় সুফি চাঁদসা বাবা তার দেহ রাখেন মেদিনীপুর শহরের কোতয়ালী থানার অন্তর্গত বেড়বল্লভপুর মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় l নিজের দেহ রেখে বাবা পরলোকগমন করেন l সেই সুফি চাঁদসা বাবার ভক্ত হিসেবে অন্যতম হিন্দু পরিবার বাবার সমাধিস্থল জায়গাকে মাজারে রূপান্তরিত করার জন্য উঠে লেগে পড়েন l সবার কাছে চাঁদা, দক্ষিণা নিয়ে তিনি ছোট্ট করে একটি মাজার বাবার নামে তৈরি করে শুরু করেন বাবার ভক্তি এবং বাণী প্রচারের l শুধু বাবার ভক্তি বাণী নয় বাবার চমৎকারীতাও ধীরে ধীরে এলাকার মানুষের মধ্যে বিস্তার ঘটে l কারো ছেলে না হওয়ার বাসনা বাবার কাছে মানতে পুত্র সন্তান লাভ হয়, কেউ চাকরি পায়না ,বাবার মানতে সে চাকরি পায় ,কেউ খেতে পায়না বাবার মানতে এসে কোটিপতি হয় l দুঃখ-দুর্দশা এবং ভেদাভেদ ভুলে বাবার মাজারে হাজির হতে থাকেন অসংখ্য ভক্ত l চৈত্র মাসের একটি দিন দেখে বাবার বাৎসরিক অনুষ্ঠান হয় l সেই বাৎসরিক অনুষ্ঠানে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের জনসমাগম ঘটে বাবার প্রসাদ খাওয়ার জন্য l বহু ভক্ত বাবার এই মাজারে এসে তাদের দান ধ্যান করে যান l সেই থেকেই বাবার এই মাজারের দায়িত্ব পালন করে আসছে চমত সেতুয়া l এক আধ বছর নয় ,দীর্ঘ 39 বছর ধরে তার এই ক্রিয়াকর্ম l শুধু বছরে একদিন বাৎসরিক অনুষ্ঠান তিনি করে ক্ষান্ত হননি প্রতি বৃহস্পতিবার বিনামূল্যে এই মাজারের ভোগ নিবেদন করা হয় ভক্তজনের জন্য l হিন্দু-মুসলিম কচিকাঁচারা প্রায় 200 থেকে 400 মানুষ ভিড় জমান এই প্রসাদ গ্রহণের জন্য l প্রসাদে থাকে পোলাও ,বেগুন ভাজা ,সাদা ভাত,দল তিন রকমের তরকারি ,চাটনি ,পায়েস l এই সাপ্তাহিক প্রসাদের জন্য যাবতীয় টাকা সংগ্রহ করেন এই চমত সেতুয়া বিভিন্ন দোকান এবং বাড়ি বাড়ি রশিদ কেটে l এভাবে দীর্ঘ 39 বছর ধরে মাজারের দেখভাল করে আসছেন চমত সেতুয়া l নেই কোন অহংকার নেই ,কোন ভ্রুক্ষেপ, শুধু একটাই উদ্দেশ্য মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি রক্ষা করা l কিন্তু বর্তমানে যেভাবে দিনের-পর-দিন জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া হয়েছে তাতে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চমত সেতুয়ার l কারণ এভাবে দিনের পর দিন দাম বাড়ার ফলে আগামী দিনে ভক্ত জনকে কিভাবে প্রসাদ খাওয়াবেন সেই চিন্তায় তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন l তার আক্ষেপ তো রয়েছে সঙ্গে আশঙ্কা l এদিন তার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন বহু নেতা নেত্রী দেখেছি কেউ বিন্দুমাত্র তার দিকে ফিরে তাকান না l সে রাজ্য থেকে দিল্লী পর্যন্ত ,সব এর কাগজপত্র তার কাছে আছে ,সবাইকেই আবেদন নিবেদন করেছি l সম্প্রীতির তিনি নজির হয়েও কোন নেতা-নেত্রীর কাছে বিন্দুমাত্র সাহায্য পাচ্ছেন না ,যার জন্য এই মাজারের দেখভাল এবং ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ আগামী দিনে কিভাবে সম্ভবপর হবে তাই নিয়ে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন lConclusion:গোটা দেশ যখন অশান্ত ,তখন এক মুসলিম মাজারকে দীর্ঘ 39 বছর ধরে পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন বৃদ্ধ চমত সেতুয়া ,শুধু সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত না ,বর্তমান যুগে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগামী দিনে ভক্তদের কি খেতে দেবেন সেই আক্ষেপ বৃদ্ধের মুখে l
Last Updated : Jan 5, 2020, 7:47 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details