কলকাতা, 15 জুলাই: প্রাথমিকের 32 হাজারের চাকরি আছে, না নেই ? সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রতিলিপি প্রকাশের পর তা নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে ৷ কারণ, গত 19 মে বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ যে অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়েছিল, তার সবটাই গত 7 জুলাইয়ের রায়ে খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ৷ কিন্তু, 12 মে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চের রায় বহাল থাকবে ? নাকি সেই রায়ও খারিজ করা হয়েছে ? সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কপিতে তা উল্লেখ করা হয়নি ৷ বদলে ডিভিশন বেঞ্চকে পুনরায় মামলাটি শুনে রায়দান করতে বলেছে শীর্ষ আদালত ৷ যেখানে 32 হাজার প্রাথমিক শিক্ষকদের বক্তব্যও শুনতে বলা হয়েছে ৷
আর এখানেই তৈরি হয়েছে জটিলতা ৷ কারণ, কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের অন্তর্বর্তীকালীন সমস্ত নির্দেশ খারিজ হওয়ার অর্থ, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ যে 32 হাজার চাকরি খারিজের নির্দেশ দিয়েছিল, তা পুনরায় লাগু হয়ে যাওয়া ৷ কারণ, সুপ্রিম কোর্টের 7 জুলাইয়ের রায়ের কপিতে সিঙ্গল বেঞ্চের চাকরি খারিজের নির্দেশ নিয়ে কিছুই বলা হয়নি ৷
কী ছিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চের রায় ?
2014 সালের টেট উত্তীর্ণ 1 লক্ষ 25 হাজার চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে 42 হাজার 949 জনের নিয়োগ হয়েছিল ৷ কিন্তু, অভিযোগ ছিল 32 হাজারের নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে ৷ একাংশ আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীর করা মামলার শুনানি হয় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে ৷ সেখানে কয়েকজন পরীক্ষার্থী এবং পরীক্ষকের বয়ান নথিভুক্ত করে সিঙ্গল বেঞ্চ ৷ দীর্ঘ শুনানি শেষে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর রায়ে বলেন, ‘‘প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে ৷’’ সেই সঙ্গে তিনি এক ধাক্কায় 32 হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি খারিজ করে দেন ৷ নির্দেশ দেন আগামী 4 মাস অর্থাৎ, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাঁরা পার্শ্বশিক্ষকদের ন্যায় বেতন পাবেন ৷ আর অগস্ট মাসের মধ্যে পর্ষদকে নতুন করে 1 লক্ষ 25 হাজার চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে ৷ অর্থাৎ, ওই 32 হাজার প্রাথমিকের শিক্ষককে ফের ইন্টারভিউ দিয়ে নিজেদের চাকরি বাঁচাতে হবে ৷
এই নির্দেশের বিরুদ্ধে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ও চাকরিচ্যুত প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যায় ৷
কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ
বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ মামলাকারীদের বক্তব্য শোনে এবং সিঙ্গল বেঞ্চের রায় খতিয়ে দেখে ৷ এরপর গত 19 মে ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ ছিল, ‘‘সিঙ্গল বেঞ্চের রায় এক তরফা ৷ চাকরি খারিজ করার আগে শিক্ষকদের একাংশকে মামলার পার্টি করে, তাঁদের বক্তব্য শোনা উচিত ছিল ৷’’ ডিভিশন বেঞ্চ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের চাকরি খারিজের রায়ে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয় ৷ কিন্তু, পুনরায় 1 লক্ষ 25 হাজার নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করা এবং 32 হাজার প্রাথমিক শিক্ষককে সেই প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার যে নির্দেশ সিঙ্গল বেঞ্চ দিয়েছিল, তা বহাল রাখা হয় ৷ কিন্তু, পর্ষদ এবং প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় ৷