পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

দুর্ঘটনায় মৃত্যু, অঙ্গদানের মাধ্যমে অন্যের শরীরে বেঁচে থাকল মারিশদার যুবক

By

Published : Jan 13, 2020, 10:38 PM IST

বৃহস্পতিবার বিকেলে বাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন মারিশদার বাসিন্দা স্বপন হাজরা। শনিবার চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, ব্রেনডেথ হয়েছে তাঁর। এরপর পরিবারের তরফে সিদ্ধান্ত হয় অঙ্গদানের। ইতিমধ্যে স্বপনের দুই কিডনি এবং হৃৎপিন্ড SSKM হাসপাতালের তিন রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপিত হয়েছে । মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে লিভার প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে।

ছবি
ছবি

কলকাতা, 13 জানুয়ারি : ATM-এ টাকা তুলতে গেছিলেন । আর ফেরেননি । শেষমেশ চারদিন পর বাড়িতে ফিরল মৃতদেহ । টাকা তুলতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান পূর্ব মেদিনীপুরের মারিশদার স্বপন হাজরা । শোকে ভেঙে পড়েছে পরিবার । তবে কোথাও যেন অন্যদের মাঝে আজও বেঁচে আছেন স্বপন । তাঁর হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ, কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে অন্যদের শরীরে ।

মারিশদার বাসিন্দা স্বপন হাজরা (৪৫) । পেশায় রাজমিস্ত্রি । বাড়িতে স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলে । বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে বাড়ি থেকে ৫-৬ কিলোমিটার দূরের একটি ATM-এ টাকা তুলতে গেছিলেন । ফেরার সময় পাড়ার দু'জনের সঙ্গে দেখা হয় । বাইকে করে ফিরছিলেন তাঁরা । সেই বাইকে চেপে বাড়ি ফেরেন স্বপন । কিন্তু মাঝপথে দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন । হেলমেট ছিল না মাথায় । প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । পরে সেখান থেকে রেফার করা হয় SSKM হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে । শনিবার চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, স্বপ্ননের ব্রেনডেথ হয়ে গেছে । বাঁচানো অসম্ভব । এরপর দাদার অঙ্গাদানের সিদ্ধান্ত নেন ভাই সুরজিৎ হাজরা । শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, স্বপনের দুই কিডনি এবং হৃৎপিন্ড SSKM হাসপাতালের তিন রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপিত হয়েছে । এই তিন অঙ্গ গ্রহীতার শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল‌ । অন্যদিকে, মুকুন্দপুরে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালে লিভার প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে ।

কলকাতায় একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করেন সুরজিৎ হাজরা । তিনি বলেন, দাদার ব্রেন ডেথ হয়ে যাওয়ার কথা শুনে চিকিৎসকদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, আর কোনও চিকিৎসা আছে কি না । তারা জানান, আর কোনও চিকিৎসা নেই । এরপর আমি দাদার অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নিই । আমার পরিবারও সম্মতি জানিয়েছে । এখনও পর্যন্ত দাদার মৃত্যুর কথা মাকে জানাইনি । দাদাকে তো আর ফিরে পাব না । যদি দাদার অঙ্গগুলি অন্য কোনও মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপনের পরে সেই মানুষের মুখে হাসি ফোটে, তাহলে দাদা বেঁচে থাকবে ।

Intro:কলকাতা, ১৩ জানুয়ারি: ATM-এ টাকা তুলতে গিয়েছিলেন স্বপন হাজরা (৪৫)। গত বৃহস্পতিবার, দুপুরের পরে। চারদিন পরে আজ, সোমবার যদিও তিনি বাড়িতে ফিরলেন মৃতদেহ হিসাবে। তবে, তিনি বেঁচে থাকলেন অন্য চারজন মানুষের মধ্যে। তিনি বেঁচে থাকলেন তাঁর হার্ট, লিভার এবং দুই কিডনির মাধ্যমে। গতকাল, রবিবার রাতে SSKM হাসপাতালে এই যুবকের ব্রেন ডেথ ঘোষণা করা হয়। পূর্ব মেদিনীপুরের মারিশদা থানার ভাজাচাউলি গ্রামের স্বপন হাজরার অঙ্গ দানের সিদ্ধান্ত নেন তাঁর ভাই সুরজিৎ হাজরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, দুই কিডনি এবং হার্ট SSKM হাসপাতালে তিন রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। এই তিন অঙ্গ গ্রহীতার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল‌ রয়েছে। তবে, মুকুন্দপুরে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালে লিভার প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে।
Body:পেশায় রাজমিস্ত্রি ছিলেন স্বপন হাজরা। বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী, তিন মেয়ে এবং এক ছেলে। তাঁর এক মেয়ে বিবাহিতা। তাঁর ভাই সুরজিৎ হাজরা বলেন, "দাদা বাইক চালাতে জানতেন না। গত বৃহস্পতিবার দুপুরের পরে বাড়ি থেকে ৫-৬ কিলোমিটার দূরে ATM-এ টাকা তুলতে গিয়েছিলেন। ফেরার সময় দেখা হয় পাড়ার দুজনের সঙ্গে। তাঁরা একটি বাইকে করে ফিরছিলেন। দাদাও ওই বাইকে করে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। তবে রাস্তায় দুর্ঘটনায় পড়েন।" মাথায় হেলমেট ছিল না। পথ দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে জখম হয় স্বপন হাজরার মাথা। তাঁকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে রেফার করা হয় SSKM হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে। এখানে গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ নিয়ে আসা হয় স্বপন হাজরাকে। গত শনিবার চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, ব্রেন ডেথ হয়ে গিয়েছে। স্বপন হাজরাকে আর বাঁচানো সম্ভব নয়।
Conclusion:কলকাতায় একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করেন সুরজিৎ হাজরা। বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে তিনি দেখেছেন, ব্রেন ডেথ হয়ে যাওয়ার পরে অঙ্গ দান করা যায়। তিনি বলেন, "দাদার ব্রেন ডেথ হয়ে যাওয়ার কথা শুনে চিকিৎসকদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, আর কোনও চিকিৎসা আছে কি না। চিকিৎসকরা বলেন, আর কোনও চিকিৎসা নেই। এর পরে আমি দাদার অঙ্গ দানের সিদ্ধান্ত নিই।" আর, পরিজনদের সম্মতি? সোমবার সকালে SSKM হাসপাতাল থেকে দাদার মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সুরজিৎ হাজরা বলেন, "মাকে এখনও পর্যন্ত দাদার মৃত্যুর কথা আমরা জানায়নি। আমার বড়দি পথদুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন। আমার এক দাদা অসুখে মারা গিয়েছেন। মায়ের এখন ৭৫ বছর বয়স। সন্তানের মৃত্যুর কথা কীভাবে সহ্য করবেন?" তিনি বলেন, "বৌদিকে বোঝালাম। কিন্তু, আপনজনের এই রকম অবস্থা কেউ কি মানতে পারেন? বৌদির পাশাপাশি দাদার শ্বশুরবাড়ি, আমাদের মামার বাড়ির সকলকেও বোঝালাম। দাদাকে তো আর ফিরে পাব না। যদি দাদার অঙ্গগুলি অন্য কোনও মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপনের পরে সেই মানুষের মুখে হাসি ফোটে, তা হলে দাদা বেঁচে থাকবে।" অবশেষে সম্মতি জানান পরিজনরা। এর পরে রবিবার রাত থেকেই শুরু হয়ে যায় অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া। তবে, সুরজিৎ হাজরার আক্ষেপ, "দাদার হার্ট, লিভার এবং দুই কিডনি কাদের শরীরে প্রতিস্থাপন হচ্ছে, আমরা এই বিষয়ে এখনও জানতে পারলাম না। জানতে পারলে খুব ভালো লাগত।"

_______


ছবি:
wb_kol_01a_brain_death_organ_donation_pic_7203421
এবং,
wb_kol_01b_brain_death_organ_donation_pic_7203421
স্বপন হাজরা





ABOUT THE AUTHOR

...view details