কলকাতা, 16 জুন : ''পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলা হলে আমি ভারতের সমর্থক । তবে পাকিস্তান বনাম অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ হলে আমার সমর্থন পাকিস্তানের দিকেই। আমি একজন খেলোয়াড় । ভালো খেলা তা যে দেশের হোক না কেন দেখতে এবং সমর্থন করতে ভালো লাগে । সেখানে সীমান্তের বিধি নিষেধ না থাকাই বাঞ্ছনীয়।'' লিলুয়ার বাড়িতে বসে এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলছিলেন ৭৪ বছরের প্রাক্তন গোলরক্ষক বলাই দে । ছয় ও সাতের দশকের ময়দান কাঁপানো বিরল ব্যক্তিত্ব । শুধু ভারত নয় পাকিস্তানের জার্সিতে প্রতিনিধিত্ব করেছেন । চলতি ক্রিকেট বিশ্বকাপের আবহে ফুটবলার বলাই দে-র পরিচয় হয়ত নতুন প্রজন্মকে চমকে দেবে ।
ফরিদপুরের কোটালিপাড়ায় বলাই দের জন্ম। বাবা খুলনাতে চাকরি করতেন। পড়া-খেলায় হাতেখড়ি পদ্মাপাড়েই। সে সময় আজকের বাংলাদেশ ছিল পাকিস্তানের অর্ন্তগত। পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে বড় হয়েছেন বলাইবাবু। প্রথম থেকেই নজরটানা পারফরম্যান্সে নাম ছড়িয়েছিল খুলনাতে। 1961-62-র মরসুমে খুলনা হিরোজ, টাউন ক্লাবের জার্সিতে নিয়মিত মাঠে নামতেন। 1963 সালে ঢাকা মহামেডানে খেলতে আসতেন কবীর ভাই। শুধু তিনি নন, ওমর, মুসা, হাসানের মত পাকিস্তানের নামজাদা ফুটবলাররা ঢাকা লিগে খেলতে আসতেন। তারা সবাই বলাই দের প্রশংসা করতেন। শীঘ্রই সুযোগ পান আগা খান গোল্ড কাপে, পাকিস্তানের জার্সিতে খেলার সুযোগ মিলেছিল এই বাঙালি গোলকিপারের। সেখানে ভালো খেলে সুযোগ আসে চিন সফরের জন্য। 1964 সালে সফরকারী রাশিয়ার বাকু ইলেভেনের বিরুদ্ধে করাচি, লাহোর, রাওয়ালপিণ্ডি, ঢাকা, চট্টগ্রাম- মোট পাঁচটি ম্যাচে দুরন্ত পারফরম্যান্স, বলাই দে নামের পাশে জুড়ে দেয় 'ফ্লাইং বার্ড' তকমা।
খুলনাতে থাকলেও দে পরিবারের আত্মীয়দের বাস ছিল এপার বাংলায়। তাঁদের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। বাকু ইলেভেনের বিরুদ্ধে খেলে বলাই দে পরিবারের সঙ্গে কলকাতায় এসেছিলেন। জল অনেক দূর গড়িয়ে যায় । ততদিনে তিনি ভারতের নাগরিকত্ব পেয়েছেন । ইস্ট বেঙ্গলে সুযোগ পান বলাই দে । কিন্তু, দলে গোলরক্ষক হিসেবে থঙ্গরাজ, সনৎ শেঠ থাকায় সেভাবে সুযোগ পাচ্ছিলেন না। দু'বছরে মাত্র চোদ্দটি ম্যাচ খেলেছিলেন। তখনই আসে এরিয়ান খেলার প্রস্তাব দেয়। যদিও টাকার অংকটা কম ছিল । কিন্তু, নিয়মিত খেলার সুযোগ মিলবে, আশ্বাস ছিল এটুকুই। কিছুটা ঝুকি নিয়ে ১৯৬৭ সালে এরিয়ানে সই করেছিলেন। লিগে তিন প্রধানকে প্রায় একার হাতে রুখে দিয়েছিলেন। নতুন মরসুমে তাঁর কাছে মোহনবাগানে খেলার প্রস্তাব নিয়ে আসে ।
এরপর বলাই দের জীবনে শুধুই উত্তরণ। ক্লাব পর্যায়ে ভালো খেলার পাশাপাশি বাংলা ও ভারতীয় দলে সুযোগ। 1969 সালে জার্নেল সিং এর কোচিং-এ মারডেকায় খেলেছেন। সেখানে বলাই দে নামের পাশে 'দ্য রক' তকমা দিয়েছিল সংবাদমাধ্যম। ভারতের হয়ে চেকোস্লোভাকিয়া সফরেও গেছিলেন। ট্রায়ালে ডাক পেলেও 1970-এ এশিয়ান গেমসের মূল দলে সুযোগ হয়নি।
1971-এ ফের লাল হলুদে প্রত্যাবর্তন। 74 সালে ক্লাব ফুটবল থেকে অবসর ইস্টবেঙ্গল থেকেই। তবে অফিসের হয়ে 1990 সাল পর্যন্ত খেলেন। বর্তমানে লিলুয়া সূর্যনগর মৈয়েত্রী সংঘের কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত। নতুন প্রতিভাদের গড়ে তোলার কাজে ব্যস্ত।
কলকাতা,১৫ জুনঃ “পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলা হলে আমি ভারতের সমর্থক । তবে পাকিস্তান বনাম অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ হলে আমার সমর্থন পাকিস্তানের দিকেই থাকে। আমি একজন খেলোয়াড়। ভালো খেলা সে যেশের হোক না কেন দেখতে এবং সমর্থন করতে ভালো লাগে। সেখানে সীমান্তের বিধি নিষেধ না থাকাই বাঞ্ছনীয়। কারণ খেলাই সম্পর্কে প্রলেপ দিতে পারে,” লিলুয়ার বাড়িতে বসে কথাগুলো বলছিলেন ৭৪ বছরের প্রাক্তন গোলরক্ষক বলাই দে। ছয় ও সাতের দশকের ময়দান কাঁপানো বিরল ব্যক্তিত্ব তিনি। শুধু ভারত নয় পাকিস্তানের জার্সিতে প্রতিনিধিত্ব করার কৃতিত্ব রয়েছে। চলতি ক্রিকেট বিশ্বকাপের আবহে ফুটবলার বলাই দে-র পরিচয় হয়ত নতুন প্রজন্মকে চমকে দেবে। তবে তাঁর ফুটবল প্রঞ্জা,ভালোবাসা, আন্তরিকতা এবং দায়বদ্ধতায় কোন খেদ নেই।
ক্রিকেটে যেমন সিনিয়র পতৌদির ইংল্যান্ড এবং ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার কৃতিত্ব রয়েছে তেমনই বলাই দের রয়েছে পাকিস্তান ও ভারতের জার্সি পরার নজির।
ফরিদপুরের কোটালিপাড়ায় বলাই দের জন্ম। বাবা খুলনাতে চাকরি করতেন। ফলে পড়াশোনা ও খেলাধুলার হাতেখড়ি পদ্মাপাড়ে। এখানে বলে রাখা ভালো সেসময় আজকের বাংলাদেশ ছিল পাকিস্তানের অর্ন্তগত। ফলে পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে বড় হয়েছেন বলাইবাবু। প্রথম থেকেই নজরটানা পারফরম্যান্সে নাম ছড়িয়েছিল খুলনাতে। ফলসরূপ ৬১-৬২ মরসুমে খুলনা হিরোজ, টাউন ক্লাবের জার্সিতে নিয়মিত প্রথম একাদশে সুযোগ মিলেছিল। সেখানে ভালো খেলার জেরে পরবর্তীকালে ঢাকা মহমেডানে খেলার সুযোগ এনে দেয় বলাই দে-র সামনে। ১৯৬৩ সালে ঢাকা মহামেডানে খেলতে আসতেন কবীর ভাই। শুধু তিনি নন, ওমর, মুসা, হাসানের মত নামজাদা পাক কিংবদন্তী ফুটবলাররা ঢাকা লিগে খেলতে আসতেন। তারা সবাই বলাই দের সাহসী গোলরক্ষার প্রশংসা করতেন। যার জেরে আগা খান গোল্ডকাপে পাকিস্তানের জার্সিতে খেলার সুযোগ মিলেছিল বাঙালি গোলকিপারের। সেই টুর্নামেন্টে বার্মা, থাইল্যান্ডে তদানীন্তন সিলোন বা আজকের শ্রীলঙ্কা অংশ নিয়েছিল। সেখানেও ভালো পারফরম্যান্সের ফলসরূপ পাকিস্তানের হয়ে চিন সফর। ফিরে ১৯৬৪ সালে সফরকারী রাশিয়ার বাকু ইলেভেনের বিরুদ্ধে করাচি,লাহোর, রাউলপিন্ডি,ঢাকা চট্টগ্রামে মোট পাঁচটি ম্যাচে দুরন্ত পারফরম্যান্স যা বলাই দে নামের পাশে জুড়ে দেয় “ফ্লাইং বার্ড” তকমা।
এই ঘটনাপ্রবাহ বোধহয় বাঙালি গোলরক্ষকের জীবন পথ অন্য খাতে বাহিত হওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল।
খুলনাতে থাকলেও দে পরিবারের আত্মীয়দের বাস ছিল এপার বাংলায়। তাদের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। বাকু ইলেভেনের বিরুদ্ধে খেলে বলাই দে পরিবারের সঙ্গে কলকাতায় এসেছিলেন। সেসময় তাঁর জ্যাঠতুতো দাদা গৌরাঙ্গ চন্দ্র দে হাওড়ায় বিএনআর এ কর্মরত। তাঁর মাধ্যমেই বলাই দের কলকাতায় আসার খবর জানতে পারেন বিএনআর এর কর্তারা। প্রসঙ্গত এপাড় বাংলার ফুটবলে তাঁর নাম ততদিনে পরিচিত। ফলে হাতের কাছে পেয়ে বলাই দে কে ট্রায়ালে আসার প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেসময় বিএনআর এ খেলতেন অরুন ঘোষ,আপ্পারাও,তুলসীদাস বলরামের মত ফুটবলাররা। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নজরকাড়া পারফরম্যান্স বলাই দের। দলে নিলে দল শক্তিশালী হবে এই চিন্তা করে তদানীন্তন ডিজিএম খান্না সাহেব মাসিক ৪২৫ টাকায় খেলার প্রস্তাব দেন। পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে প্রস্তাবে হ্যাঁ বলে দিয়েছিলেন তিনি। ফলে পরিবারও এপাড় বাংলায় চলে আসে।
ছবিটা বদলে গেল ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষ কর্তা জ্যোতিষ গুহর প্রস্তাবে। তিনি বলাই দে কে জানান আর্ন্তজাতিক ছাড়পত্র ফিফা থেকে আনতে সমস্যা হবে। তিনি সেই সমস্যার সমাধান করবেন তবে বিএনআর নয় ইস্টবেঙ্গলে খেলতে হবে। বিএনআর যে পরিমান টাকা দিচ্ছে তা তো দেওয়া হবে অতিরিক্ত হিসেবে তিন হাজার টাকাও দেওয়া হবে। ফলে মত বদলে লাল হলুদে বলাই দে। ইতিমধ্যে ভারতের নাগরিকত্ব নিয়ে নিয়েছেন।
দলে গোলরক্ষক হিসেবে থঙ্গরাজ, সনৎ শেঠ থাকায় বলাই দে ইস্টবেঙ্গলে সেভাবে সুযোগ পাচ্ছিলেন না। দুবছরে মাত্র চোদ্দটি ম্যাচ খেলেছিলেন। নিয়মিত সুযোগ না পাওয়ার যন্ত্রনা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল। এসময় এরিয়ান খেলার প্রস্তাব দেয়। তবে অর্থটা কম। নিয়মিত খেলার সুযোগ মিলবে। কিছুটা ঝুকি নিয়ে ১৯৬৭ সালে এরিয়ানে সই করেছিলেন। লিগে তিন প্রধানকে প্রায় একার হাতে রুখে দিয়েছিলেন। নতুন মরসুমে তাঁর কাছে মোহনবাগানে খেলার প্রস্তাব নিয়ে আসে গজু বসু ও মানিক গোস্বামী। আর্থিক চাহিদা আকর্ষনীয় ও স্টেট ব্যাঙ্কে চাকুরির ব্যবস্থা।
এরপর বলাই দের জীবনে শুধুই উত্তরণ। ক্লাব পর্যায়ে ভালো খেলার পাশাপাশি বাংলা ও ভারতীয় দলে সুযোগ লাভ। ১৯৬৯ সালে জার্নেল সিং এর কোচিং এ মারডেকায় খেলেছেন। সেখানে বলাই দে নামের পাশে “দ্য রক” তকমা দিয়েছিল সংবাদমাধ্যম। ভারতের হয়ে চেকোস্লোভাকিয়া সফরেও গিয়েছিলেন। তবে ট্রায়ালে ডাক পেলেও ১৯৭০ সালের এশিয়ান গেমসের মূল দলে সুযোগ হয়নি।
১৯৭১সালে ফের লাল হলুদে প্রত্যাবর্তন। ৭৪ সালে ক্লাব ফুটবল থেকে অবসর ইস্টবেঙ্গল থেকেই। তবে অফিসের হয়ে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত খেলেছেন।
বর্তমানে লিলুয়া সূর্যনগর মৈয়েত্রী সংঘের কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত। নতুন প্রতিভাদের গড়ে তোলার কাজে ব্যস্ত। বলাই দের হাত থেকে বেরিয়েছে তাপস চক্রবর্তী, সন্তোষ বসুর মত গোলরক্ষক। আপাতত ছেলে মেয়ে এবং খেলা নিয়ে দিন যাপন।
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যেকোনও খেলোয়াড়ী প্রতিদ্বন্দীতা হলেই বলাই দে ফিরে যান তাঁর প্রথম জীবনে। হয়ত আজকের পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও মিল নেই। তবুও দুই দেশের জার্সি পড়ার সুখস্মৃতি নিয়ে ভালো সম্পর্কের আশায় টিভির সামনে বসেন দ্য ফ্লাইং বার্ড।Body:Balau deyConclusion: