পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

Debi Durga: সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের হাতে গড়া পরচুলাতে সেজে ওঠেন দেবী উমা

By

Published : Aug 6, 2022, 11:06 PM IST

Debi Durga
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের হাতে গড়া পরচুলাতে সেজে ওঠেন দেবী উমা

কুমোরটুলিগুলি থেকে মায়ের প্রতিমা পাড়ি দেওয়া শুরু হয়েছে রাজ্যের বাইরে ৷ সেই সকল প্রতিমার নানান বৈচিত্রের সাজ, পোশাক ও গহনায় সেজে উঠছেন দেবী দুর্গা। পুজো-পুজো গন্ধে এখন অধীর আগ্রহে আপামর বাঙালির মন। আর দুর্গা মায়ের মূর্তিরই অন্যতম আকর্ষণ হল প্রতিমার কেশ সজ্জা। এই কেশ সজ্জা তৈরি হয় হাওড়ায় ৷ পার্বতীপুর ও কমলাপুর গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের হাতে ৷

হাওড়া, 6 অগস্ট: বাইশের দুর্গাপুজোর ঢাকে ইতিমধ্যেই কাঠি পড়ে গিয়েছে। শহরের বিভিন্ন মণ্ডপে, বাড়ির পুজোর দালানে ও কুমোর পাড়াতে এখন সাজো-সাজো রব। উমা আসছে ৷ কোথাও রথের দিন তো কোথাও বিশেষ দিনের বিশেষ তিথিতে কাঠামো পুজো ও খুঁটি পুজোর মাধ্যমে মায়ের আবাহন প্রায় শুরু হয়ে গিয়েছে। দেবী দুর্গাকে যে কেশসজ্জায় সাজানো হয় তা তৈরি হচ্ছে হাওড়ায় ৷ যাঁরা এর নেপথ্যে তাঁরা হলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ৷

হাওড়ার দুটি গ্রাম থেকে রাজ্যের অন্যান্য প্রান্ত-সহ ভিন রাজ্যেও পাড়ি দেয়। আমতা রোডের বড়গাছিয়া থেকে ডানদিকে ঘুরে মাত্র এক কিলোমিটার এগোলেই পাশাপাশি রয়েছে দু'টি গ্রাম পার্বতীপুর ও কমলাপুর। আর এই দুটি গ্রামের একটা বড় অংশের মানুষেরা বছরের পর বছর ধরে তৈরি করে আসছেন মায়ের প্রতিমার কেশ।

গ্রাম দুটিতে ঢুকতেই চোখে পড়বে দড়ি থেকে সারি বেঁধে ঝুলছে লাল, কালো ও মেরুন বিভিন্ন রঙের পরচুলা। তবে এর মধ্যেও বিশেষত্ব যে অনেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরা মা দুর্গার কেশ তৈরির সঙ্গে যুক্ত ৷ পাট, গরম জল ও লাল, কালো, মেরুন-সহ নানান রঙের মাধ্যমে সেই প্রাচীন পদ্ধতিতেই তাঁরা এখনও তৈরি করে চলেছেন মায়ের রংবেরঙের কেশ।

আরও পড়ুন :করোনার প্রকোপ কাটিয়ে ছন্দে ফিরছে কুমোরটুলি

তবে পুজোর ঠিক প্রাক মুহূর্তে একটানা বৃষ্টির জেরে পাটের জোগান কম থাকায় বেশ কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে নাওয়া-খাওয়া ভুলে বরাতের পরচুলা তৈরি করে পাঠাতে হিমশিম খেতে হয় শিল্পীদের। পার্বতীপুর ও কমলাপুর গ্রামের প্রায় 200-250টি পরিবার যুক্ত রয়েছেন এই শিল্পের সঙ্গে। কেউ বা যুক্ত রয়েছেন বংশনানুক্রমে আবার কেউ বা 30-40 বছর ধরে।

মায়ের প্রতিমার পরচুলা তৈরির সঙ্গে যুক্ত এরকমই এক ব্যবসায়ী ওরফে শিল্পী সামসের দহ মল্লিক জানান, শুধু পশ্চিমবঙ্গেরই নয় দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতি বছরই পুজোর আগে পারি দেয় তাঁদের পরচুলা। তবে করোনা আবহে দু'বছর সেইভাবে বরাত না থাকলেও এই বছর অনেক পরচুলার বরাত পেয়েছেন। পাশাপাশি তিনি জানান, এখানে প্রায় 22 জন কর্মী কাজ করেন। এটা খুব খাটনির কাজ। বৃষ্টি এলেই চাপা দেওয়া তারপরে পরচুলা প্যাকিং করা। তাঁর ছেলেরাও এই কাজে তাঁকে সাহায্য করে।

দেবী দুর্গাকে যে কেশসজ্জায় সাজানো হয় তা তৈরি হচ্ছে হাওড়ায় ৷ যাঁরা এর নেপথ্যে তাঁরা হলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ৷

অপর এক শিল্পী শেখ মতিউর রহমান জানান, প্রায় 45 বছর ধরে তিনি এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। বর্তমানে বাজারে ভীষণ প্রতিযোগিতার জন্য লাভের হার কমলেও, পরচুলার চাহিদা অনেক। তাঁদের থেকে এই পরচুলা কুমারটুলিতে যায়। সেখান থেকে দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। দু'বছর কোভিডের কারণে বরাত না থাকলেও এই বছরে অনেক বরাত পেয়েছেন। তবে দুর্গাপুজোর সময়ে পরচুলা তৈরি করে বেশি লাভের মুখ দেখতে পান ৷

আরও পড়ুন :মাকে গড়ছে মেয়ে, কুমোরটুলির সপ্তদশীর হাতে 'প্রাণ' পাচ্ছে দশভূজা

তবে দুর্গাপুজার মতো বছরের অন্য সময় সেভাবে চাহিদা না থাকায় অনেকেই অন্য সময় সংসার চালাতে অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে রয়েছেন। তবে এই পরচুলা শিল্পের সঙ্গে জুড়ে থাকা শিল্পীদের কাছে এই শিল্প পেশার চেয়ে বেশি নেশাতেই পরিবর্তিত হয়েছে। পাশাপাশি প্রথাগত প্রশিক্ষণ ছাড়াই পূর্ব পুরুষের হাতে কলমে শেখানো পদ্ধতিতেই এই শিল্পীদের কারিগরি দক্ষতা প্রশ্নতীত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

TAGGED:

Debi Durga

ABOUT THE AUTHOR

...view details