পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

উচ্চমানের কনটেন্টে নতুন জীবন দিয়েছে আঞ্চলিক মালায়ালম ওটিটি প্ল্যাটফর্ম

By

Published : Jan 30, 2021, 5:29 PM IST

Malayalam OTT Platform

বড় ব্যানার বা বড় তারকাদের মুখের বদলে মালয়ালাম ওটিটি প্লাটফর্মে এখন নজর দেওয়া হচ্ছে ভালো কনটেন্টের দিকে । জোর দেওয়া হচ্ছে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি, সমান্তরাল ছবি এবং ছোট ব্যানারের ছবিগুলির দিকে । বিস্তারিত আলোচনায় ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি কে প্রবীণ কুমার ।

হায়দরাবাদ : কেরালার সিনেমাপ্রেমীদের কাছে আকিরা কুরোসাওয়া, ইঙ্গমার বার্গম্যান, কিসলস্কি, জাঁ লুক গোদারদের মতে বিশ্ব সিনেমার কিংবদন্তিরা রীতিমতো পরিচিত নাম। রাজ্যের প্রত্যন্ত প্রান্তেও অতীতে যে ফিল্ম সোসাইটিগুলি সক্রিয় ছিল, তারাও আন্তর্জাতিক সিনেমাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। টেলিভিশন ও ভিডিও লাইব্রেরির জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ফিল্ম সোসাইটিগুলো ক্রমশ বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে শুরু হওয়া কিছু ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এখন সেই কাজই করছে, যা এই সোসাইটিগুলো অতীতে করত। তারা দর্শকদের কাছে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি, সমান্তরাল ছবি এবং ছোট ব্যানারের ছবিগুলোকে পৌঁছে দিচ্ছে। যেখানে কোভিডের বিধিনিষেধ এই ওটিটিগুলোকে জনপ্রিয় হওয়ার রাস্তা করে দিয়েছে, সেখানে সিনেমাহল খোলার পরও তাদের জনপ্রিয়তা বজায় থাকবে বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। যেখানে বড় ব্যানারের ছবিগুলো হলে মুক্তি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে, সেখানে ছোট ব্যানারের ছবির মুক্তি এবং বেশিদিন জনসমক্ষে থাকার জন্য ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ওপরেই নির্ভর করতে হবে। ‘নিস্ট্রিম’ এবং ‘প্রাইম রিলস’ হল দুটি সাম্প্রতিককালে শুরু হওয়া দু'টি মালায়ালম ভাষার ওটিটি, যারা বড় ব্যানার বা তারকা সমাহারের বদলে ভালো কনটেন্ট তৈরির নীতিতেই বিশ্বাসী। নিস্ট্রিম-কেরালার আঞ্চলিক প্রধান চার্লস জর্জ বলেন, ‘আমরা কনটেন্ট ও তার নির্মাণের গুণগত মানে বিশ্বাসী। ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কিচেন’-এর মতো শো-কে আমাজন ও নেটফ্লিক্স – দুজনেই বাতিল করেছিল। কিন্তু আমরা এই ছবির গুণগত মান দেখেছি, এবং আমরা জানতাম কেরলে মানুষের কাছে এটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে।’ দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কিচেন-এ মুখ্য চরিত্রে রয়েছেন জাতীয় পুরস্কারজয়ী অভিনেতা সুরজ ভেনজারামুদু এবং রাজ্য পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী নিমিশা সাজায়ান। এই ছবি কেরালায় ঝড় তুলেছিল এবং সেরাজ্যে পিতৃতন্ত্রের দাপট ও মহিলাদের প্রতি খারাপ আচরণ নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত করেছিল। যখন এই সিনেমা নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্ক শুরু হল, নিস্ট্রিম-ও তখন জনপ্রিয়তা এবং বাড়তে থাকা গ্রাহক সংখ্যার সুবিধে পেয়েছে। চার্লস জর্জ আরও বলেন, “আমাদের বেশিরভাগ গ্রাহকই কেরলের বাইরের, যাঁদের নতুন মালয়ালম ছবি দেখার সুযোগ নেই। মানুষ সবসময়ই ভাল কনটেন্টকে গ্রহণ করে।”

আরও পড়ুন : ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ইঁদুরদৌড় নেই, খুশি রসিকা

কোচির ওটিটি প্ল্যাটফর্ম প্রাইম রিলস-ও ভাল এবং সামাজিকভাবে প্রাসঙ্গিক ছবিকে জায়গা দেয়। তাদের সাম্প্রতিক মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি, জয় জিতিন প্রকাশ পরিচালিত ‘দ্য কনফেশনস অফ আ কুক্কু’ হল একটি বাস্তবধর্মী ছবি যাতে শিশুদের যৌন নির্যাতনের প্রসঙ্গ আনা হয়েছে, যেখানে অপরাধীরা হল নিকটাত্মীয়। এটি পরিচালকের প্রথম ছবি, কিন্তু ওটিটি প্ল্যাটফর্ম তাকে গ্রহণ করতে পিছপা হয়নি, এবং তার বিষয়বস্তুকে মর্যাদাও দিয়েছে। কেরালায় সবসময়ই এমন ছবির সংস্কৃতি রয়েছে, যা ভাল হলেও বাণিজ্যিকভাবে ব্যর্থ। শক্তিশালী ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক এধরণের বেশিরভাগ ছবিকেই সিনেমা হলের বাইরে রেখে দেয়, যাতে তাদের বাণিজ্যিক সাফল্য নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। এখনও এধরণের ছবি হলগুলোতে দু-এক সপ্তাহের বেশি চালানো হয় না। আঞ্চলিক ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এক্ষেত্রে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, এবং এধরণের সিনেমার স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে ভাল ছবি থেকে এখন অর্থও আসছে। দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কিচেন-এর মুক্তির পর নিস্ট্রিমের গ্রাহকসংখ্যা বেশ খানিকটা বেড়েছে। প্রাইম রিলসের ভাঁড়ারেও রয়েছে ভাল ছবি। বিরাট তারকা সমাহার না থাকলেও ভাল মানের ছবির জনপ্রিয়তা আঞ্চলিক ওটিটিকে সাহায্য করছে, তাদের কনটেন্ট নির্বাচন কৌশল নিয়ে এগিয়ে চলতে। যেখানে বড় ওটিটি প্ল্যাটফর্মের রয়েছে বড় বড় নাম, সেখানে ইন্ডাস্ট্রির ছোট অংশীদারদের নিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্নপথে এগোচ্ছে আঞ্চলিক ওটিটিগুলো। দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কিচেনের পরিচালক জেও বেবি বলেন, “একমাত্র নিস্ট্রিমই আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। আমাজন ও নেটফ্লিক্স খারিজ করে দেওয়ার পর আমি ছবির ভাগ্য নিয়ে চিন্তিত ছিলাম।” তিনি আমাজন বা নেটফ্লিক্সকে দোষ দিতে চান না, কারণ তাঁর কথায়, “টেলিগ্রাম ও অন্যান্য পাইরেটেড মুভি শেয়ারিং মিডিয়ার যুগে, ওদের মূল্যায়ন সৎ ছিল। তারা হয়তো ছবির বাণিজ্যিক সাফল্যের দিকটাও ভেবে থাকবে।”

আরও পড়ুন : আমরা তো শিল্প নিয়ে ধান্দা করি আজকাল : নওয়াজ়ুদ্দিন

তিনি যোগ করেন, যে নিস্ট্রিম শুধু ছবির বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেছে এবং বিষয়টা বন্ধুত্বপূর্ণই ছিল। তিনি বলেন, “যদিও আমি আশা করিনি যে এই ছবি নিয়ে এত আলোচনা হবে, তবে আমি জানতাম যে এতে এমন একটা বিষয় আছে, যা নিয়ে সিরিয়াস বিতর্ক হতে পারে।” সিনেমাহলের বিপরীতে গিয়ে, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম জেও-কে দেশ ও দেশের বাইরে আরও বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছতে সাহায্য করেছে। জেও জানান, “আমি খুশি, যে মহিলারা ছবিটা হলে দেখতে আসতে পারেননি, তাঁরাও বাড়ি বসে সেটা দেখে আলোচনা করতে পারেন।” আঞ্চলিক ওটিটিগুলো শুধু ভাল সিনেমাকেই মনোযোগ এবং উৎসাহ দিচ্ছে এমনটা নয়, তারা ওয়েব সিরিজের আকারেও ভাল কনটেন্ট সামনে আনছে। কেরলের টেলিভিশন সিরিয়াল খারাপ মানের জন্য কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে। আর ওটিটি-ই পারে ওয়েব সিরিজের মধ্যে দিয়ে ভাল কনটেন্টে নবজীবন দিতে। নিস্ট্রিম-এর চার্লস জর্জ জানালেন, “আমাদের অন্তত চারটি ওয়েব সিরিজ এখন তৈরি হচ্ছে। এখানেও আমরা ভাল কনটেন্টের ওপর জোর দিয়েছি। কোনও ওয়েব সিরিজ গ্রহণ করার আগে আমরা ১৮টি এপিসোড দেখে নিই।” কুডে-র মতো কিছু ওটিটি একধাপ এগিয়ে শর্ট ফিল্ম, মিউজিক অ্যালবাম ও ওয়েব সিরিজকে জায়গা দিচ্ছে, যাতে দর্শকের সামনে আরও বৈচিত্রপূর্ণ বিকল্প থাকে।

ABOUT THE AUTHOR

...view details