পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

Aparna Sen: অভিনেত্রী থেকে পরিচালক, উত্তম-সৌমিত্রর নায়িকাও, মেমসাহেবের শুরু আছে শেষ নেই

By

Published : Sep 26, 2022, 9:40 AM IST

এখন দেবীপক্ষ ৷ সন্তানদের নিয়ে উমার ঘরে ফেরার পালা ৷ কিন্তু আমাদের এই মর্ত্যেই এমন অনেক গৌরী আছেন, যাঁরা নিজেদের প্রতিভা আর পরিশ্রমের জোরেই হয়ে উঠেছেন দশভূজা ৷ সাহিত্য, বিজ্ঞান, বিনোদন, ব্যবসা, বাণিজ্য, খেলাধুলো বা সামাজিক অবদান- সবদিক দিয়েই তাঁরা অনন্যা ৷ দেবীপক্ষে তাঁদের কথা আরও একবার মনে করল ইটিভি ভারত ৷ আজকে আলোচনা করব বাঙালির প্রিয় অভিনেত্রী এবং পরিচালক অপর্ণা সেন সম্পর্কে (Remembering Aparna Sen)৷

Aparna Sen
অভিনেত্রী থেকে পরিচালক, উত্তম-সৌমিত্রর নায়িকাও, মেমসাহেবের শুরু আছে শেষ নেই

কলকাতা, 26 সেপ্টেম্বর:শুধু বাঙালির প্রিয় অভিনেত্রী এবং পরিচালক বললে অপর্ণা সেন সম্পর্কে প্রায় কিছুই বলা হয় না (Remembering Aparna Sen)। যে কয়েকজন কুশিলব আধুনিক বাংলা চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে গিয়েছেন তাঁর মধ্যে বাঙালির রিনাদির স্থান বেশ উপরের দিকে ।

নিজের ভালো লাগা, মন্দ লাগা নিয়ে বরাবরই সোজাসাপটা থেকেছেন অপর্ণা (Aparna Sen)। একসময় নিজেই জানিয়েছিলেন, অতৃপ্তি ছিল বলেই অভিনেত্রী থেকে পরিচালক হওয়ার শপথ নেন । ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে একইধরনের সংলাপ, একঘেঁয়ে অভিনয় করতে করতে দমবন্ধ লাগছিল তাঁর । বারবার মনে হচ্ছিল সিনেমাকে তাঁর আরও অনেক কিছু দেওয়ার আছে । আর সেই কারণেই লেন্সের পেছনে গেলেন 'মেমসাহেব'। একজন শিল্পীর কাছে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হল তাঁর শিল্প । তাঁর শিল্পই কথা বলে তাঁর হয়ে । ঠিক যেমন অপর্ণার জীবনবোধ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মতাদর্শ সবটাই ফুটিয়ে তুলেছে তাঁর ছবি (Aparna Sen Films) ।

কেরিয়ারের শুরুতে ‘সমাপ্তি’, ‘বসন্ত বিলাপ’ কিংবা ‘ছুটির ফাঁদে’র মতো বাণিজ্যিক ছবিতে তাঁর অভিনয় মন জিতে নিয়েছিল সকলের । এই অপর্ণাকেই বার বার অন্যভাবে পেয়েছে বাঙালি । ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার’ হোক বা ‘জাপানিজ ওয়াইফ’ কিংবা ‘ইতি মৃণালিনী’ তাঁর ছবি আদ্যপান্ত তুলে ধরল তাঁর জীবন দর্শন । তুলে ধরল তাঁর রাজনৈতিক বোধকে ।

1945 সালের 25 অক্টোবর জন্ম এই মানুষটির । বাবা ছিলেন বিখ্যাত পরিচালক পরিচালক চিদানন্দ দাশগুপ্ত । তাই শুরু থেকেই বাড়িতে ছিল ছবির পরিবেশ । ছবির জগতে প্রবেশের প্রথম সুযোগটা আসে প্রবাদপ্রতীম সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে । 1961 সালে মুক্তি পায় ‘সমাপ্তি’। এরপর অবশ্য সত্যজিৎ রায় তাঁকে ব্যবহার করেছেন একাধিক ছবিতে । ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘জনঅরণ্য’-র মতো একাধিক ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র পেয়েছেন অপর্ণা । শুধু অভিনয় নয় লেখালেখিতেও যথেষ্ট আগ্রহী অপর্ণা । তাঁর লেখাও প্রশংসা কুড়িয়েছে রীতিমতো ।

একজন শিল্পীর দায়িত্ব সমাজকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া । ভালো মন্দ সমস্তটাই তার চোখের সামনে তুলে ধরা । শুধু যে ছবির মাধ্যমে অপর্ণা সেই কাজ করেছেন তা কিন্তু নয় । প্রয়োজনে রাস্তায় নামতেও দ্বিধা করেননি । বাংলার বাম শাসনের শেষদিকে যে কয়েকজন বুদ্ধিজীবী সরকারের বিরোধিতা করেছিলেন তাঁদের অন্যতম অর্পণা সেন । জমি আন্দোলন হোক বা লালগড়ে ছত্রধর মাহাতোদের আন্দোলন- সব জায়গাতেই ছিলেন অর্পণা । হাল আমলে এনআরসি বিরোধিতার ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন প্রথম। এমনকী এই কয়েকদিন আগেও সলমন রুশদীর বই নি্ষিদ্ধ করার বিপক্ষেও রুখে দাঁড়িয়েছেন তিনি । যা তাঁর মননে আঘাত করেছে তা নিয়ে প্রতিবাদে শামিল হতে অথবা মিছিলের মুখ হয়ে রাস্তায় হাঁটতে কোনও দ্বিধা করেননি অপর্ণা । কেন্দ্র রাজ্য দুই সরকারেরই ভুল কাজের প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন তিনি । একাধিকবার স্বীকার হয়েছেন বিতর্কের তবে তা থামিয়ে দিতে পারেনি রিনাদিকে ।

আরও পড়ুন: কলকাতার দুর্গাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, নেপথ্যে রয়েছেন আরও এক 'দুর্গা'

মাত্র 16 বছর বয়সে অভিনয় জগতে পথ চলা শুরু করা এই মানুষটির হাত ধরে বাংলা পেয়েছে ‘পরমা’, ‘পারমিতার একদিন’, ‘36 চৌরঙ্গি লেন’-এর মতো আশ্চর্য সব ছবি । তাঁর ছবিতে একদিকে যেমন ফুটে ওঠেছে সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নারী সমস্যার কথা তেমনই ফুটে উঠেছে এক গূঢ় জীবন বোধ । যা তাঁকে আলাদা স্থান করে দিয়েছে বাঙালি মননে ।

চারটি জাতীয় পুরস্কার, পাঁচটি ফিল্ম ফেয়ার ইস্ট পুরস্কার এবং পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত অপর্ণা সেন দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন বিদেশেও । 16তম মস্কো ইন্টারন্যাশানাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে জুরির অংশ ছিলেন এই অভিনেত্রী পরিচালক । একই সঙ্গে আবার 2008 সালে এশিয়া পেসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডস-এও জুরির অংশ ছিলেন তিনি ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details