পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনাকে সফল করতে হলে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে রাজ্যগুলিকেই

By

Published : Mar 19, 2020, 10:51 PM IST

ফসল বিমায় সম্প্রতি যে পরিবর্তনগুলি এসেছে, তাতে এই প্রকল্পের টিকে থাকা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে কয়েকটি মহলে। এই প্রকল্প টিকে থাকতে হলে রাজ্যগুলিকে বড় ধরনের আর্থিক দায়িত্ব নিতেই হবে।

image
প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা

দুর্নীতি ও প্রকল্পের ফাঁকফোকর ঢাকতে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা (PMFBY)-তে বড়সড় রদবদল ঘটিয়েছে কেন্দ্র। এখন থেকে কৃষকদের জন্য এই বিমা আর বাধ্যতামূলক রইল না। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী PMFBY প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এই প্রকল্পের আওতায় বিমা করা বাধ্যতামূলক করা হয় ঋণগ্রস্ত চাষিদের জন্য। এই মুহূর্তে দেশের ৫৮ শতাংশ কৃষক ঋণগ্রস্ত।

জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (NDA) ক্ষমতায় আসার পর ২০১৬ সালের খারিফ মরশুমে এই প্রকল্প শুরু করার পর থেকে চাষিদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে বহু বার এর বহু পরিবর্তন হতে দেখা গিয়েছে। PMFBY-তে শেষ বড় পরিবর্তনটি আসে গত মাসের ১৯ তারিখ। ফেব্রুয়ারি মাসের সে দিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এই প্রকল্পে বেশ কিছু বড় পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করে। মূলত দু’টি বড় পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করা হয়। যার প্রথমটি হল, প্রকল্পটিকে কৃষকদের জন্য আর বাধ্যতামূলক না রাখা। আর দ্বিতীয়টি হল, অসেচ এলাকা ও ফসলের জন্য ৩০ শতাংশ এবং সেচযুক্ত এলাকা ও ফসলের জন্য ২৫ শতাংশ বিমার প্রিমিয়ামে ভর্তুকির মাত্রা বেঁধে দেওয়া। এই দুই সিদ্ধান্ত এই প্রকল্পে বড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। আগামী কয়েকটি মরশুম ভাল করে নজর রাখলে এর প্রভাব কতটা তা বোঝা যাবে।

ঋণগ্রস্ত কৃষকদের জন্য এই বিমা প্রথম থেকেই বাধ্যতামূলক ছিল না। এ বার তা বাকি চাষিদের জন্যও বাধ্যতামূলক রইল না। বিমা সংস্থাগুলির মতে, এর ফলে বিমা করতে আর বেশির ভাগ কৃষকই চাইবেন না। কেবলমাত্র তাঁরাই এই প্রকল্পের আওতায় আসতে চাইবেন, যাঁদের ঝুঁকির মাত্রা অন্যদের তুলনায় অনেকটাই বেশি। অন্য ভাবে বলতে গেলে, এর ফলে প্রকল্পের আওতায় থাকা এলাকায় পরিষেবা দিতেও সমস্যা হবে। কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রকের কর্তারা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে PMFBY-এর আওতায় থাকা এলাকা ১০ থেকে ২০ শতাংশ কমে যাবে। এ ক্ষেত্রে একটি তথ্য জেনে রাখা ভাল, ২০১৬ সালে সূচনা হওয়ার পর থেকে বহু উদ্যোগ এবং প্রচারের পরেও এখনও পর্যন্ত মাত্র ২২ থেকে ৩০ শতাংশ ফসল এই বিমার আওতায় রয়েছে।

এ ছাড়াও এই প্রকল্পের আওতায় থাকা কৃষকদের সংখ্যাও চলতি বছরের খারিফ মরশুমের পর থেকে উল্লেখযোগ্য ভাবে কমতে পারে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের খারিফ মরশুম থেকে ২০১৮ সালের খারিফ মরশুমের মধ্যে বিমার আওতায় থাকা কৃষকের সংখ্যা প্রায় ১৪ শতাংশ কমে হয়েছে তিন কোটি ৪৮ লাখ। এই সংখ্যাটা আগে ছিল ৪ কোটি ৪ লাখ। কৃষি দফতরের কর্তারা বলছেন, এই সংখ্যাটা কমেছে মূলত বিভিন্ন রাজ্য সরকার কৃষি ঋণ মকুবের প্রকল্প আনায় এবং এর সুবিধা নিতে যাতে দুর্নীতি না হয়, তার জন্য আধার সংযুক্তিকরণের নির্দেশ দেওয়ায়। বিমার আওতায় থাকা কৃষকের সংখ্যা কমে যাওয়ায় প্রিমিয়ামের পরিমাণও বাড়তে শুরু করেছে। শেষ কয়েক বছরে রবি শষ্যে বিমার পরিমাণ বেড়েছে ১২ শতাংশ এবং খারিফ শষ্যে ১৪ শতাংশ।

এর পর যদি আরও কম সংখ্যক কৃষক এই প্রকল্পে নাম লেখান, তা হলে প্রিমিয়াম আরও বেড়ে যেতে বাধ্য। ঠিক এই জায়গাতেই বড় ভূমিকা নেবে সরকারি ভর্তুকি। প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী, সেচহীন পরিবেশে ফসলের বিমার প্রিমিয়াম যদি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি হয় এবং সেচযুক্ত পরিবেশে তা যদি ২৫ শতাংশ বেশি হয়, তা হলে কেন্দ্রের ভর্তুকির পরিমাণ ওই পরিমাণে সীমাবদ্ধ থাকবে।

অর্থাৎ, ধরে নেওয়া যাক কোনও সেচহীন অঞ্চলে ফসলের প্রিমিয়াম সাধারণ অবস্থার চেয়ে ৪০ শতাংশ বেড়ে গেল। তা হলে কৃষককে দিতে হবে ২ শতাংশ এবং বাকি ৩৮ শতাংশ সমান ভাবে ভাগ হবে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে। কিন্তু এই পরিমাণে বদল ঘটবে চলতি বছরের খারিফ মরশুম থেকে। এ বার থেকে হিসাব অনুযায়ী, কৃষকে দিতে হবে ২ শতাংশ। কেন্দ্র দেবে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে বাকি ৩৮ শতাংশের ১৪ শতাংশ দেবে কেন্দ্র। আর প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে হলে বাকি২৪ শতাংশ দিতে হবে রাজ্যকে।

এই অবস্থায় কোনও রাজ্য যদি এই প্রকল্পে অংশ না নিতে চায়, অর্থাৎ এই অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা না নিতে চায়, সে ক্ষেত্রে কৃষকরা হয়ত এই উপযোগী বিমা প্রকল্প থেকে নিজেদের সরিয়ে নেবে। ফসলের ক্ষতি হলে হয়ত রাজ্যের নিজস্ব স্টেট ডিজাস্টার রিলিফ ফান্ড (SDRF) থেকে ক্ষতিপূরণ নিয়ে নেবে। আর এটা হলে কেন্দ্রের বিমা যোজনা প্রকল্প অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে। এমনকি কৃষি দফতরের কয়েক জন কর্তা এটা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, অন্ধ্রপ্রদেশের মতো যে সব রাজ্য আর্থিক অনটনে ভুগছে, তারা আদৌ এই বিমা প্রকল্পে এই পরিবর্তনের ফলে টাকা দিতে পারবে কি না। ফসলের ক্ষতি হলে SDRF-এর মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ অবশ্য PMFBY থেকে পাওয়া অর্থের চেয়ে অনেকটাই কম।

কৃষি, ফুলের চাষ এবং বার্ষিক ফসলের ক্ষেত্রে সেচহীন এলাকায় ছোট ও মাঝারি চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় হেক্টর প্রতি ছয় হাজার আটশো টাকা। এই পরিমাণই সেচযোগ্য অঞ্চলে দেওয়া হয় ১৩ হাজার আটশো টাকা। তবে এই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় কোনও কৃষকের সর্বোচ্চ দুই হেক্টর জমির উপর এর বেশি জমি থাকলেও চাষি দুই হেক্টরের জন্যই ক্ষতিপূরণ পাবেন। তুলনায়, বিমা করা থাকলে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ কতটা? একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যাক। ২০১৮ সালের খরিফ মরশুমে গুজরাতের রাজকোট জেলায় ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ছিল ক্যাস্টরের ক্ষেত্রে হেক্টর প্রতি ৩৯ হাজার টাকা, তুলোর ক্ষেত্রে হেক্টর প্রতি ৫৮ হাজার টাকা, বাদামের জন্য হেক্টর প্রতি ৪২ হাজার টাকা। বোঝাই যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় বিমা না থাকলে SDRF থেকে কৃষক অনেকটাই কম ক্ষতিপূরণ পাবেন।

কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যের প্রদেয় ক্ষতিপূরণের অংশ কম করতে এবং একইসঙ্গে কৃষকদের উপযোগী বিমার আওতায় আনতে কী করা উচিত? সে ক্ষেত্রে রাজ্যগুলি নির্দিষ্ট কিছু বাছাই ফসলের ক্ষেত্রে, যে সব ক্ষেত্রে ক্ষতির আশঙ্কা অনেকটাই বেশি, সেগুলিকে PMFBY-এর আওতায় নিয়ে আসতে পারে। কোনও ক্ষেত্রে হয়ত শুধুমাত্র শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের জন্য বিমা করা হল। এই সুযোগ রাখা হয়েছে সর্বশেষ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে। এই ধরনের ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম কম হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে যা-ই হোক, আগামী বছরগুলিতে খুব কড়া নজরে রাখতে হবে PMFBY-কে।

ABOUT THE AUTHOR

...view details