পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

অভাব জয় "সোনা"-র মেয়ে খাদিজার

By

Published : Mar 7, 2020, 11:40 PM IST

কোচবিহার জেলার শীতলকুচি ব্লকের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রাম কুর্শামারি। এই গ্রামের কৃষক পরিবারের চার সন্তানের মধ্যে ছোটো মেয়ে খাদিজা। খাদিজা আন্তর্জাতিক স্ট্রেন্থলিফটিং প্রতিযোগিতায় দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে। ব্যাঙ্ককে অনুষ্ঠিত ওই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় তিনি দুটি বিভাগে সোনা পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, বিশ্বের সেরা শক্তিশালী মহিলার খেতাবও পেয়েছেন । প্রত্যন্ত গ্রামের এই মেয়ের সাফল্যে খুশি কোচবিহারের বাসিন্দারা।

Khadija of Koch Bihar highlighted the country's name
দেশের নাম উজ্জ্বল করল কোচবিহারের খাদিজা

কোচবিহার, 7 মার্চ : টিনের ঘর । বাবার সামান্য চাষের জমি আছে । প্রায় দিন আনি দিন খাই পরিবার । নিত্য অভাবকে সঙ্গে নিয়েই স্বপ্নের জাল বোনা । শুধু স্বপ্নের জাল বোনা নয়, স্বপ্নের পিছনে ধাওয়া করা ৷ আর সেই স্বপ্নকে পূরণ করেছেন কোচবিহারের কুর্শামারির খাদিজা খাতুন ৷

শীতলকুচি ব্লকের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রাম কুর্শামারি। এই গ্রামের কৃষক পরিবারের চার সন্তানের মধ্যে ছোটো মেয়ে খাদিজা। টিনের ঘরের বাইরে বাঁধা গোরু । খাদিজার জন্য পুষ্টিকর খাবার বলতে সেই গোরুর দুধ ।

সোনার মেয়ে খাদিজা

ট্রেনিংয়ের জন্য প্রতিদিন হেঁটে ও তারপর বাসে করে ১৪০ কিলোমিটার দুরত্ব অতিক্রম করতে হয় খাদিজাকে । সেখানে পৌঁছে তবে পাওয়ার লিফটিংয়ের অনুশীলন । কঠোর পরিশ্রমের পর পেটে জুটত না কোনও পুষ্টিকর খাবার । তবুও হাল ছাড়েননি বছর বাইশের খাদিজা । স্বপ্নের ঘোরে আরও পরিশ্রম করে গিয়েছেন । খাদিজা বলেন,"এত দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে অনুশীলন শুরু করতে কষ্ট হয় । কিন্তু করার কিছু ছিল না । সামান্য রুটি খেয়ে পরিশ্রম করতে হয়েছে । যাঁদের আর্থিক অবস্থা ভালো তাঁরা কাজু-কিসমিস খেত ।"

দেশের নাম উজ্জ্বল করলেন কোচবিহারের খাদিজা

প্রথমে জেলা ও রাজ্য পর্যায়ে সেরার শিরোপা আসে। এরপর ব্যাঙ্ককে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক স্ট্রেন্থলিফটিং প্রতিযোগিতায় দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পান। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামের চাষির মেয়ের ব্যাঙ্কক যাওয়ার খরচ আসবে কোথা থেকে? হাল ছেড়ে দেন খাদিজা নিজেও । কিন্তু মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য গরিব বাবা চেষ্টা করতে থাকেন । তাঁর বাবা আউয়ালুল হক এক স্বনির্ভর গোষ্ঠী থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। স্থানীয় এক বাসিন্দা কিছু সাহায্য করেন । শেষমেশ স্থানীয় BDO কিছুটা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।

সামান্য রুটি খেয়ে পরিশ্রম করতে হয়েছে, বললেন খাদিজা

ব্যাঙ্ককে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক স্ট্রেন্থলিফটিং প্রতিযোগিতায় তিনি দুটি বিভাগে সোনা পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, বিশ্বের সেরা শক্তিশালী মহিলার খেতাবও পেয়েছেন। প্রত্যন্ত গ্রামের এই মেয়ের সাফল্যে খুশি কোচবিহারের বাসিন্দারা।

ছোটোবেলা থেকেই খাদিজা একটু ডানপিটে ছিলেন। প্রথমে স্কুল পর্যায়ে বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। কিন্তু এখানে থেমে থাকতে রাজি ছিলেন না । পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই । তাই স্বপ্ন পূরণের জন্য আরও পরিশ্রম করতে শুরু করেন খাদিজা । তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাওয়ারলিফটিং, ওয়েটলিফটিং ও স্ট্রেন্থলিফটিং শুরু করেন। কিন্তু গ্রামে কিংবা আশপাশে এই ধরনের অনুশীলন কেন্দ্র নেই। অনুশীলন করতে তাঁকে যেতে হত কোচবিহার-২ ব্লকের মধুপুর গ্রামে। খাদিজা আর তাঁর বাবা-মায়ের ইচ্ছে যদি একটা সরকারি চাকরি পাওয়া যায় তাহলে কিছুটা সুরাহা হবে । খাদিজা বলেন, আর্থিক নিরাপত্তা আসলে গ্রামের অনেক সুপ্ত প্রতিভাকে তুলে ধরতে পারবেন ।

১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্ককে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সেই প্রতিযোগিতায় দুটি বিভাগে খাদিজা সোনা পান। এছাড়া শক্তিশালী মহিলার খেতাবও পান। খাদিজার এই সাফল্যে খুশি সবাই। এখনও প্রতিদিন ১৪০ কিলোমিটার দূরে কোচবিহারের মধুপুরে আসতে হয় তাঁকে অনুশীলনের জন্য। এতটা পথ পেরিয়ে অনুশীলন করা তাঁর পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবে থেমে থাকতে চান না খাদিজা ৷ তাঁর লক্ষ্য যে আরও অনেক দূর যাওয়া ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details