পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

চিনের সম্প্রসারণশীল রণকৌশল

By

Published : Jun 20, 2020, 6:21 PM IST

নিঃসন্দেহে ভারতের সঙ্গে চিনের সাড়ে চার দশকেরও বেশি এই সীমান্ত সমস্যা জাগিয়ে তোলার পিছনে বেজিংয়ের স্বেচ্ছাচারিতাই দায়ি । এটা স্পষ্ট যে, সীমান্ত এলাকায় পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ দেখে এবং লাদাখকে মোদি সরকার কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করায় চিন অখুশি । এবং তারা এখন এটা নিয়ে ঝামেলা পাকাতে চায় । এখন এটাই দেখার যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেওয়া হুঁশিয়ারি যে, 'চিন প্ররোচনা দিলে আমরাও যোগ্য জবাব দেব'-এর পালটা পদক্ষেপ করতে গিয়ে চিন কতদূর যেতে পারে ।

চিনের পতাকা
চিনের পতাকা

চিনা অভিধানে সৌহার্দর অর্থ কি যুদ্ধ? সাত বছর আগে যখন শি চিনপিং চিনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন, তখন তাঁর প্রস্তাবিত 'নয়া পঞ্চশীল'-এর অর্থ কি ছিল গায়ের জোরে সীমা লঙ্ঘন করা? এই সব প্রশ্নই এখন ওয়াকিবহাল মহলকে ভাবাচ্ছে । যদিও দু’দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে হওয়া দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সুর এবং মর্ম এটাই ছিল যে, কোনওরকম বিতর্কে না গিয়ে নির্বিরোধে, যৌথভাবে যে কোনও মতবিরোধ মেটানো সম্ভব । কিন্তু সম্প্রতি লাদাখ সীমান্তে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে, তা তাদের উপর আমাদের বিশ্বাস এবং ভরসা ভেঙে দিয়েছে । ছ’সপ্তাহ আগে চিনা সেনার সীমান্ত পেরোনোর চেষ্টার ঘটনার পর যখন ভারতীয় এবং চিনের সেনাবাহিনীর মধ্যে তৈরি হওয়া অচলাবস্থা ধীরে ধীরে মিটে গিয়ে, পরিস্থিতি ক্রমশ স্বাভাবিকের পথে এগোচ্ছিল, ঠিক তখনই জানা গেল সাম্প্রতিক সংঘর্ষে 20 জন ভারতীয় জওয়ান শহিদ হয়েছেন । নিঃসন্দেহে ভারতের সঙ্গে চিনের সাড়ে চার দশকেরও বেশি এই সীমান্ত সমস্যা জাগিয়ে তোলার পিছনে বেজিংয়ের স্বেচ্ছাচারিতাই দায়ি ।

চিন মনে করছে, যদি তিব্বত তাদের হাতের তালুতে লুকিয়ে থাকা অস্ত্র হয়, তাহলে ভুটান, লাদাখ, নেপাল, সিকিম এবং অরুণাচল প্রদেশ হল তাদের হাতের বাকি পাঁচটা আঙুল । যখন ভুটানের সঙ্গে ভারতের দূরত্ব বাড়িয়ে, সীমা লঙ্ঘনে তার কৌশল ব্যর্থ হয়, তখন তারা 2017 সালে ডোকলাম এলাকায় টানা 10 সপ্তাহ ধরে প্রথমে উত্তেজনা তৈরি করে এবং পরে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় । চূড়ান্ত ঐক্যমতে না পৌঁছানো পর্যন্ত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা মেনে চলা সংক্রান্ত দু’দেশের তরফে স্বাক্ষরিত 1993 সালের চুক্তি লঙ্ঘন করাই ছিল ড্রাগনের আসল কৌশল । পাশাপাশি, তারা চেয়েছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ প্যাংগং হ্রদ এলাকা, ডেমোচক, গালওয়ান উপত্যকা এবং দৌলত বেগ ওল্ডি এলাকায় অনধিকার প্রবেশ করতে । এটা স্পষ্ট যে, সীমান্ত এলাকায় পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ দেখে এবং লাদাখকে মোদি সরকার কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করায় চিন অখুশি । এবং তারা এখন এটা নিয়ে ঝামেলা পাকাতে চায় । এখন এটাই দেখার যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেওয়া হুঁশিয়ারি যে, 'চিন প্ররোচনা দিলে আমরাও যোগ্য জবাব দেব'-এর পালটা পদক্ষেপ করতে গিয়ে চিন কতদূর যেতে পারে ।

চিনের মুখপত্র 'গ্লোবাল টাইমস'-এর সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, চিন নিয়ে অ্যামেরিকার তরফে কৌশলগত চাপের জেরে ভারত এই বিভ্রান্তিতে রয়েছে যে, সীমান্তে পরিকাঠামোগত তারা কোনও কাজই করতে পারবে না । পাশাপাশি, কিছু কিছু ভারতীয় এটা ভেবেও বোকামি করছে যে, ভারতীয় সেনা চিনের তুলনায় অধিক শক্তিশালী । চিন মিথ্যা গল্প ফাঁদছে যে, সীমান্ত সমস্যার মূল কারণ হল ভারতের তাদের এলাকায় অনধিকার প্রবেশ এবং অনৈতিকভাবে পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজে লিপ্ত হওয়া । কিন্তু সত্যিটা হল এই যে, যদি চিনকে আকসাই চিন-এর (পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর থেকে যে এলাকা পাকিস্তান চিনের হাতে তুলে দিয়েছে) উপরে কৌশলগত কর্তৃত্ব বজায় রাখতে হয়, তাহলে সেই সব এলাকাতেও নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে, যেখানে সম্প্রতি সেনা সংঘর্ষ হয়েছে । মোদি সরকারের তরফে নেওয়া কড়া সিদ্ধান্তের পাশাপাশি, এশিয়া প্যাসিফিক এলাকায় ভারতের অনুকূলে থাকা নয়া রাজনৈতিক সমীকরণও চিনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

চিন যেখানে বারবার বলে এসেছে, সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার জন্য পশ্চিমপন্থী মতাদর্শ থেকে ভারতের সরে আসা উচিত সেখানেই আবার তারা ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও অ্যামেরিকার মিত্রজোটও মেনে নিতে পারছে না । দ্বিতীয়বার ভারতের ক্ষমতায় আসার পর মোদি সরকারের নেওয়া উন্নয়নমূলক প্রকল্প এবং প্রস্তাবিত G-7 সম্প্রসারণে ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করার ট্রাম্পের সাম্প্রতিক প্রস্তাবও চিনকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে । যেখানে তারা এটা ভেবে অখুশি যে, G-7-এ ভারতের অন্তর্ভুক্তি আদপে তাদের প্রভাব খর্ব করারই গেমপ্ল্যান । সেখানেই আবার তারা এই কারণেও উদ্বিগ্ন যে, COVID-19-এর উৎস খুঁজে বের করার তদন্তে ভারত সহযোগিতা করছে । বিশ্লেষকদের দাবি, অসামরিক যুদ্ধের বা গণ-উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি হলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে চিন বরাবরই নতুন নতুন কৌশল আবিষ্কার করে । এবারও কোরোনা নিয়ন্ত্রণে নিজেদের অক্ষমতার কারণে জনরোষ সামাল দিতে তারা ব্যর্থ হয়েছে আর তাই মানুষের মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরাতে তারা সীমান্তে উত্তেজনা এবং যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করছে । এমন কী, একথাও বলা হচ্ছে যে, অতীতেও অন্তর্দেশীয় স্তরে নিজেদের নানারকম অক্ষমতা ঢাকতে তারা যুদ্ধের পথ বেছে নিয়েছিল । এবার ভারতের উচিত, চিনের এই ন্যক্কারজনক অভিসন্ধি প্রকাশ্যে আনা এবং কঠোরভাবে তার মোকাবিলার জন্য নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র ঘষেমেজে প্রস্তুত করে রাখা ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details