ETV Bharat / bharat

পুনমের পাবলিসিটি স্টান্ট গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিপন্থী, সতর্কবাণী শোনালেন ফ্যাক্ট-চেকিং বিশেষজ্ঞ

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 5, 2024, 12:50 PM IST

Fact-Checker Flags Poonam Pandey's 'Stunt': মডেল তথা অভিনেত্রী পুনম পাণ্ডের মিথ্যে মৃত্যুর রটনা অবাক করেছে দেশবাসীকে ৷ ক্যানসার সচেতনতা বাড়াতে এই ধরনের স্টান্ট কী আদৌ গ্রহণযোগ্য? ইটিভি ভারতের প্রতিনিথি শঙ্করানারায়ণন সুদালাই কথা বলেন ফ্যাক্ট-চেকিং বিশেষজ্ঞ মুরলিকৃষ্ণান চিন্নাদুরাইয়ের সঙ্গে ৷ তিনি সচেতন করেছেন এই ঘটনাকে শুধুমাত্র খবর হিসাবে পরিবেশন করা ঠিক নয় ৷

Etv Bharat
ফ্যাক্ট-চেক করেই দূরে থাকুন গুজব থেকে

হায়দরাবাদ, 5 ফেব্রুয়ারি: মৃত্যুর খবর রটিয়ে আচমকাই খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন মডেল তথা অভিনেত্রী পুনম পাণ্ডে ৷ সার্ভাইকাল ক্যানসারের মতো মারণরোগে মৃত্যুর খবর সোশাল মিডিয়ায় উঠে আসতেই তা ভাইরাল হতে খুব বেশি সময় নেয়নি ৷ আর এখানেই দেখা যাচ্ছে বিপদের সংকেত ৷ প্রশ্ন উঠছে কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ? অভিনেত্রীর মৃত্যু নিয়ে রটনা নাকি ক্যানসার নিয়ে সচেতনতার প্রবণতা ৷ সার্ভাইকাল ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে পুনম পাণ্ডের মিথ্যে মৃত্যুর খবর সামনে আসতেই এর গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ৷ এই বিষয়ে ইটিভি ভারতের তরফে কথা বলা হয় ফ্যাক্ট-চেকিং এক্সপার্ট মুরলিকৃষ্ণান চিন্নাদুরাইয়ের সঙ্গে ৷

ইটিভি ভারত: একজন ফ্যাক্ট-চেকার হিসাবে সোশাল মিডিয়ায় পুনম পাণ্ডের মিথ্যে মৃত্যুর ঘটনাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

চিন্নাদুরাই: প্রথমত এই খবরটা ছিল তাঁর ব্যক্তিগত ইনস্টাগ্রাম পেজে ৷ এই সংক্রান্ত খবর আর কোথাও কিন্তু ছিল না ৷ এমনকী, কোনও মেডিক্যাল তথ্যও এর সঙ্গে দেওয়া হয়নি ৷ একজন মডেল যিনি তিনদিন আগে রেড কার্পেটে হেঁটেছেন, তিনি আচমকা সার্ভাইকাল ক্যানসারে মারা গেলেন, এই বিষয়টা এত সহজে মেনে নেওয়া যায় না ৷ তাও যেহেতু খবরটি মডেলের ব্যক্তিগত ইনস্টা হ্যান্ডেলে প্রকাশিত হয়েছে, তাই সকলেই এই ঘটনাকে নিয়ে খবর করেন ৷ আর প্রশ্নটা এখানেই ৷ কোনওভাবেই এই খবরের সত্যতা যাচাই করা হয়নি ৷ কোনও তথ্য বা প্রমাণ চেক করা হয়নি ৷ তাঁর মৃ্ত্যুর খবরে কোনও মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখা হয়নি, এমনকী তাঁর দেহ কোথায় রাখা হয়েছে, তা নিয়েও কোনও প্রশ্ন ওঠেনি ৷ এটাই সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় ৷

ইটিভি ভারত: তাহলে এই মিথ্যে খবরের ফ্যাক্ট-চেক করতে এত সময় লাগল কেন?

চিন্নাদুরাই: আসলে ফেক ইনস্টাগ্রাম পোস্টে 2 ফেব্রুয়ারি সকালে পুনম পাণ্ডের মৃ্ত্যুর খবর সামনে আনা হয়েছিল ৷ কিন্তু তাঁর মৃ্ত্যুর খবর নিয়ে পরিবারের কোনও সদস্যের প্রতিক্রিয়া আসেনি ৷ পাশাপাশি অভিনেত্রীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টাও করা হয়নি ৷ এমনকী তাঁর বন্ধু মুনাওয়ার ফারুকিও এই ঘটনা শুনে নিজের সোশাল পেজে দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন ৷ বিকেল 4টে পর্যন্ত মৃত্যু নিয়ে কোনওরকম তথ্যপ্রমাণ সামনে আসেনি ৷ এরপর একটি ন্যাশনাল নিউজ চ্যানেলে মুম্বইয়ের একজন ফ্যাক্ট-চেকার এই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ৷ তিনি পুনমের সঙ্গে পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ঘটনার সত্যতা জানার জন্য ৷ কিন্তু কোনওভাবেই সঠিক তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিল না পুনমের মৃত্যু নিয়ে ৷ এই ধরনের ফেক খবরকে 'পোস্ট ট্রুথ' বলা হয় ৷ এর মানে যতক্ষণ না সেই ব্যক্তি বা তাঁর পরিবারের সদস্যরা এই নিয়ে কোনও রকম মুখ খুলছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না ৷

ইটিভি ভারত: পুনম পাণ্ডে দাবি করেছেন, তিনি তাঁর মিথ্যে মৃত্যুর খবর রটিয়েছেন সার্ভিক্যাল ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য ৷ এটাকে পজিটিভ দিক থেকে দেখা যাবে না কেন?

চিন্নাদুরাই: এটাকে কোনওভাবেই পজিটিভভাবে দেখা যাবে না ৷ উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, এই ট্যাকটিকস ফান্ডামেন্টালি ত্রুটিপূর্ণ ৷ কারণ এই ধরনের ঘটনা যখনই ছড়িয়ে পড়ছে তখনই যাঁরা এই রোগে আক্রান্ত তাঁদের মধ্যে বাঁচার আশা কমে যেতে পারে ৷ যদি সত্যিই সচেতনতা বাড়াতে হয়, তাহলে সত্যের পথ গ্রহণ করা উচিত ৷ মৃত্যুর মতো ঘটনাকে সামনে আনায় তা খারাপ প্রভাব ব্যক্ত করে ৷

ইটিভি ভারত: গুজব এবং অপপ্রচার ৷ এই দু'টোর মধ্যে তফাৎ কী? কোথায় রয়ে যাচ্ছে সূক্ষ্ম পার্থক্য?

চিন্নাদুরাই: আসলে গুজব হল মিথ্যা খবর ছড়ানো, যা একজন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে করছেন ৷ আর বিভ্রান্তিমূলক প্রচারাভিযান হল এমন এক পদ্ধতি যা বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও প্রচারের জন্য পরিকাঠামো তৈরি করে ৷ পুনম পাণ্ডের এই ঘটনা অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রাম পেজে আসতে তা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে ৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই খবর নানাভাবে প্রভাবিত করেছে সকলকে ৷

সংবাদমাধ্যম বাধ্য হয়েছে মিথ্যে এই খবরকে সত্যি বলে প্রকাশ করতে ৷ সোশাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সাধারণ মানুষকে দেখা গিয়েছে হ্যাশট্যাগ পুনম পাণ্ডে ডেথ লিখে দুঃখপ্রকাশ করতে ৷ এটা কখনও হতে পারে না, একাধিক ব্যক্তি একই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে নিজেদের শোকপ্রকাশ করছেন ৷ এটা পুরোটাই হয়েছে পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে ৷ টেকনিক্যালি ও পিআর টিমের সাহায্য নিয়ে মিথ্যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে ৷ এমনকী, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে পুনমকে নিয়ে একাধিক টুইট সোশাল মিডিয়ায় লক্ষ্য করা গিয়েছে ৷ ফলে এই ধরনের ঘটনাকে মারাত্মক অপরাধের সঙ্গে তুলনা করা যায় ৷ শুধু তাই নয়, পুনম পাণ্ডে ও তাঁর টিমের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া উচিত ৷

ইটিভি ভারত: যদি উদ্দেশ্য সঠিক হয় তাহলে অপরাধমূলক পদক্ষেপ কী সঠিক হবে? আমরা কি অপপ্রচার রুখতে পারি না?

চিন্নাদুরাই: গুজব এড়িয়ে চলা সঠিক পদক্ষেপ হতে পারে ৷ কিন্তু এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে এমনটা বলা যায় না ৷ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম সম্প্রতি 2024 সালের গ্লোবাল রিস্ক রিপোর্ট প্রকাশ্যে এনেছে ৷ এই রিপোর্টে মিথ্যে খবর ও অপপ্রচার আলোচনার মূল বিষয় হিসাবে উঠে এসেছে ৷ বিশ্বব্যাপী 50 শতাংশের বেশি দেশে যার মধ্যে ভারত ও আমেরিকাও রয়েছে, সেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে চলতি বছর ৷ এর ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি ডিপফেক টেকনোলজি ও মিথ্যে খবর এই সময় দাঁড়িয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ৷ সেই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভারত ৷ আমরা যদি পুনম পাণ্ডের ঘটনাকে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরি তাহলে দেখা যাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য নানা রকম অপপ্রচারকে হাতিয়ার করে নিচ্ছে ৷ যা জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারে ৷ তাই পুনম পাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত হবে ৷ না হলে, এই ঘটনা গণতন্ত্রের দর্শনের পরিপন্থী হয়ে উঠবে ৷

ইটিভি ভারত: সামনেই নির্বাচন ৷ কীভাবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এই ধরনের ফেক নিউজকে চিহ্নিত করতে পারবে?

চিন্নাদুরাই: প্রত্যেক সংবাদমাধ্যমের উচিৎ যেখান থেকে খবর সংগ্রহ করা হচ্ছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার সত্যতা যাচাই করে নেওয়া ৷ খবর ছাপার আগে, তার সোর্স কোথা থেকে এসেছে সেটা অবশ্যই জানা উচিত ৷ ইন্টানেটে যে ধরনের খবর আসছে, তা নেটিজেনদের বিশ্বাস করা সবসময় উচিত নয় ৷ সেটা বিশ্বাস করার আগে বা শেয়ার করার আগে বারবার চেক করে নেওয়া উচিত ৷ কোনও রকম হিংসা ছড়ায় বা অপপ্রচার করে এমন ঘটনার সত্যতা না জেনে সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা উচিত নয় ৷ যদি আমরা ছোট ছোট বিষয় গুলোকে মাথায় রাখি, তাহলে আমরা নিজেদের এবং আমাদের সমাজকে গুজব-অপপ্রচার থেকে রক্ষা করতে পারব ৷

অর্থাৎ পুনম পাণ্ডের ঘটনা আরও একবার সকলকে মনে করিয়ে দিল, দিনের শেষে সোশাল মিডিয়া সবসময় বন্ধু নয়; সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে উঠতে পারে ৷ তাই সাবধান থাকা ও সাবধান রাখা ভীষণভাবে জরুরী ৷

আরও পড়ুন:

1. মৃত্যুর খবর রটিয়ে ক্যানসার সচেতনতার প্রচার, পুনমকাণ্ডে পুলিশের দ্বারস্থ সিনে অ্যাসোসিয়েশন

2. বেঁচে আছি...! 24 ঘণ্টার টানটান নাটকে যবনিকা পতন পুনমের

3. মৃ্ত্য়ুর খবর রটিয়ে 'পাবলিসিটি স্টান্ট', কটাক্ষের শিকার পুনমের পাশে রামগোপাল

হায়দরাবাদ, 5 ফেব্রুয়ারি: মৃত্যুর খবর রটিয়ে আচমকাই খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন মডেল তথা অভিনেত্রী পুনম পাণ্ডে ৷ সার্ভাইকাল ক্যানসারের মতো মারণরোগে মৃত্যুর খবর সোশাল মিডিয়ায় উঠে আসতেই তা ভাইরাল হতে খুব বেশি সময় নেয়নি ৷ আর এখানেই দেখা যাচ্ছে বিপদের সংকেত ৷ প্রশ্ন উঠছে কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ? অভিনেত্রীর মৃত্যু নিয়ে রটনা নাকি ক্যানসার নিয়ে সচেতনতার প্রবণতা ৷ সার্ভাইকাল ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে পুনম পাণ্ডের মিথ্যে মৃত্যুর খবর সামনে আসতেই এর গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ৷ এই বিষয়ে ইটিভি ভারতের তরফে কথা বলা হয় ফ্যাক্ট-চেকিং এক্সপার্ট মুরলিকৃষ্ণান চিন্নাদুরাইয়ের সঙ্গে ৷

ইটিভি ভারত: একজন ফ্যাক্ট-চেকার হিসাবে সোশাল মিডিয়ায় পুনম পাণ্ডের মিথ্যে মৃত্যুর ঘটনাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

চিন্নাদুরাই: প্রথমত এই খবরটা ছিল তাঁর ব্যক্তিগত ইনস্টাগ্রাম পেজে ৷ এই সংক্রান্ত খবর আর কোথাও কিন্তু ছিল না ৷ এমনকী, কোনও মেডিক্যাল তথ্যও এর সঙ্গে দেওয়া হয়নি ৷ একজন মডেল যিনি তিনদিন আগে রেড কার্পেটে হেঁটেছেন, তিনি আচমকা সার্ভাইকাল ক্যানসারে মারা গেলেন, এই বিষয়টা এত সহজে মেনে নেওয়া যায় না ৷ তাও যেহেতু খবরটি মডেলের ব্যক্তিগত ইনস্টা হ্যান্ডেলে প্রকাশিত হয়েছে, তাই সকলেই এই ঘটনাকে নিয়ে খবর করেন ৷ আর প্রশ্নটা এখানেই ৷ কোনওভাবেই এই খবরের সত্যতা যাচাই করা হয়নি ৷ কোনও তথ্য বা প্রমাণ চেক করা হয়নি ৷ তাঁর মৃ্ত্যুর খবরে কোনও মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখা হয়নি, এমনকী তাঁর দেহ কোথায় রাখা হয়েছে, তা নিয়েও কোনও প্রশ্ন ওঠেনি ৷ এটাই সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় ৷

ইটিভি ভারত: তাহলে এই মিথ্যে খবরের ফ্যাক্ট-চেক করতে এত সময় লাগল কেন?

চিন্নাদুরাই: আসলে ফেক ইনস্টাগ্রাম পোস্টে 2 ফেব্রুয়ারি সকালে পুনম পাণ্ডের মৃ্ত্যুর খবর সামনে আনা হয়েছিল ৷ কিন্তু তাঁর মৃ্ত্যুর খবর নিয়ে পরিবারের কোনও সদস্যের প্রতিক্রিয়া আসেনি ৷ পাশাপাশি অভিনেত্রীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টাও করা হয়নি ৷ এমনকী তাঁর বন্ধু মুনাওয়ার ফারুকিও এই ঘটনা শুনে নিজের সোশাল পেজে দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন ৷ বিকেল 4টে পর্যন্ত মৃত্যু নিয়ে কোনওরকম তথ্যপ্রমাণ সামনে আসেনি ৷ এরপর একটি ন্যাশনাল নিউজ চ্যানেলে মুম্বইয়ের একজন ফ্যাক্ট-চেকার এই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ৷ তিনি পুনমের সঙ্গে পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ঘটনার সত্যতা জানার জন্য ৷ কিন্তু কোনওভাবেই সঠিক তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিল না পুনমের মৃত্যু নিয়ে ৷ এই ধরনের ফেক খবরকে 'পোস্ট ট্রুথ' বলা হয় ৷ এর মানে যতক্ষণ না সেই ব্যক্তি বা তাঁর পরিবারের সদস্যরা এই নিয়ে কোনও রকম মুখ খুলছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না ৷

ইটিভি ভারত: পুনম পাণ্ডে দাবি করেছেন, তিনি তাঁর মিথ্যে মৃত্যুর খবর রটিয়েছেন সার্ভিক্যাল ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য ৷ এটাকে পজিটিভ দিক থেকে দেখা যাবে না কেন?

চিন্নাদুরাই: এটাকে কোনওভাবেই পজিটিভভাবে দেখা যাবে না ৷ উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, এই ট্যাকটিকস ফান্ডামেন্টালি ত্রুটিপূর্ণ ৷ কারণ এই ধরনের ঘটনা যখনই ছড়িয়ে পড়ছে তখনই যাঁরা এই রোগে আক্রান্ত তাঁদের মধ্যে বাঁচার আশা কমে যেতে পারে ৷ যদি সত্যিই সচেতনতা বাড়াতে হয়, তাহলে সত্যের পথ গ্রহণ করা উচিত ৷ মৃত্যুর মতো ঘটনাকে সামনে আনায় তা খারাপ প্রভাব ব্যক্ত করে ৷

ইটিভি ভারত: গুজব এবং অপপ্রচার ৷ এই দু'টোর মধ্যে তফাৎ কী? কোথায় রয়ে যাচ্ছে সূক্ষ্ম পার্থক্য?

চিন্নাদুরাই: আসলে গুজব হল মিথ্যা খবর ছড়ানো, যা একজন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে করছেন ৷ আর বিভ্রান্তিমূলক প্রচারাভিযান হল এমন এক পদ্ধতি যা বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও প্রচারের জন্য পরিকাঠামো তৈরি করে ৷ পুনম পাণ্ডের এই ঘটনা অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রাম পেজে আসতে তা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে ৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই খবর নানাভাবে প্রভাবিত করেছে সকলকে ৷

সংবাদমাধ্যম বাধ্য হয়েছে মিথ্যে এই খবরকে সত্যি বলে প্রকাশ করতে ৷ সোশাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সাধারণ মানুষকে দেখা গিয়েছে হ্যাশট্যাগ পুনম পাণ্ডে ডেথ লিখে দুঃখপ্রকাশ করতে ৷ এটা কখনও হতে পারে না, একাধিক ব্যক্তি একই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে নিজেদের শোকপ্রকাশ করছেন ৷ এটা পুরোটাই হয়েছে পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে ৷ টেকনিক্যালি ও পিআর টিমের সাহায্য নিয়ে মিথ্যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে ৷ এমনকী, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে পুনমকে নিয়ে একাধিক টুইট সোশাল মিডিয়ায় লক্ষ্য করা গিয়েছে ৷ ফলে এই ধরনের ঘটনাকে মারাত্মক অপরাধের সঙ্গে তুলনা করা যায় ৷ শুধু তাই নয়, পুনম পাণ্ডে ও তাঁর টিমের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া উচিত ৷

ইটিভি ভারত: যদি উদ্দেশ্য সঠিক হয় তাহলে অপরাধমূলক পদক্ষেপ কী সঠিক হবে? আমরা কি অপপ্রচার রুখতে পারি না?

চিন্নাদুরাই: গুজব এড়িয়ে চলা সঠিক পদক্ষেপ হতে পারে ৷ কিন্তু এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে এমনটা বলা যায় না ৷ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম সম্প্রতি 2024 সালের গ্লোবাল রিস্ক রিপোর্ট প্রকাশ্যে এনেছে ৷ এই রিপোর্টে মিথ্যে খবর ও অপপ্রচার আলোচনার মূল বিষয় হিসাবে উঠে এসেছে ৷ বিশ্বব্যাপী 50 শতাংশের বেশি দেশে যার মধ্যে ভারত ও আমেরিকাও রয়েছে, সেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে চলতি বছর ৷ এর ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি ডিপফেক টেকনোলজি ও মিথ্যে খবর এই সময় দাঁড়িয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ৷ সেই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভারত ৷ আমরা যদি পুনম পাণ্ডের ঘটনাকে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরি তাহলে দেখা যাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য নানা রকম অপপ্রচারকে হাতিয়ার করে নিচ্ছে ৷ যা জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারে ৷ তাই পুনম পাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত হবে ৷ না হলে, এই ঘটনা গণতন্ত্রের দর্শনের পরিপন্থী হয়ে উঠবে ৷

ইটিভি ভারত: সামনেই নির্বাচন ৷ কীভাবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এই ধরনের ফেক নিউজকে চিহ্নিত করতে পারবে?

চিন্নাদুরাই: প্রত্যেক সংবাদমাধ্যমের উচিৎ যেখান থেকে খবর সংগ্রহ করা হচ্ছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার সত্যতা যাচাই করে নেওয়া ৷ খবর ছাপার আগে, তার সোর্স কোথা থেকে এসেছে সেটা অবশ্যই জানা উচিত ৷ ইন্টানেটে যে ধরনের খবর আসছে, তা নেটিজেনদের বিশ্বাস করা সবসময় উচিত নয় ৷ সেটা বিশ্বাস করার আগে বা শেয়ার করার আগে বারবার চেক করে নেওয়া উচিত ৷ কোনও রকম হিংসা ছড়ায় বা অপপ্রচার করে এমন ঘটনার সত্যতা না জেনে সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা উচিত নয় ৷ যদি আমরা ছোট ছোট বিষয় গুলোকে মাথায় রাখি, তাহলে আমরা নিজেদের এবং আমাদের সমাজকে গুজব-অপপ্রচার থেকে রক্ষা করতে পারব ৷

অর্থাৎ পুনম পাণ্ডের ঘটনা আরও একবার সকলকে মনে করিয়ে দিল, দিনের শেষে সোশাল মিডিয়া সবসময় বন্ধু নয়; সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে উঠতে পারে ৷ তাই সাবধান থাকা ও সাবধান রাখা ভীষণভাবে জরুরী ৷

আরও পড়ুন:

1. মৃত্যুর খবর রটিয়ে ক্যানসার সচেতনতার প্রচার, পুনমকাণ্ডে পুলিশের দ্বারস্থ সিনে অ্যাসোসিয়েশন

2. বেঁচে আছি...! 24 ঘণ্টার টানটান নাটকে যবনিকা পতন পুনমের

3. মৃ্ত্য়ুর খবর রটিয়ে 'পাবলিসিটি স্টান্ট', কটাক্ষের শিকার পুনমের পাশে রামগোপাল

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.