জম্মু, 26 জুন: সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের আসল অর্থ কী, তা নিজেদের পদক্ষেপের মাধ্যমে সারা বিশ্বকে বুঝিয়ে দিয়েছে ভারত ৷ সোমবার এই বার্তা দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ৷ একই সঙ্গে তিনি আরও জানিয়েছেন, ভারত আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে ৷ প্রয়োজন হলে সীমান্তের এপার হোক বা ওপার, জঙ্গি নেটওয়ার্কগুলিতে আঘাত করতে সক্ষম ভারত ৷
এ দিন জম্মু বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কনক্লেভে অংশ নেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ৷ সেখানেই তিনি এই মন্তব্য করেন ৷ তিনি বলেন, "পুলওয়ামা ও উরি, দু’টোই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ছিল... প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদি) একটি সিদ্ধান্ত নিতে (সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করার বিষয়ে) মাত্র 10 মিনিট সময় নিয়েছিলেন, যা তাঁর দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির পরিচয় দেয় । আমাদের বাহিনী কেবল এবারে জঙ্গিদের নিকেশ করেনি ৷ বরং সীমান্তের ওপারেও গিয়েছিল তাদের শেষ করতে ৷’’
প্রায় 40 মিনিট সেখানে ভাষণ দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ৷ সেখানে তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একাধিক বিষয়ে কথা বলেন ৷ জঙ্গি সংগঠনগুলিকে নির্মূল করতে সব দেশই বদ্ধপরিকর বলে তিনি জানান ৷ পাশাপাশি কটাক্ষ করেন পাকিস্তানকে ৷ তাঁর কথায়, কাশ্মীরে উত্তেজনা ছড়ানোর জন্য ইন্ধন জোগানো বন্ধ করে পাকিস্তানকে নিজেদের ঘর আগে সামলানো উচিত ৷
2016 সালের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বা 2019 সালের বালাকোটে এয়ার স্ট্রাইক নিয়ে রাজনাথ সিং বলেন, “ভারত আগের মতো নেই । এটি আরও শক্তিশালী হচ্ছে । প্রয়োজনে ভারত এপারে আঘাত করতে পারে । সীমান্ত ও সীমান্তের ওপারেও যেতে পারে ।"
আরও পড়ুন: চিনকে আটকাতে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজুবত করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ওই কনক্লেভ থেকে আগের ইউপিএ সরকারকেও তিনি নিশানা করেন ৷ তাঁর দাবি, পাকিস্তান হাজার হাজার নিরপরাধকে হত্যা করেছে ৷ দেশকে রক্তাক্ত করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে ৷ তার পরও পাকিস্তান মদত দেওয়া সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে ।
তাঁর আরও দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে এনডিএ সরকার পরিস্থিতি বদলেছে ৷ সবদিক থেকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ৷ যা বিশ্বের কাছে বার্তা দিয়েছে ৷ তার প্রভাব প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক মার্কিন সফরে দেখা গিয়েছে ৷ সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও প্রধানমন্ত্রী মোদি যে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন, সেই প্রসঙ্গও তোলেন রাজনাথ সিং ৷
তিনি বলেন, “এই যৌথ বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে রাষ্ট্রসংঘের তালিকাভুক্ত জঙ্গি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে সমন্বিত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যার মধ্যে রয়েছে লস্কর-ই-তইবা, জইশ-ই-মহম্মদ ও হিজবুল মুজাহিদিন । এই যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে পাকিস্তানকে তার ভূখণ্ডে সংঘটিত প্রতিটি জঙ্গি কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে এবং এর জন্য তার ভূমি ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত নয় ।’’
আরও পড়ুন: আগে কেউ শুনত না, এখন বিশ্ব গুরুত্ব দিয়ে শোনে ভারতের কথা; সেনা দিবসে দাবি রাজনাথের
এই যৌথ বিবৃতি দেখে পাকিস্তানের শাসকরা স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ হবেন, এমনটাই মনে করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ৷ তাই তিনি বলেছেন, ‘‘ভারত কাশ্মীর থেকে বিশ্বের মনোযোগ সরিয়ে নিচ্ছে বলে এক বিবৃতি দেওয়া হয়েছে । আমি পাকিস্তান সরকারকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে কাশ্মীরকে ‘তোতাপাখি’ করে কিছুই অর্জন করা যাবে না । বদলে আপনার ঘরের যত্ন নিন ৷’’
পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে এ দিন রাজনাথ সিং বলেন, ‘‘ভারতের সংসদে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব পাস হয়েছে যে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর শুধুমাত্র ভারতের অংশ । এই নিয়ে একাধিক প্রস্তাব সংসদে পাস হয়েছে ৷ জম্মু ও কাশ্মীরের উন্নত পরিস্থিতি এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে জনগণের প্রতি নিপীড়ন ও অবিচারের পরিপ্রেক্ষিতে, সেই দিন দূরে নেই, যেদিন সেখানকার জনগণ দাবি করবে যে তারা জম্মু ও কাশ্মীরের অংশ হতে চায় ।
আরও পড়ুন: ভারত আগবাড়িয়ে যুদ্ধ করে না, পরোক্ষে চিনকে বার্তা রাজনাথের