গলসি, 15 অগস্ট:নিরিবিলি একটা আশ্রম । কোথাও কেউ নেই । আশ্রমের মধ্যে থাকা দুটো মাটির বাড়িরও অবস্থা খারাপ । বাড়ির দরজা ভাঙা । আশ্রমের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে খড়ি নদী । ঠিক যেন ভুতুড়ে পরিবেশ । বর্ধমানের গলসি - 2 ব্লকের চান্না গ্রাম । এই গ্রামেরই শেষ প্রান্তে এই চান্না আশ্রম । অথচ এই আশ্রমই একদিন হয়ে উঠেছিল বিপ্লবীদের গোপন ডেরা । সেখানে বসে দেশকে স্বাধীন করার স্বপ্ন দেখতেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, রাসবিহারী বসু, ঋষি অরবিন্দ, ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্তরা । আজ সেই আশ্রম ধ্বংসের মুখে ।
বর্ধমান থেকে খানা জংশন কিংবা কুলগোড়িয়া বাজার থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা ধরে খড়ি নদীর তীরে এই চান্না আশ্রম । জানা যায়, 1907-08 সাল নাগাদ বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে স্বামী নিরালম্ব এই চান্না আশ্রম তৈরি করেন । যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বরোদার রাজ কলেজে পড়াশোনা করার সময় কলেজের অধ্যক্ষ বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষের সংস্পর্শে আসেন । তাঁর পরামর্শে তিনি কলকাতায় ফিরে এসে অনুশীলন সমিতিতে যোগ দেন । সেখানে সত্যেন বসু, কানাইলাল দত্তের সংস্পর্শে আসেন তিনি । এরপর মানিকতলার মুরারীপুকুরে গড়ে তোলেন বোমা তৈরির কারখানা । ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল আলিপুর বোমা মামলা । মানিকতলা বোমা মামলাই আলিপুর বোমা মামলা নামে পরিচিত ।
গলসির চান্না গ্রামে আশ্রম তৈরি করে বিপ্লবী কর্মকাণ্ড চালাতে থাকেন যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় । মূলত সেই সময় রেলপথে ভালো যোগাযোগের জন্যই খানা জংশনের অদূরে আশ্রম করার কথা চিন্তাভাবনা করেন তিনি । এছাড়া পাশেই খড়ি নদী থাকায় সহজে নদী টপকে বিপ্লবীরা আত্মগোপন করতে পারতেন । আর হাঁটা পথে সেই আশ্রমে যাওয়ার সেভাবে সুযোগ না থাকায় সহজে ব্রিটিশ পুলিশ আশ্রমে পৌঁছতে পারত না । সেই সুযোগে বিপ্লবীরা সেখানে বৈঠক করতে পারতেন ।