মালদা, 31 ডিসেম্বর : 1886 সালের পয়লা জানুয়ারি । এদিনই কাশীপুর উদ্যানবাটিতে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস তাঁর অনুগামীদের বলেছিলেন, "সবার চৈতন্য হোক" । তারপর থেকে প্রতি বছর 1 জানুয়ারি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন কল্পতরু উৎসব পালন করে আসছে । এবার করোনার জেরে বেলুড় মঠ এবং দক্ষিণেশ্বর মন্দির কর্তৃপক্ষ এই বিশেষ দিনে ভক্তদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে । তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম মালদা রামকৃষ্ণ মিশন ৷ সেখানে ভক্তদের মঠে প্রবেশে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ৷ তবে দু'দিনের মধ্যে সরকারিভাবে লকডাউন ঘোষণা হলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে । (Malda Ramakrishna Math and Mission will be opened for devotees on 1 January Kalpataru Day)
আজ মালদা রামকৃষ্ণ মিশনের মঠাধ্যক্ষ স্বামী ত্যাগরূপানন্দ ইটিভি ভারতকে জানান, "করোনার জন্য সরকার এখনও রাজ্যে নতুন করে লকডাউন জারি করেনি । দিল্লি, মহারাষ্ট্র কিংবা অন্ধ্রপ্রদেশে কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে । মালদা রামকৃষ্ণ মিশনে আমরা কোনও বছরই 1 জানুয়ারি কল্পতরু উৎসব সেভাবে উদযাপন করি না । যে ভক্তরা সেদিন মন্দিরে আসবেন, তাঁরা পুষ্পাঞ্জলি দিতে পারবেন । সেদিন সকালে শ্রীরামকৃষ্ণের কল্পতরু দিবসের তাৎপর্যের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে । দুপুরে ভক্তদের হাতে প্রসাদ দেওয়া হবে ।"
আরও পড়ুন : Kalpataru Utsav at Dakshineswar : কল্পতরু উৎসবে ভক্তদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে
মালদা রামকৃষ্ণ মিশনের মঠাধ্যক্ষ আরও বলেন, "শ্রীরামকৃষ্ণের সবচেয়ে প্রামাণ্য জীবনী লিখেছেন স্বামী সারদানন্দ । তিনি স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে বিদেশে বেদান্তের প্রচারও করেছেন । তাঁর বৃত্তান্তে ভক্তির আতিশয্য তুলনায় কম । কল্পতরু দিবস নিয়ে তিনি বলেছেন, বিভূতি নিয়ে প্রচারের ক্ষেত্রে শ্রীরামকৃষ্ণের কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল । সেই সময় শ্রীরামকৃষ্ণ ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন । তখন তাঁর শরীর অস্থিচর্মসার । কিন্তু সেদিন তিনি খানিকটা সুস্থ ছিলেন । বেলা প্রায় আড়াইটে নাগাদ কাশীপুরের উদ্যানবাটির দোতলা থেকে একাই নিচে নেমে পায়চারি করছিলেন । তাঁর প্রিয় শিষ্যরা সেসময় তাঁর ঘর পরিষ্কার করছিলেন । বাগানে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা শ্রীরামকৃষ্ণকে প্রণাম করতে যান । তাঁদের মধ্যে ছিলেন ঠাকুরের পূর্বপরিচিত বিখ্যাত নাট্যকার গিরীশচন্দ্র ঘোষ । তিনিও ঠাকুরের বিখ্যাত ভক্ত। গিরীশবাবু শ্রীরামকৃষ্ণকে অনেকবার অবতার বলে বিভিন্ন জায়গায় মন্তব্য করেছিলেন । ঠাকুর সেদিন তাঁকে অনুযোগের সুরে বলেন, তিনি তাঁর মধ্যে কী এমন দেখতে পান যে তাঁকে তিনি অবতার বলেন ।"
এই প্রসঙ্গে মঠাধ্যক্ষ জানান, হিন্দুধর্মে বিশ্বাস করা হয়, ধর্মে কোনও গ্লানি হলে ভগবান অবতার রূপে পৃথিবীতে অবতরণ করেন । গিরীশবাবু সেদিন ঠাকুরকে জানান, সাক্ষাৎ ব্যাস-বাল্মিকী যার ইয়ত্তা করতে পারেননি, সাধারণ গিরীশ ঘোষ হয়ে তিনি কীভাবে ঠাকুরের প্রশ্নের উত্তর দেবেন । অন্যদিন অবতার শুনে শ্রীরামকৃষ্ণ অসন্তুষ্ট হলেও সেদিন কিন্তু হননি । বরং তাঁর মধ্যে বিশেষ ভাব দেখা দেয় । তিনি ভাবমগ্ন হয়ে পড়েন । বলে ওঠেন, 'তোমাদের চৈতন্য হোক'। সেদিন যাঁরা শ্রীরামকৃষ্ণের স্পর্শ পেয়েছিলেন, তাঁরা নিজেদের ইষ্টদেবতার দর্শন পান । এঁদের মধ্যে ছিলেন ঠাকুরের অন্যতম ভক্ত রামচন্দ্র দত্তও । সেদিন এনিয়ে আনন্দের রোল পড়ে যায় । ভবিষ্যতে সেই দিনটি বড় উৎসবের দিন হয়ে ওঠে । প্রচুর মানুষ বিশেষ এই দিনটিতে কাশীপুর উদ্যানবাটি, বেলুড় মঠ এবং দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে ভিড় করেন ৷ কল্পতরু কথাটি এসেছে পুরাণ থেকে । স্বর্গে নাকি এমন একটি বৃক্ষ ছিল, যার নিচে বসে মানুষ যা চাইত, তাই নাকি পেত । সেদিন শ্রীরামকৃষ্ণও সবাইকে অভয় দান করেছিলেন । মানুষকে কল্যাণকর সব কিছু দিয়েছিলেন ।
আরও পড়ুন : Belur Math Update : বছরের শুরুতেই 4 দিনের জন্য বন্ধ বেলুড় মঠ