হুগলি, 12 ফেব্রুয়ারি:703 বছর পর আবারও কুম্ভ মেলার আয়োজন ত্রিবেণীতে (Triveni Kumbh Mela)। গঙ্গার তিন নদী মিলনস্থল হুগলির (Hooghly News) বাঁশবেড়িয়ার ত্রিবেণীতে । এখানেই এলাহাবাদের পর গঙ্গা যমুনা সরস্বতী নদী মিলিত হচ্ছে । তাই হিন্দু শাস্ত্রে-এর গুরুত্ব অপরিসীম ৷ অতীতে এখানেই মাঘী সংক্রান্তিতে কুম্ভ স্নান ও মেলা হত । নানা ইতিহাস খুঁজে মহানির্মাণী আখড়ার সাধু-সন্তরা কুম্ভের সন্ধান পেয়েছেন । তারই জন্য সেজে উঠছে ত্রিবেণী । সেই কারণে প্রশাসনিক তৎপরতাও শুরু হয়েছে ।
ত্রিবেণী কুম্ভের ইতিহাস: বহু বছর আগে বিদেশিদের আক্রমণের কারণে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় হিন্দুদের এই কুম্ভস্নান । বাংলায় পৌষ সংক্রান্তিতে যেমন গঙ্গা সাগরমেলা হয়, তেমনই ত্রিবেণীতে মাঘ সংক্রান্তি অর্থ্যাৎ বিষুব সংক্রান্তিতে এই কুম্ভ স্নানের আয়োজন হত । বাংলা সাহিত্য ও কাব্যে এর উল্লেখ রয়েছে ৷
1979 সালে এক বিদেশি এলান মরিনিসের (Alan Morinis ) অক্সফোর্ডে জমা দেওয়া এক তথ্য থেকে এই কুম্ভের কথা জানা যায় । তাই ত্রিবেণী কুম্ভ পরিচালনা সমিতি, সাধু সন্তরা ও বাঁশবেড়িয়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন এই ধার্মিক অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার আয়োজন করছে । 12 ফ্রেব্রুরারি থেকে 14 ফ্রেব্রুরারি পর্যন্ত চলবে এই কুম্ভমেলা । 13 ফ্রেব্রুরারি হবে কুম্ভস্নান (Kumbh Holy Bath)।
তৎপর হুগলি প্রশাসন: প্রথমে সপ্তর্ষি ঘাটে সাধুরা স্নান করবেন । পরে বাকি অন্যান্য ঘাট সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে । হুগলি পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাবতীয় ব্যবস্থা করা হচ্ছে । ত্রিবেণী শিবপুর মাঠে বিশাল যজ্ঞের আয়োজন করা হবে । ত্রিবেণী গঙ্গার কাছেই বহু নাগা সন্ন্যাসী ও সাধুরা তাঁদের আখড়া করেছেন । স্তোত্ৰ পাঠ থেকে সন্ধ্যায় গঙ্গা আরতি - সবই হবে । এ বছর কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে 3 লক্ষ মানুষের সমাগম হবে । সেই অনুযায়ী সমস্ত ব্যবস্থা তৈরি ।
আরও পড়ুন:703 বছর পর ত্রিবেণীতে কুম্ভমেলা, সেজে উঠছে মুক্তবেণী
'হারানো সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা': মহামণ্ডলেশ্বর পরমহংস স্বামী পরমাত্মানন্দজি মহারাজ শনিবার মাহেশ জগন্নাথ মন্দিরে আসেন । সেখানে এক ধর্মসভা থেকেই সমস্ত মানুষকে আহ্বান জানান তিনি । তিনি বলেন, "703 বছর পর এই কুম্ভস্নান ও মেলার আয়োজন করা হয়েছে । এই কুম্ভ বাঙালির পুনরুদ্ধারের চেষ্টা । আশা করছি, বহু মানুষ আসবেন । প্রভুর আশীর্বাদ নিতে মাহেশ হয়েই ত্রিবেণী তীর্থে পৌঁছতে হবে । হারানো সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই এই চিন্তাভাবনা । বাংলা ও বাঙালির নতুন করে জাগরণ ঘটুক এটাই প্রভুর কাছে আবেদন আমাদের ।"
সোমবার সকাল 9টা থেকে শাহি স্নান: স্বামী শিবাজিনন্দ গিরি যোগী লাল বাবা নামে এক সাধু বলেন, "তিনদিন এই মেলা চলবে । প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, একমাস মেলা চালানো হোক। বিভিন্ন ভক্তরা ভক্তি ও মোক্ষলাভের জন্য গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী মায়ের এই ত্রিবেণী সঙ্গমে স্নান করবেন । 13 তারিখে সকাল 9টা থেকে শাহি স্নান আরম্ভ হয়ে যাবে । হাজার হাজার সাধু সন্ত এক যোগে স্নান করবেন ।"
কুম্ভ মেলা নিয়ে বিশেষ বৈঠক: বাঁশবেড়িয়া পৌরসভার চেয়ারম্যান আদিত্য নিয়োগী বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেচ, দমকল, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর ও পুলিশকে নিয়ে আলোচনা করা হয় এই কুম্ভমেলা নিয়ে ৷ মহাস্নানের জন্য স্বেচ্ছাসেবক , বিপর্যয় মোকাবিলা দল ও পুলিশ মোতায়েন থাকবে, যাতে কোনও অঘটন না ঘটে ।
পৌরসভার পক্ষ থেকে আলো দেওয়া হয়েছে । মানুষের অসুবিধা যাতে না হয় সে জন্য বায়ো টয়লেট থাকছে । ক্লাব, প্রতিষ্ঠান-সহ নানা জায়গায় সাধুদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে । সাধু ও নাগা সন্ন্যাসীরা ইতিমধ্যেই আসতে শুরু করেছেন । মগরা, ব্যান্ডেল, ত্রিবেণী, হুগলি ঘাট-সহ পাঁচটি স্টেশনকে রেল পুলিশের কাছে সহযোগিতার আবেদন জানানো হয়েছে । এই কুম্ভ যাতে সুষ্ঠ ভাবে হয়, তার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে ।