ETV Bharat / state

তিস্তার বন্যায় ভেসে গিয়েছে পাখিদের খাবার, পরিযায়ীরা না আসায় ধুঁকছে গাজোলডোবা

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 5, 2024, 5:45 PM IST

Migrant Birds Gajoldoba: বিগত বছরগুলির তুলনায় এবার গাজলডোবায় আগত পরিযায়ী পাখির সংখ্যা অনেকটা কম ৷ শীত প্রায় শেষের পথে ৷ এখনও তেমনভাবে দেখা মিলছে না পরিযায়ী পাখিদের ৷ এর জন্য তিস্তার বন্যাকেই দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা ৷

Etv Bharat
পরিযায়ীরা না আসায় ধুঁকছে গাজোলডোবা
এবার শীতে গাজলডোবায় অচেনা পরিস্থিতি

জলপাইগুড়ি, 5 ফেব্রুয়ারি: শীতকালে পরিযায়ী বিদেশী পাখিরাই জীবন জীবিকা বদলে দিত গাজোলডোবার নৌকা চালক ও মৎস্যজীবীদের । কিন্তু এবার পাখির দেখা নেই । সিকিমের লোনক লেক ভেঙে তিস্তা নদীতে হড়পা বান ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে প্রচুর মাছ , শ্যাওলা, প্ল্যাংকটন থেকে ছোট পোকামাকড় । ফলে পরিযায়ী পাখিরা তিস্তা নদী থেকে যে খাবার সংগ্রহ করত তার অভাব দেখা দিয়েছে ৷ তার জেরেই কমে গিয়েছে বিদেশী পাখিদের আনাগোনা ৷ এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ৷ বিগত 30 বছরে এই প্রথম গাজোলডোবায় পাখি কম এল ।

গাজোলডোবায় পরিযায়ী পাখি দেখতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পক্ষীপ্রেমীরা এসে থাকেন । শুধু তাই নয়, বার্ড ওয়াচাররা শীতকালে গাজোলডোবাকে বেছে নেন ছবি তোলার জন্য । পর্যটক ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় বার্ড ওয়াচারদের তিস্তা নদীর বুকে পাখি দেখিয়ে বা পাখির ছবি তুলিয়ে একটা ভালো রোজগার করে থাকেন এখানকার নৌকা চালকরা ।গাজোলডোবায় এমন 22 জন নৌকাচালক রয়েছেন । যাদের মূলত রুটিরুজি এই পাখিদের নিয়েই । কিন্তু পাখি না আসায় এবার আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তাঁরা । বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গতবছর গাজোলডোবায় পাখি এসেছিল প্রায় 9 হাজার । কিন্তু এবার তার অর্ধেকও আসেনি । মাত্র 3 থেকে 4 হাজার পরিযায়ী পাখি এসেছে গাজোলডোবায় ।

এই বিষয়ে প্রাক্তন ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন তথা জলপাইগুড়ি সায়েন্স অ্যান্ড নেচার ক্লাবের সম্পাদক ও কালিম্পং কলেজের জুওলজি অধ্যাপক ডঃ রাজা রাউত জানান, প্রতিবছর এই সময়ে প্রচুর পাখি আসে । যার ছবি তুলতে এবং দেখতে প্রচুর মানুষ ভিড় করে । গত বছর 4 অক্টোবর তিস্তা নদীতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে বিপর্যস্ত হয় । সিকিমের লোনক ভেঙে হড়পা বানে তিস্তায় বন্যা হয়েছিল । সিকিম থেকে নেমে আসা তিস্তা নদীর সমতলে এর প্রভাব পড়ে । সেই সময় গাজলডোবা এলাকাতেও তিস্তা উপচে পড়ে । তিস্তা নদীতে ভেসে আসা বালি-পাথর-সহ নানান জিনিস । শুধু তাই নয়, তিস্তার বন্যা ভাসিয়ে নিয়ে যায় প্রচুর মাছ , শ্যাওলা, প্ল্যাংকটন থেকে ছোট পোকামাকড় । যার ফলে খাদ্যশূন্য হয়ে পড়েছে তিস্তা নদীর গাজলডোবার বিস্তীর্ণ জলাশয় ।

গাজোলডোবার নৌকাচালক রবি মালো জানান, এই বছর গাজোলডোবায় পাখি নেই বললেই চলে । প্রতি বছর শীতের সময়ে 80-84 প্রজাতির পরিযায়ী পাখি এসে থাকে । এবার পাখির সংখ্যা খুবই কম । পাখিরা এলেও তিস্তা নদীর গাজোলডোবায় আসেনি । তিস্তার বুকে বেশ কিছু জলাশয় আছে ৷ সেখানেই পাখিরা শীতের সময় আস্তানা গাড়ে । কিন্তু এবার জলাশয়ে পলি মাটি, বালি পাথর ভরে যাওয়ায় পাখিদের খাবারের একটা বড় প্রভাব পড়েছে । পাখি এলেও অন্য কোথাও আস্তানা গেড়েছে হয়তো । পাখির খাবার জলে ভেসে গিয়েছে, নষ্ট হয়ে গিয়েছে । তাই বোধহয় ওরা আর এদিকে আসেনি এবার ৷

জানা গিয়েছে, প্রতিবছর গাজোলডোবায় তিস্তা ব্যারেজে বিদেশী পাখিদের সমাগম হয় । শীতকালে তিনমাস পাখি থাকে গাজোলডোবায় । বিশেষ করে সাইবেরিয়া, ইউরোপ মহাদেশ থেকে প্রচুর পাখি এসে থাকে । যার মধ্যে অন্যতম রেড ওয়াটেড ল্যাপউয়িং (Red watted Lapwing), রিভার ল্যাপউয়িং (River lapwing), নর্দার্ন ল্যাপউয়িং (Northern Lapwing), রুবি শেলডাক (Rudy Shelduck), ক্রেসটেড গ্রিব (Crested grebe), ব্ল্যাক হেডেড গাল (Black headed gull), মালার্ড (Mallard), কমন শেলডাক, (Common Shelduck), ফ্যালকেটেড ডাক (Falcated Duck), কমন টিল (Common Teal), রেড ক্রেসডেট পোচার্ড (Red crested Poachard), কটন পিগমি গুজ (Cotton Pygmy Goose), বার হেডেড গুজ (Bar Headed Goose) ৷ এই সকল পাখি এসে থাকে তিস্তা ব্যারেজের গাজোলডোবায় ।

আরও পড়ুন :

  1. শীত পড়তেই গঙ্গাসাগরে পরিযায়ী পাখিদের ঢল, মুড়িগঙ্গায় ভেসেলকে পথ দেখায় সাইবেরিয়ার অতিথিরা
  2. দেখা নেই কৃষক-বন্ধু নীলকণ্ঠ পাখির, চাষের জমিতে পোকার দাপটে চিন্তায় চাষিরা
  3. গাজলডোবার মৎস্যজীবীদের রুটি-রুজি বদলে দিয়েছে পরিযায়ী পাখিরা

এবার শীতে গাজলডোবায় অচেনা পরিস্থিতি

জলপাইগুড়ি, 5 ফেব্রুয়ারি: শীতকালে পরিযায়ী বিদেশী পাখিরাই জীবন জীবিকা বদলে দিত গাজোলডোবার নৌকা চালক ও মৎস্যজীবীদের । কিন্তু এবার পাখির দেখা নেই । সিকিমের লোনক লেক ভেঙে তিস্তা নদীতে হড়পা বান ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে প্রচুর মাছ , শ্যাওলা, প্ল্যাংকটন থেকে ছোট পোকামাকড় । ফলে পরিযায়ী পাখিরা তিস্তা নদী থেকে যে খাবার সংগ্রহ করত তার অভাব দেখা দিয়েছে ৷ তার জেরেই কমে গিয়েছে বিদেশী পাখিদের আনাগোনা ৷ এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ৷ বিগত 30 বছরে এই প্রথম গাজোলডোবায় পাখি কম এল ।

গাজোলডোবায় পরিযায়ী পাখি দেখতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পক্ষীপ্রেমীরা এসে থাকেন । শুধু তাই নয়, বার্ড ওয়াচাররা শীতকালে গাজোলডোবাকে বেছে নেন ছবি তোলার জন্য । পর্যটক ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় বার্ড ওয়াচারদের তিস্তা নদীর বুকে পাখি দেখিয়ে বা পাখির ছবি তুলিয়ে একটা ভালো রোজগার করে থাকেন এখানকার নৌকা চালকরা ।গাজোলডোবায় এমন 22 জন নৌকাচালক রয়েছেন । যাদের মূলত রুটিরুজি এই পাখিদের নিয়েই । কিন্তু পাখি না আসায় এবার আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তাঁরা । বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গতবছর গাজোলডোবায় পাখি এসেছিল প্রায় 9 হাজার । কিন্তু এবার তার অর্ধেকও আসেনি । মাত্র 3 থেকে 4 হাজার পরিযায়ী পাখি এসেছে গাজোলডোবায় ।

এই বিষয়ে প্রাক্তন ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন তথা জলপাইগুড়ি সায়েন্স অ্যান্ড নেচার ক্লাবের সম্পাদক ও কালিম্পং কলেজের জুওলজি অধ্যাপক ডঃ রাজা রাউত জানান, প্রতিবছর এই সময়ে প্রচুর পাখি আসে । যার ছবি তুলতে এবং দেখতে প্রচুর মানুষ ভিড় করে । গত বছর 4 অক্টোবর তিস্তা নদীতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে বিপর্যস্ত হয় । সিকিমের লোনক ভেঙে হড়পা বানে তিস্তায় বন্যা হয়েছিল । সিকিম থেকে নেমে আসা তিস্তা নদীর সমতলে এর প্রভাব পড়ে । সেই সময় গাজলডোবা এলাকাতেও তিস্তা উপচে পড়ে । তিস্তা নদীতে ভেসে আসা বালি-পাথর-সহ নানান জিনিস । শুধু তাই নয়, তিস্তার বন্যা ভাসিয়ে নিয়ে যায় প্রচুর মাছ , শ্যাওলা, প্ল্যাংকটন থেকে ছোট পোকামাকড় । যার ফলে খাদ্যশূন্য হয়ে পড়েছে তিস্তা নদীর গাজলডোবার বিস্তীর্ণ জলাশয় ।

গাজোলডোবার নৌকাচালক রবি মালো জানান, এই বছর গাজোলডোবায় পাখি নেই বললেই চলে । প্রতি বছর শীতের সময়ে 80-84 প্রজাতির পরিযায়ী পাখি এসে থাকে । এবার পাখির সংখ্যা খুবই কম । পাখিরা এলেও তিস্তা নদীর গাজোলডোবায় আসেনি । তিস্তার বুকে বেশ কিছু জলাশয় আছে ৷ সেখানেই পাখিরা শীতের সময় আস্তানা গাড়ে । কিন্তু এবার জলাশয়ে পলি মাটি, বালি পাথর ভরে যাওয়ায় পাখিদের খাবারের একটা বড় প্রভাব পড়েছে । পাখি এলেও অন্য কোথাও আস্তানা গেড়েছে হয়তো । পাখির খাবার জলে ভেসে গিয়েছে, নষ্ট হয়ে গিয়েছে । তাই বোধহয় ওরা আর এদিকে আসেনি এবার ৷

জানা গিয়েছে, প্রতিবছর গাজোলডোবায় তিস্তা ব্যারেজে বিদেশী পাখিদের সমাগম হয় । শীতকালে তিনমাস পাখি থাকে গাজোলডোবায় । বিশেষ করে সাইবেরিয়া, ইউরোপ মহাদেশ থেকে প্রচুর পাখি এসে থাকে । যার মধ্যে অন্যতম রেড ওয়াটেড ল্যাপউয়িং (Red watted Lapwing), রিভার ল্যাপউয়িং (River lapwing), নর্দার্ন ল্যাপউয়িং (Northern Lapwing), রুবি শেলডাক (Rudy Shelduck), ক্রেসটেড গ্রিব (Crested grebe), ব্ল্যাক হেডেড গাল (Black headed gull), মালার্ড (Mallard), কমন শেলডাক, (Common Shelduck), ফ্যালকেটেড ডাক (Falcated Duck), কমন টিল (Common Teal), রেড ক্রেসডেট পোচার্ড (Red crested Poachard), কটন পিগমি গুজ (Cotton Pygmy Goose), বার হেডেড গুজ (Bar Headed Goose) ৷ এই সকল পাখি এসে থাকে তিস্তা ব্যারেজের গাজোলডোবায় ।

আরও পড়ুন :

  1. শীত পড়তেই গঙ্গাসাগরে পরিযায়ী পাখিদের ঢল, মুড়িগঙ্গায় ভেসেলকে পথ দেখায় সাইবেরিয়ার অতিথিরা
  2. দেখা নেই কৃষক-বন্ধু নীলকণ্ঠ পাখির, চাষের জমিতে পোকার দাপটে চিন্তায় চাষিরা
  3. গাজলডোবার মৎস্যজীবীদের রুটি-রুজি বদলে দিয়েছে পরিযায়ী পাখিরা
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.