কলকাতা, 1 মে: কুণাল ঘোষের উপর নেমে এল শাস্তির খাঁড়া ৷ তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে ৷ বুধবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বাংলার শাসক দলের তরফে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷
এ দিন তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে যে বিবৃতিটি পেশ করা হয়েছে, সেটিতে সই রয়েছে দলের অন্যতম জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও'ব্রায়েনের ৷ ওই বিবৃতিতে দু’টি অনুচ্ছেদ রয়েছে৷ এর মধ্যে প্রথম অনুচ্ছেদে লেখা হয়েছে, ‘‘সম্প্রতি, কুণাল ঘোষ এমন মতামত প্রকাশ করছেন, যা দলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় । এটা স্পষ্ট করা গুরুত্বপূর্ণ যে এগুলি তাঁর ব্যক্তিগত মতামত এবং দলকে এর জন্য দায়ী করা উচিত নয় । শুধুমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসের সদর দফতর থেকে জারি করা বিবৃতিকেই দলের অফিসিয়াল অবস্থান হিসেবে বিবেচনা করা উচিত ।’’
উল্লেখ্য, এ দিন সকালে উত্তর কলকাতায় একটি রক্তদান শিবিরের অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন কুণাল ঘোষ ৷ সেখানে মঞ্চে উঠে তিনি যখন বক্তৃতা শুরু করেন, সেই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা উত্তরের বিজেপি প্রার্থী তাপস রায় ৷ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া তাপস রায় সম্পর্কে প্রশংসাসূচক বক্তব্য শোনা যায় কুণালের গলায় ৷ তাপসকে জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদ হিসেবে ‘সার্টিফিকেট’ও দেন কুণাল ৷ পাশাপাশি তিনি আবেদন করেন যে উত্তর কলকাতার মানুষকে এবার প্রকৃত প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত ৷ কোনোরকম ছাপ্পা ভোট না করানোর আবেদনও তিনি করেন ৷
তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে বুধবার সকাল থেকেই সরগরম রাজ্য রাজনীতি ৷ এই নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের কী অবস্থান হয়, সেদিকেই নজর ছিল সকলের৷ বেলা গড়াতে দেখা যায় শেষপর্যন্ত কুণালের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিল তৃণমূল কংগ্রেস৷ একই সঙ্গে ওই বিবৃতির দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘‘কুণাল ঘোষকে এর আগে দলের মুখপাত্রের ভূমিকা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। এখন তাঁকে রাজ্য সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা মিডিয়াকে অনুরোধ করছি যে দলের সঙ্গে তাঁর মতামতকে এক করবেন না৷ এটা করা হলে আইনি পদক্ষেপের প্রয়োজন হতে পারে।’’
প্রসঙ্গত, মাস দুয়েক আগে কুণাল ঘোষ আচমকা কলকাতা উত্তরের সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন ৷ সেই সময় তিনি দলের মুখপাত্র ও রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে ইস্তফাও দেন ৷ তবে মুখপাত্র পদে তাঁর ইস্তফা গ্রহণ করা হলেও তাঁকে রাজ্য সাধারণ সম্পাদক পদে রেখে দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস ৷ কিন্তু সেবার তাঁকে সতর্ক করা হয় ৷ পরে তিনি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বাড়িতে চায়ের আমন্ত্রণে গিয়ে যাবতীয় বিতর্কের অবসান ঘটান ৷
তার পর তাঁকে সেভাবে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সমালোচনা করতে দেখা যায়নি ৷ এ দিনও তিনি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করেননি ৷ শুধু তাপস রায়ের প্রশংসা করেছেন ৷ তাপস রায়ের তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানকে দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করেছেন ৷ যদিও তৃণমূল কংগ্রেসও বিবৃতিতে কোথাও উল্লেখ করেনি যে তাপসের প্রশংসার জন্যই কুণালকে সরানো হল ৷
তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, সকালে কুণালের তাপস রায় সম্পর্কে প্রশংসা ও বেলায় তাঁকে পদ থেকে অপসারণ, নেহাতই কাকতালীয় হতে পারে না ৷ তৃণমূল সূত্র থেকেও জানা যাচ্ছে, এ দিন তাপস রায়ের প্রশংসা করতে গিয়ে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে তিনি যে মন্তব্য করেছেন, তা দল ভালোভাবে নেয়নি । আর সেই জায়গা থেকেই এই পদক্ষেপ ৷
তাছাড়া এই পদক্ষেপে কুণাল সম্পর্কে তাপস রায়ের মন্তব্যও ফ্যাক্টর হয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের মত ৷ কারণ, এদিন এই অনুষ্ঠানের শেষে কুণাল সম্পর্কে তাপস রায় বলেন, ‘‘আমি 52 বছর ধরে রাজনীতি করছি । কুণাল ঘোষকে আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি । ও ডাক্তার কে কে ঘোষের ছেলে । ও খুবই ভালো ছেলে । তবে অবাক হয়ে যাই ওর মহানুভবতা দেখে । বিনা কারণে দু'বছর 10 মাস জেলবন্দি থাকার পর, কিভাবে ও তৃণমূলের সঙ্গে আছে ওদের ব্যাক করছে আমি ভাবতেও পারি না ।’’
আরও পড়ুন: