ETV Bharat / opinion

ক্যানসার মজার বিষয় নয়, পুনম ! এই অসংবেদনশীল পাবলিক স্টান্ট কেন ?

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 4, 2024, 11:39 AM IST

Poonam Pandey: মরে গিয়ে পরদিন বেঁচে উঠেছেন পুনম পাণ্ডে ৷ তাঁর দাবি, তিনি সার্ভিক্যাল ক্যানসার নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে চেয়েছিলেন ৷ তাই এমন চমকে দেওয়া ৷ কিন্তু এমন মজা কুরুচিকর তো বটেই, অসংবেদনশীলও ৷ এ নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন দিল্লির প্রবীণ সাংবাদিক তৌফিক রশিদ ৷

ETV Bharat
ক্যানসার নিয়ে পুনম পাণ্ডের পাবলিক স্টান্টে স্তম্ভিত মানুষ

হায়দরাবাদ, 4 জানুয়ারি: ইদানীং আমি একটা 'সুপ্রভাত' মেসেজের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকি ৷ খুব সকালে এই মেসেজটা এলে, বুঝতে পারি তিনি ভালো আছেন ৷ আর একটু দেরিতে এলে, তার অর্থটা দিনের শুরুটা ভালো হয়নি ৷ যদি কোনও মেসেজই না আসে, তাহলে আগের রাতটা প্রচণ্ড যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে কেটেছে ৷ আমার দাদা ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছেন ৷ তাঁর পেটে এই মারণরোগ বাসা বেঁধেছে ৷ দাদার বয়স 60 বছরেরও বেশি ৷ তাঁর সঙ্গে আমাদের পরিবারের প্রত্যেক সদস্যও এই যুদ্ধে সামিল হয়েছে ৷ দাদা কাশ্মীরি, তাই প্রতিদিন সবজি গোস্ত খেতে ভালোবাসতেন ৷ এখন তাঁকে গলা খাবার দেওয়া হয় ৷ কখনও কখনও দিনটা ভালো থাকলে, তিনি এই গলা খাবারটা হজম করতে পারেন ৷

আমি এরকম বহু ক্যানসার রোগীর লড়াই দেখেছি ৷ অনেকে এই রোগকে হারিয়ে জীবনে ফিরেছেন ৷ এমনকী সেই চিকিৎসদেরও দেখেছি, যাঁরা দিন-রাত শুধু এই নিয়ে কাটিয়ে দিচ্ছেন ৷ ক্যানসার আক্রান্তের পরিবারের লোকজন যখন জানতে পারেন, মারণরোগ প্রতিরোধে নতুন প্রযুক্তি এসেছে ৷ তখন তাঁদের মুখগুলো হঠাৎ কেমন উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, তাও দেখেছি ৷

এই সব দেখতে দেখতে একদিন আমার এক পুরনো বন্ধু প্রথিতযশা ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডাঃ সমীর কৌলকে জিজ্ঞেস করলাম, চিকিৎসা বিজ্ঞানে এত কিছু উন্নতি হয়েছে ৷ তাও ক্যানসারে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে কেন ? তিনি জানালেন, চিকিৎসা পদ্ধতি আগের থেকে উন্নত হয়েছে ৷ কিন্তু মানুষ যদি সেসব জানতে পারে, তবেই তা ফলপ্রসূ হবে ৷ আর বিশেষত ভারতের মতো দেশে এই আধুনিক চিকিৎসার খরচ অনেক, যা অনেকেই বহন করতে পারবে না ৷ এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এই চিকিৎসার খরচ কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু সেটা একটা চ্যালেঞ্জ ৷ এমনকী আমেরিকার মতো দেশেও মানুষ ক্যানসার চিকিৎসার খরচ চালিয়ে যেত পারে না ৷"

তাই ক্যানসারের মতো রোগ নিয়ে মানুষ যখন মজা করে, আমরা সেটা মেনে নিতে পারি না ৷ শনিবার এমনই একটা দিন ছিল ৷ একজন মডেল এতদিন নানারকম ভুলভাল কারণে খবরের শিরোনামে ছিলেন ৷ হঠাৎ জানা গেল, ক্যানসারে তাঁর মৃত্যু হয়েছে ৷ এই খবরে আমি হতবাক ৷

খবরটা শুনে আমি ওই মডেলের ভিডিয়োগুলি দেখছিলাম ৷ আমার কেমন যেন সন্দেহ হল ৷ মনে হল, সার্ভিক্যাল ক্যানসারে মাত্র চারদিনের মাথায় কারও মৃত্যু হতে পারে না ৷ আমার এই সন্দেহ বন্ধুদেরও বললাম ৷ তবে এমন ঘটনায় আমার গুরু, যিনি আমার প্রথম বসও, তাঁর মৃত্যুর কথা মনে পড়ে গেল ৷ বেশ কয়েক বছর আগে লিউকোমিয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে ৷ তখন তাঁর বয়স মাত্র 54 ৷ প্রথম দিকেই ক্যানসার ধরা পড়েছিল ৷ কিন্তু এর কিছু পরেই তাঁর মৃত্যু হয় ৷

আমার প্রথম বসের হৃদপিণ্ডের অবস্থা ভালো ছিল না ৷ তাই ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য কার্ডিওলজিস্টের সঙ্গে আলোচনা করার দরকার ছিল ৷ এইমসের কার্ডিওলজিস্ট জানিয়েছিলেন, আমার বসের হৃদপিণ্ড খুবই দুর্বল ৷ তবে তাঁর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রবল ৷ তখন আমি কাশ্মীরে বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবছিলাম, তিনি ঠিক পারবেন ৷ এর কিছুদিন পর বসের প্রথম কেমোথেরাপি হল ৷ তার পরেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে ৷ তিনি নিজেই নিজের রক্ত জোগাড় করতে টুইটারে পোস্ট করছিলেন ৷ এরপর একদিন হঠাৎ মানুষটাই আর রইলেন না ৷ সব ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রমাণিত হল ৷ তাঁর হৃদপিণ্ড হার মানল ৷ চিকিৎসা ঠিক করে শুরু হওয়ার আগেই চলে গেলেন ৷

তাই পুনম পাণ্ডে যখন সার্ভিক্যাল ক্যানসারের সচেতনতার নামে এই মজাটা করলেন, তখন আমি ভেবেছিলাম হয়তো তাঁর ভাগ্যও আমার বসের মতোই ৷ আজও মনে মনে অনুশোচনা হয়, হয়তো আমার বসকে প্রথমেই কেমো দেওয়ার সিদ্ধান্তটা না নিলেই হত ৷ ভেবেছিলাম, আমার গুরুর মতো মিস পাণ্ডেও কেমোথেরাপি নিতে পারেননি ৷ এটাও জানতামও না যে তিনি বেঁচে থাকার জন্য কী করেন, তবে আমার দিনটা এসব ভাবতে ভাবতেই নষ্ট হল ৷ পরের দিন সকালে তিনি যখন জানালেন, সার্ভিক্যাল ক্যানসারের সচেতনতামূলক প্রচারের নামে তিনি এই কাজ করেছেন আর লিখেছেন 'আমি বেঁচে আছি', তখন আরও বড় ধাক্কা লাগল ৷

অনেকেই হয়তো বলবেন, পুনম পাণ্ডের মৃত্যুর পোস্টের পরেই সব কাগজ, পোর্টালে সার্ভিক্যাল ক্যানসার নিয়ে বিভিন্ন লেখা ছাপা হয়েছে ৷ চারদিকে সবাই এই ক্যানসার নিয়ে আলোচনা করছে ৷ হ্যাঁ, সেটা সত্যি ৷ এই ক্যানসারের কারণ, উপসর্গ এবং প্রতিরোধ নিয়ে বহু লেখালিখি হয়েছে ৷ কিন্তু তাও, আমি মনে করি, এটা সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছিল ৷ এর আগেও তিনি অনেকবার কোনও না কোনও ইস্যুতে মুখর হয়েছেন ৷ আর তাতে জনগণ তাঁকে একেবারে ধুইয়ে দিয়েছে ৷ কিন্তু এই 'মরে যাওয়া' আর তারপর 'বেঁচে ওঠা'টা একেবারে যাচ্ছেতাই ছিল ৷

মানুষের মধ্যে সচেতনতামূলক প্রচারের জন্য এরকম বাজে পাবলিক স্টান্ট দেওয়ার দরকার নেই ৷ সোশাল মিডিয়াও পৌঁছয় না, দেশের এমন কোনও এক প্রত্যন্ত প্রান্তে কোনও মহিলা যখন জানতে পারেন যে ভ্যাকসিন বা টিকা দিয়ে একে প্রতিরোধ করা সম্ভব, সেটাই আসল প্রচার ৷ সার্ভিক্যাল ক্যানসার প্রতিরোধে কোনও মেয়ে তার যৌন জীবনে প্রবেশ করার আগেই এই টিকা দেওয়া যায় ৷ দেশের প্রান্তিক ওই মহিলা যদি জানতে পারেন, মেয়েদের 15 বছর বয়স হওয়ার আগে বিশেষত 11-12 বছর বয়সে এই টিকা সবচেয়ে ভালো কাজ করে, তাহলে সেই প্রচারই সদর্থক প্রচার ৷

মানুষের জানা উচিত যে, শরীরে ছোট ছোট লক্ষণ দেখা দেয় ৷ শরীরের খুঁটিনাটি বিষয়ে সচেতন থাকাটা অবশ্য প্রয়োজন ৷ আর এই ছোট্টখাটো লক্ষণগুলো দীর্ঘস্থায়ী হলে তা এড়িয়ে যাওয়া একেবারেই উচিত নয় ৷ মানুষকে কারসিনোজেন সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে ৷ এই কারসিনোজেন রয়েছে জীবনের প্রতিটি পদে, খাবারে, পরিবেশের মধ্যে, বাতাসের মধ্যে, এমনকী জামাকাপড়েও ৷ আর সেই কারসিনোজেনের সঙ্গে আমাদের শরীরের যোগাযোগ কীভাবে হয় ৷ তা জানাতে পারলে, সেটাই হবে প্রচার ৷

পোলিওর মতো কঠিন রোগকে নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং একেবারে দূরীভূত করতে কয়েক দশক সময় লেগেছে ৷ তার জন্য কোনও সেলিব্রিটির ভুয়ো মৃত্যুর খবর ছড়ানোর দরকার হয়নি ৷ সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বাজেট বক্তৃতায় জানিয়েছেন, মেয়েদের জীবনে এই ভ্যাকসিন কতটা প্রয়োজনীয় ৷ এটা একটা সদর্থক উদ্যোগ ৷

সার্ভিক্স ইউটেরি ক্যানসার বিশ্বে তৃতীয় সবচেয়ে সাধারণ ক্যানসার ৷ কোনও একটা পাবলিক স্টান্ট দিয়ে ক্যানসার নিরাময় সম্ভব নয়, এটা মনে রাখতে হবে ৷ যাঁরা এই মারণরোগের সঙ্গে লড়ছেন, তাঁরা এবং তাঁদের পরিবার এটা ভালো করেই জানে ৷ তাই এরপর কেউ এমন চমক দেওয়ার চেষ্টা করার আগে একবার ভালো করে ভাববেন ৷ এটা শুধুমাত্র কুরুচিকরই নয়, একইসঙ্গে অসংবেদনশীল ৷

(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)

আরও পড়ুন:

  1. মৃ্ত্য়ুর খবর রটিয়ে 'পাবলিসিটি স্টান্ট', কটাক্ষের শিকার পুনমের পাশে রামগোপাল
  2. বেঁচে আছি...! 24 ঘণ্টার টানটান নাটকে যবনিকা পতন পুনমের
  3. প্রয়াত পুনম পাণ্ডে, বত্রিশেই ক্যানসার কেড়ে নিল মডেল-অভিনেত্রীর প্রাণ, শোকপ্রকাশ কঙ্গনার

হায়দরাবাদ, 4 জানুয়ারি: ইদানীং আমি একটা 'সুপ্রভাত' মেসেজের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকি ৷ খুব সকালে এই মেসেজটা এলে, বুঝতে পারি তিনি ভালো আছেন ৷ আর একটু দেরিতে এলে, তার অর্থটা দিনের শুরুটা ভালো হয়নি ৷ যদি কোনও মেসেজই না আসে, তাহলে আগের রাতটা প্রচণ্ড যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে কেটেছে ৷ আমার দাদা ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছেন ৷ তাঁর পেটে এই মারণরোগ বাসা বেঁধেছে ৷ দাদার বয়স 60 বছরেরও বেশি ৷ তাঁর সঙ্গে আমাদের পরিবারের প্রত্যেক সদস্যও এই যুদ্ধে সামিল হয়েছে ৷ দাদা কাশ্মীরি, তাই প্রতিদিন সবজি গোস্ত খেতে ভালোবাসতেন ৷ এখন তাঁকে গলা খাবার দেওয়া হয় ৷ কখনও কখনও দিনটা ভালো থাকলে, তিনি এই গলা খাবারটা হজম করতে পারেন ৷

আমি এরকম বহু ক্যানসার রোগীর লড়াই দেখেছি ৷ অনেকে এই রোগকে হারিয়ে জীবনে ফিরেছেন ৷ এমনকী সেই চিকিৎসদেরও দেখেছি, যাঁরা দিন-রাত শুধু এই নিয়ে কাটিয়ে দিচ্ছেন ৷ ক্যানসার আক্রান্তের পরিবারের লোকজন যখন জানতে পারেন, মারণরোগ প্রতিরোধে নতুন প্রযুক্তি এসেছে ৷ তখন তাঁদের মুখগুলো হঠাৎ কেমন উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, তাও দেখেছি ৷

এই সব দেখতে দেখতে একদিন আমার এক পুরনো বন্ধু প্রথিতযশা ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডাঃ সমীর কৌলকে জিজ্ঞেস করলাম, চিকিৎসা বিজ্ঞানে এত কিছু উন্নতি হয়েছে ৷ তাও ক্যানসারে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে কেন ? তিনি জানালেন, চিকিৎসা পদ্ধতি আগের থেকে উন্নত হয়েছে ৷ কিন্তু মানুষ যদি সেসব জানতে পারে, তবেই তা ফলপ্রসূ হবে ৷ আর বিশেষত ভারতের মতো দেশে এই আধুনিক চিকিৎসার খরচ অনেক, যা অনেকেই বহন করতে পারবে না ৷ এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এই চিকিৎসার খরচ কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু সেটা একটা চ্যালেঞ্জ ৷ এমনকী আমেরিকার মতো দেশেও মানুষ ক্যানসার চিকিৎসার খরচ চালিয়ে যেত পারে না ৷"

তাই ক্যানসারের মতো রোগ নিয়ে মানুষ যখন মজা করে, আমরা সেটা মেনে নিতে পারি না ৷ শনিবার এমনই একটা দিন ছিল ৷ একজন মডেল এতদিন নানারকম ভুলভাল কারণে খবরের শিরোনামে ছিলেন ৷ হঠাৎ জানা গেল, ক্যানসারে তাঁর মৃত্যু হয়েছে ৷ এই খবরে আমি হতবাক ৷

খবরটা শুনে আমি ওই মডেলের ভিডিয়োগুলি দেখছিলাম ৷ আমার কেমন যেন সন্দেহ হল ৷ মনে হল, সার্ভিক্যাল ক্যানসারে মাত্র চারদিনের মাথায় কারও মৃত্যু হতে পারে না ৷ আমার এই সন্দেহ বন্ধুদেরও বললাম ৷ তবে এমন ঘটনায় আমার গুরু, যিনি আমার প্রথম বসও, তাঁর মৃত্যুর কথা মনে পড়ে গেল ৷ বেশ কয়েক বছর আগে লিউকোমিয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে ৷ তখন তাঁর বয়স মাত্র 54 ৷ প্রথম দিকেই ক্যানসার ধরা পড়েছিল ৷ কিন্তু এর কিছু পরেই তাঁর মৃত্যু হয় ৷

আমার প্রথম বসের হৃদপিণ্ডের অবস্থা ভালো ছিল না ৷ তাই ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য কার্ডিওলজিস্টের সঙ্গে আলোচনা করার দরকার ছিল ৷ এইমসের কার্ডিওলজিস্ট জানিয়েছিলেন, আমার বসের হৃদপিণ্ড খুবই দুর্বল ৷ তবে তাঁর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রবল ৷ তখন আমি কাশ্মীরে বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবছিলাম, তিনি ঠিক পারবেন ৷ এর কিছুদিন পর বসের প্রথম কেমোথেরাপি হল ৷ তার পরেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে ৷ তিনি নিজেই নিজের রক্ত জোগাড় করতে টুইটারে পোস্ট করছিলেন ৷ এরপর একদিন হঠাৎ মানুষটাই আর রইলেন না ৷ সব ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রমাণিত হল ৷ তাঁর হৃদপিণ্ড হার মানল ৷ চিকিৎসা ঠিক করে শুরু হওয়ার আগেই চলে গেলেন ৷

তাই পুনম পাণ্ডে যখন সার্ভিক্যাল ক্যানসারের সচেতনতার নামে এই মজাটা করলেন, তখন আমি ভেবেছিলাম হয়তো তাঁর ভাগ্যও আমার বসের মতোই ৷ আজও মনে মনে অনুশোচনা হয়, হয়তো আমার বসকে প্রথমেই কেমো দেওয়ার সিদ্ধান্তটা না নিলেই হত ৷ ভেবেছিলাম, আমার গুরুর মতো মিস পাণ্ডেও কেমোথেরাপি নিতে পারেননি ৷ এটাও জানতামও না যে তিনি বেঁচে থাকার জন্য কী করেন, তবে আমার দিনটা এসব ভাবতে ভাবতেই নষ্ট হল ৷ পরের দিন সকালে তিনি যখন জানালেন, সার্ভিক্যাল ক্যানসারের সচেতনতামূলক প্রচারের নামে তিনি এই কাজ করেছেন আর লিখেছেন 'আমি বেঁচে আছি', তখন আরও বড় ধাক্কা লাগল ৷

অনেকেই হয়তো বলবেন, পুনম পাণ্ডের মৃত্যুর পোস্টের পরেই সব কাগজ, পোর্টালে সার্ভিক্যাল ক্যানসার নিয়ে বিভিন্ন লেখা ছাপা হয়েছে ৷ চারদিকে সবাই এই ক্যানসার নিয়ে আলোচনা করছে ৷ হ্যাঁ, সেটা সত্যি ৷ এই ক্যানসারের কারণ, উপসর্গ এবং প্রতিরোধ নিয়ে বহু লেখালিখি হয়েছে ৷ কিন্তু তাও, আমি মনে করি, এটা সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছিল ৷ এর আগেও তিনি অনেকবার কোনও না কোনও ইস্যুতে মুখর হয়েছেন ৷ আর তাতে জনগণ তাঁকে একেবারে ধুইয়ে দিয়েছে ৷ কিন্তু এই 'মরে যাওয়া' আর তারপর 'বেঁচে ওঠা'টা একেবারে যাচ্ছেতাই ছিল ৷

মানুষের মধ্যে সচেতনতামূলক প্রচারের জন্য এরকম বাজে পাবলিক স্টান্ট দেওয়ার দরকার নেই ৷ সোশাল মিডিয়াও পৌঁছয় না, দেশের এমন কোনও এক প্রত্যন্ত প্রান্তে কোনও মহিলা যখন জানতে পারেন যে ভ্যাকসিন বা টিকা দিয়ে একে প্রতিরোধ করা সম্ভব, সেটাই আসল প্রচার ৷ সার্ভিক্যাল ক্যানসার প্রতিরোধে কোনও মেয়ে তার যৌন জীবনে প্রবেশ করার আগেই এই টিকা দেওয়া যায় ৷ দেশের প্রান্তিক ওই মহিলা যদি জানতে পারেন, মেয়েদের 15 বছর বয়স হওয়ার আগে বিশেষত 11-12 বছর বয়সে এই টিকা সবচেয়ে ভালো কাজ করে, তাহলে সেই প্রচারই সদর্থক প্রচার ৷

মানুষের জানা উচিত যে, শরীরে ছোট ছোট লক্ষণ দেখা দেয় ৷ শরীরের খুঁটিনাটি বিষয়ে সচেতন থাকাটা অবশ্য প্রয়োজন ৷ আর এই ছোট্টখাটো লক্ষণগুলো দীর্ঘস্থায়ী হলে তা এড়িয়ে যাওয়া একেবারেই উচিত নয় ৷ মানুষকে কারসিনোজেন সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে ৷ এই কারসিনোজেন রয়েছে জীবনের প্রতিটি পদে, খাবারে, পরিবেশের মধ্যে, বাতাসের মধ্যে, এমনকী জামাকাপড়েও ৷ আর সেই কারসিনোজেনের সঙ্গে আমাদের শরীরের যোগাযোগ কীভাবে হয় ৷ তা জানাতে পারলে, সেটাই হবে প্রচার ৷

পোলিওর মতো কঠিন রোগকে নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং একেবারে দূরীভূত করতে কয়েক দশক সময় লেগেছে ৷ তার জন্য কোনও সেলিব্রিটির ভুয়ো মৃত্যুর খবর ছড়ানোর দরকার হয়নি ৷ সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বাজেট বক্তৃতায় জানিয়েছেন, মেয়েদের জীবনে এই ভ্যাকসিন কতটা প্রয়োজনীয় ৷ এটা একটা সদর্থক উদ্যোগ ৷

সার্ভিক্স ইউটেরি ক্যানসার বিশ্বে তৃতীয় সবচেয়ে সাধারণ ক্যানসার ৷ কোনও একটা পাবলিক স্টান্ট দিয়ে ক্যানসার নিরাময় সম্ভব নয়, এটা মনে রাখতে হবে ৷ যাঁরা এই মারণরোগের সঙ্গে লড়ছেন, তাঁরা এবং তাঁদের পরিবার এটা ভালো করেই জানে ৷ তাই এরপর কেউ এমন চমক দেওয়ার চেষ্টা করার আগে একবার ভালো করে ভাববেন ৷ এটা শুধুমাত্র কুরুচিকরই নয়, একইসঙ্গে অসংবেদনশীল ৷

(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)

আরও পড়ুন:

  1. মৃ্ত্য়ুর খবর রটিয়ে 'পাবলিসিটি স্টান্ট', কটাক্ষের শিকার পুনমের পাশে রামগোপাল
  2. বেঁচে আছি...! 24 ঘণ্টার টানটান নাটকে যবনিকা পতন পুনমের
  3. প্রয়াত পুনম পাণ্ডে, বত্রিশেই ক্যানসার কেড়ে নিল মডেল-অভিনেত্রীর প্রাণ, শোকপ্রকাশ কঙ্গনার
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.