ETV Bharat / opinion

2024 সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে কৃষি খাতে এই বিষয়গুলির উপর নজর থাকবে

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 27, 2024, 3:38 PM IST

Interim Union Budget 2024: লোকসভা নির্বাচনের আগে 1 ফেব্রুয়ারি পেশ হতে চলেছে অন্তর্বর্তীকালীন কেন্দ্রীয় বাজেট ৷ এবারের বাজেটে নজর থাকবে কৃষি খাতে বেশ কিছু সমস্যা সমাধানের দিকে ৷ লিখছেন পরিতলা পুরুষোত্তম ৷

Union Budget 2024
কেন্দ্রীয় বাজেট

কলকাতা, 27 জানুয়ারি: 2019 সালের অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট নজির গড়েছে ৷ এই বাজেটে প্রয়োজনীয় কিছু খাতে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৷ যেমন সরাসরি আয় সহায়তার সম্পূর্ণ নতুন প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি ঘোষণা করা হয়েছে ৷ শুধুমাত্র ঘোষণা করা হয়নি, এটি ডিসেম্বর 2018 থেকে প্রযোজ্যও করা হয়েছিল । এমনকী প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধির প্রথম কিস্তির টাকা 2019 সালের নির্বাচনের আগে বিপুল সংখ্যক জমির মালিককে বিতরণ করা হয়েছিল । আমরা এই বছরে এরকম কিছু ঘোষণা আশা করতে পারি ৷

কেন্দ্রীয় বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দর প্রত্যাশা

  • বাজেট ইকোসিস্টেম পর্যায়ে এই জিনিসগুলি করতে পারে ৷ কৃষকদের জন্য সস্তা ঋণই মূল বিষয় । প্রথমত, সরঞ্জাম, সেচ এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য বাজেটে আরও ভর্তুকিযুক্ত হারে নির্দেশিত ঋণের দিকে নজর দিতে হবে । ব্যয়যোগ্য তহবিল থেকে দীর্ঘমেয়াদি তহবিলে নজর ঘোরাতে হবে । দ্বিতীয়ত, শস্য বিমা হল কৃষি বৃদ্ধি এবং বাফার তৈরির চাবিকাঠি । বাজেটে অবশ্যই শস্য বিমা প্রকল্পের প্রসারের দিকে নজর দিতে হবে ।
  • উদ্ভাবনী খামার কৌশলগুলির দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে । গভীর সেচ ব্যবস্থা ভারতের মতো একটি জল-অপ্রতুল দেশে বিশাল পরিবর্তন আনতে পারে । এর জন্য বিশেষ করা ছাড়, কর বিরতি এবং সহজ ঋণ দিতে হবে । একইভাবে দুষ্প্রাপ্য খামার জমির সমস্যা সমাধান করলে জল সেচ এবং উল্লম্ব চাষকে উৎসাহিত করা যাবে এবং এই ক্ষেত্রে অনেক দূর এগনো যেতে পারে । বাজেট 2024-এ এই ধরনের উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে হবে ।
  • প্রি-সেল এবং পোস্ট-সেল অবকাঠামোতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ হচ্ছে না । উদাহরণস্বরূপ, মাটির গুণমান পরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণ একটি মূল ডেটা পয়েন্ট । মোবাইল সয়েল টেস্টিং ল্যাবগুলিতে বড় বরাদ্দের মাধ্যমে এক্ষেত্রে সক্ষম করা যেতে পারে । এছাড়াও অপর্যাপ্ত গুদামজাতকরণ, কোল্ড স্টোরেজ, কম বর্জ্য পরিবহন ইত্যাদি রয়েছে । যদি না তা না হয়, তবে সরবরাহ শৃঙ্খলের সীমাবদ্ধতা কৃষি বাস্তুতন্ত্রকে জর্জরিত করবে । সরকার পিপিপির মাধ্যমে গুদামজাতকরণ সুবিধা, কোল্ড স্টোরেজ, প্রাথমিক প্যাক-হাউস, রেফার ভ্যান স্থাপনকে উৎসাহিত করতে পারে । কৃষি অবকাঠামোতেও কর তুলে নেওয়া যেতে পারে ।
  • এই বাজেটে আমদানির বিকল্প একটি প্রধান বিষয় হতে হবে । ডাল, ভোজ্যতেল ও শাকসবজির ওপর এখনও অনেক বেশি আমদানি নির্ভরতা রয়েছে । অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে ভারত 2024-25 বিপণন বছরে প্রায় এক মিলিয়ন টন তুর ডাল আমদানি করবে বলে আশা করা হচ্ছে । ডাল ফসলের একর জমি হ্রাসের কারণে দেশীয় উৎপাদন কমার প্রত্যাশা থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । এখানে তুর ডালের (কান্দি পাপ্পু) সংকট বোঝা জরুরি । তুর ডাল নিয়ে ভারতের সমস্যা কম অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে রয়েছে, যার ফলে আফ্রিকান দেশগুলির উপর ভারতের প্রচুর নির্ভরতা রয়েছে ৷ মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক এবং উত্তরপ্রদেশ ভারতে তুর ডালের শীর্ষ তিনটি উৎপাদক রাজ্য ৷ এই তিনটি রাজ্যই এই বছর বৃষ্টি কম হয়েছে ৷ ফলে চাষে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ।

সরকারের তরফে প্রকাশিত তৃতীয় অগ্রিম অনুমান অনুসারে, 2022-23 সালে ভারতে তুর উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় 3.4 মিলিয়ন মেট্রিক টন (এমএমটি), যা আগের বছরের 4.2 এমএমটি উৎপাদনের তুলনায় 19 শতাংশ কম । যদিও, এটি 2019 সালের তুলনায় কিছুটা ভালো ৷ কারণ এই বছরে যউৎপাদন 3.3 এমএমটি ছিল, যা খুবই কম ৷ ভারতীয় তুর শস্য উৎপাদনের প্রবণতা 2018 সাল থেকে নিম্নমুখী গতিতে রয়েছে । চলতি খরিফ মৌসুমে ডাল চাষও কমেছে ৷ কৃষি মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, 2023 সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত 122.57 লক্ষ হেক্টরে ডাল চাষ হয়েছে, যা 2022 সালে এই একই সময়ে 128.49 লক্ষ হেক্টর ছিল ৷

তুর এমন একটি ডাল যার দাম ওঠানামা করে ৷ এই জালের দাম ওঠানামার ফলে অন্যান্য ডালের দামেও প্রভাব পড়েছে । যেহেতু ডাল ভারতীয় খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, তাই তুর ডালের কোনও উল্লেখযোগ্য মূল্য বৃদ্ধি ভারতে সামগ্রিক খাদ্যের ক্রয়ক্ষমতা এবং মুদ্রাস্ফীতির ক্ষেত্রে বিস্তৃত প্রভাব ফেলতে পারে ।

একইভাবে ভোজ্যতেলের ঘাটতি রয়েছে ভারতে ৷ যার কারণে ভারত বার্ষিক 10 বিলিয়ন ডলারের ভোজ্যতেল আমদানি করতে বাধ্য হচ্ছে । ভারত 1990 সালের প্রথম দিকে ভোজ্যতেলে নিজেদের উপরই নির্ভর ছিল । আমদানি কমাতে এবারের বাজেটে ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে ভারতের অভ্যন্তরীণ শক্তি ফিরিয়ে আনার উপর জোর দিতে হবে ।

কৃষকদের আয়ের উৎস বহুমুখী করতে উদ্বুদ্ধ করুন

  • মহামারীর পরে জৈব চাষ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে । টেকসই এলাকায় শস্য বহুমুখীকরণের জন্য বাজেটে কৃষকদের ছাড় দিতে হবে । বাজেট কৃষকদের জোরা এবং বাজরার মতো স্থিতিস্থাপক এবং পুষ্টিকর ফসলে বৈচিত্র্য আনতে উৎসাহিত করতে পারে । এটি প্যারিস চুক্তির অধীনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করবে ।
  • কম খরচের কারণে পটাসিক এবং ফসফেটিক সারের মিশ্রণের বদলে ইউরিয়ার ব্যবহার বেড়েছে ৷ এটি মাটির স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে । ফলে ইউরিয়ার উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমাতে বাজেটে অবশ্যই সরাসরি সুবিধা স্থানান্তর প্রকল্পে পরিবর্তন আনতে হবে । বাজেটে কৃষি গবেষণার ক্ষেত্রে বড় পদক্ষেপ নিতে হবে । কৃষি জিডিপির একটি বড় অংশ ৷ তবে ভারত কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নে প্রায় 0.35 শতাংশ ব্যয় করে । চিন 0.80 শতাংশ ব্যয় করে এবং এশিয়ার অন্যান্য উদীয়মান বাজার এই খাতে ভারতের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয় করে ।
  • উচ্চ কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যয়ের ইতিবাচক প্রভাব কেবল মাটির গুণমান এবং আউটপুটে নয়, কৃষি আয়েও দৃশ্যমান । একটি জিনিস যা বাজারগুলি কেন্দ্রীয় বাজেট থেকে আশা করছে তা হল খামার বিলগুলির অবস্থা সম্পর্কে আরও স্পষ্টতা, বিশেষ করে কৃষি পণ্যের বিপণনের ক্ষেত্রে । 2 বছরের দীর্ঘ কৃষক-আন্দোলন শেষ হয়েছে এবং সরকার বিলগুলি প্রত্যাহার করেছে ৷ তবে, অর্থনীতির জন্য কৃষি সংস্কার এখনও গুরুত্বপূর্ণ ৷ যেখানে দাম নির্ধারণে বড় দালালরা আধিপত্য বিস্তার করে সেখানে কৃষকদেরকে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট মন্ডিতে বেঁধে রাখার পরিবর্তে চয়েস দেওয়া দরকার । বাজেট 2024-এ এই বিষয়ে স্পষ্টতা প্রদান করা প্রয়োজন ৷ বিশেষ করে কৃষকদের একটি বিস্তৃত বিপণন চয়েস দেওয়ার দরকার ।

কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং শিল্পোদ্যোগ

উপরে উল্লিখিত পয়েন্টগুলি গুরুত্বপূর্ণ এবং কোনও না কোনও আকারে বেশিরভাগ রুটিন বাজেটের অংশ হয়েছে । বাজেট 2024 অবশ্যই কৃষিতে প্রযুক্তি এবং শিল্পোদ্যোগ ব্যবহারে একটি কোয়ান্টাম পরিবর্তনের প্রভাব ফেলবে । কীভাবে জেনে নিন ৷

  • আবহাওয়া, সর্বভারতীয় মূল্য এবং সরকারি নীতি সম্পর্কে কৃষকদের সঙ্গে বৃহত্তর তথ্য ভাগ করে নিতে হবে ৷ তাহলে কৃষকদের আরও সচেতন করতে এবং আরও ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে ।
  • অনেক দিন ধরেই ফিউচার মার্কেটের মাধ্যমে কৃষকদের তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রিতে সহায়তা করার কথা ছিল । বাজেটে অবশ্যই এই বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা রাখতে হবে ।
  • সর্বোপরি সময় এসেছে কৃষি উদ্যোক্তা তৈরির । বাজারে ইতিমধ্যেই পর্যাপ্ত কৃষি স্টার্ট-আপ রয়েছে । বাজেট 2024 প্রকৃতপক্ষে কৃষকদের উপকার করার জন্য এই স্টার্ট-আপগুলিকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে ৷

আরও পড়ুন:

  1. আগামী অর্থবর্ষে 7 শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে ভারতীয় অর্থনীতি, আশা আরবিআই প্রধানের
  2. 6 শতাংশে বৃদ্ধির হার, 2047 সালের মধ্যে ভারত নিম্ন মধ্যম অর্থনীতিতেই থাকবে: রঘুরাম রাজন
  3. মুদ্রাস্ফীতি কমানোই মূল লক্ষ্য, চড়া সুদের হার আপাতত বজায় থাকার ইঙ্গিত আরবিআই গভর্নরের

কলকাতা, 27 জানুয়ারি: 2019 সালের অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট নজির গড়েছে ৷ এই বাজেটে প্রয়োজনীয় কিছু খাতে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৷ যেমন সরাসরি আয় সহায়তার সম্পূর্ণ নতুন প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি ঘোষণা করা হয়েছে ৷ শুধুমাত্র ঘোষণা করা হয়নি, এটি ডিসেম্বর 2018 থেকে প্রযোজ্যও করা হয়েছিল । এমনকী প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধির প্রথম কিস্তির টাকা 2019 সালের নির্বাচনের আগে বিপুল সংখ্যক জমির মালিককে বিতরণ করা হয়েছিল । আমরা এই বছরে এরকম কিছু ঘোষণা আশা করতে পারি ৷

কেন্দ্রীয় বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দর প্রত্যাশা

  • বাজেট ইকোসিস্টেম পর্যায়ে এই জিনিসগুলি করতে পারে ৷ কৃষকদের জন্য সস্তা ঋণই মূল বিষয় । প্রথমত, সরঞ্জাম, সেচ এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য বাজেটে আরও ভর্তুকিযুক্ত হারে নির্দেশিত ঋণের দিকে নজর দিতে হবে । ব্যয়যোগ্য তহবিল থেকে দীর্ঘমেয়াদি তহবিলে নজর ঘোরাতে হবে । দ্বিতীয়ত, শস্য বিমা হল কৃষি বৃদ্ধি এবং বাফার তৈরির চাবিকাঠি । বাজেটে অবশ্যই শস্য বিমা প্রকল্পের প্রসারের দিকে নজর দিতে হবে ।
  • উদ্ভাবনী খামার কৌশলগুলির দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে । গভীর সেচ ব্যবস্থা ভারতের মতো একটি জল-অপ্রতুল দেশে বিশাল পরিবর্তন আনতে পারে । এর জন্য বিশেষ করা ছাড়, কর বিরতি এবং সহজ ঋণ দিতে হবে । একইভাবে দুষ্প্রাপ্য খামার জমির সমস্যা সমাধান করলে জল সেচ এবং উল্লম্ব চাষকে উৎসাহিত করা যাবে এবং এই ক্ষেত্রে অনেক দূর এগনো যেতে পারে । বাজেট 2024-এ এই ধরনের উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে হবে ।
  • প্রি-সেল এবং পোস্ট-সেল অবকাঠামোতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ হচ্ছে না । উদাহরণস্বরূপ, মাটির গুণমান পরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণ একটি মূল ডেটা পয়েন্ট । মোবাইল সয়েল টেস্টিং ল্যাবগুলিতে বড় বরাদ্দের মাধ্যমে এক্ষেত্রে সক্ষম করা যেতে পারে । এছাড়াও অপর্যাপ্ত গুদামজাতকরণ, কোল্ড স্টোরেজ, কম বর্জ্য পরিবহন ইত্যাদি রয়েছে । যদি না তা না হয়, তবে সরবরাহ শৃঙ্খলের সীমাবদ্ধতা কৃষি বাস্তুতন্ত্রকে জর্জরিত করবে । সরকার পিপিপির মাধ্যমে গুদামজাতকরণ সুবিধা, কোল্ড স্টোরেজ, প্রাথমিক প্যাক-হাউস, রেফার ভ্যান স্থাপনকে উৎসাহিত করতে পারে । কৃষি অবকাঠামোতেও কর তুলে নেওয়া যেতে পারে ।
  • এই বাজেটে আমদানির বিকল্প একটি প্রধান বিষয় হতে হবে । ডাল, ভোজ্যতেল ও শাকসবজির ওপর এখনও অনেক বেশি আমদানি নির্ভরতা রয়েছে । অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে ভারত 2024-25 বিপণন বছরে প্রায় এক মিলিয়ন টন তুর ডাল আমদানি করবে বলে আশা করা হচ্ছে । ডাল ফসলের একর জমি হ্রাসের কারণে দেশীয় উৎপাদন কমার প্রত্যাশা থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । এখানে তুর ডালের (কান্দি পাপ্পু) সংকট বোঝা জরুরি । তুর ডাল নিয়ে ভারতের সমস্যা কম অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে রয়েছে, যার ফলে আফ্রিকান দেশগুলির উপর ভারতের প্রচুর নির্ভরতা রয়েছে ৷ মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক এবং উত্তরপ্রদেশ ভারতে তুর ডালের শীর্ষ তিনটি উৎপাদক রাজ্য ৷ এই তিনটি রাজ্যই এই বছর বৃষ্টি কম হয়েছে ৷ ফলে চাষে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ।

সরকারের তরফে প্রকাশিত তৃতীয় অগ্রিম অনুমান অনুসারে, 2022-23 সালে ভারতে তুর উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় 3.4 মিলিয়ন মেট্রিক টন (এমএমটি), যা আগের বছরের 4.2 এমএমটি উৎপাদনের তুলনায় 19 শতাংশ কম । যদিও, এটি 2019 সালের তুলনায় কিছুটা ভালো ৷ কারণ এই বছরে যউৎপাদন 3.3 এমএমটি ছিল, যা খুবই কম ৷ ভারতীয় তুর শস্য উৎপাদনের প্রবণতা 2018 সাল থেকে নিম্নমুখী গতিতে রয়েছে । চলতি খরিফ মৌসুমে ডাল চাষও কমেছে ৷ কৃষি মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, 2023 সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত 122.57 লক্ষ হেক্টরে ডাল চাষ হয়েছে, যা 2022 সালে এই একই সময়ে 128.49 লক্ষ হেক্টর ছিল ৷

তুর এমন একটি ডাল যার দাম ওঠানামা করে ৷ এই জালের দাম ওঠানামার ফলে অন্যান্য ডালের দামেও প্রভাব পড়েছে । যেহেতু ডাল ভারতীয় খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, তাই তুর ডালের কোনও উল্লেখযোগ্য মূল্য বৃদ্ধি ভারতে সামগ্রিক খাদ্যের ক্রয়ক্ষমতা এবং মুদ্রাস্ফীতির ক্ষেত্রে বিস্তৃত প্রভাব ফেলতে পারে ।

একইভাবে ভোজ্যতেলের ঘাটতি রয়েছে ভারতে ৷ যার কারণে ভারত বার্ষিক 10 বিলিয়ন ডলারের ভোজ্যতেল আমদানি করতে বাধ্য হচ্ছে । ভারত 1990 সালের প্রথম দিকে ভোজ্যতেলে নিজেদের উপরই নির্ভর ছিল । আমদানি কমাতে এবারের বাজেটে ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে ভারতের অভ্যন্তরীণ শক্তি ফিরিয়ে আনার উপর জোর দিতে হবে ।

কৃষকদের আয়ের উৎস বহুমুখী করতে উদ্বুদ্ধ করুন

  • মহামারীর পরে জৈব চাষ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে । টেকসই এলাকায় শস্য বহুমুখীকরণের জন্য বাজেটে কৃষকদের ছাড় দিতে হবে । বাজেট কৃষকদের জোরা এবং বাজরার মতো স্থিতিস্থাপক এবং পুষ্টিকর ফসলে বৈচিত্র্য আনতে উৎসাহিত করতে পারে । এটি প্যারিস চুক্তির অধীনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করবে ।
  • কম খরচের কারণে পটাসিক এবং ফসফেটিক সারের মিশ্রণের বদলে ইউরিয়ার ব্যবহার বেড়েছে ৷ এটি মাটির স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে । ফলে ইউরিয়ার উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমাতে বাজেটে অবশ্যই সরাসরি সুবিধা স্থানান্তর প্রকল্পে পরিবর্তন আনতে হবে । বাজেটে কৃষি গবেষণার ক্ষেত্রে বড় পদক্ষেপ নিতে হবে । কৃষি জিডিপির একটি বড় অংশ ৷ তবে ভারত কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নে প্রায় 0.35 শতাংশ ব্যয় করে । চিন 0.80 শতাংশ ব্যয় করে এবং এশিয়ার অন্যান্য উদীয়মান বাজার এই খাতে ভারতের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয় করে ।
  • উচ্চ কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যয়ের ইতিবাচক প্রভাব কেবল মাটির গুণমান এবং আউটপুটে নয়, কৃষি আয়েও দৃশ্যমান । একটি জিনিস যা বাজারগুলি কেন্দ্রীয় বাজেট থেকে আশা করছে তা হল খামার বিলগুলির অবস্থা সম্পর্কে আরও স্পষ্টতা, বিশেষ করে কৃষি পণ্যের বিপণনের ক্ষেত্রে । 2 বছরের দীর্ঘ কৃষক-আন্দোলন শেষ হয়েছে এবং সরকার বিলগুলি প্রত্যাহার করেছে ৷ তবে, অর্থনীতির জন্য কৃষি সংস্কার এখনও গুরুত্বপূর্ণ ৷ যেখানে দাম নির্ধারণে বড় দালালরা আধিপত্য বিস্তার করে সেখানে কৃষকদেরকে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট মন্ডিতে বেঁধে রাখার পরিবর্তে চয়েস দেওয়া দরকার । বাজেট 2024-এ এই বিষয়ে স্পষ্টতা প্রদান করা প্রয়োজন ৷ বিশেষ করে কৃষকদের একটি বিস্তৃত বিপণন চয়েস দেওয়ার দরকার ।

কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং শিল্পোদ্যোগ

উপরে উল্লিখিত পয়েন্টগুলি গুরুত্বপূর্ণ এবং কোনও না কোনও আকারে বেশিরভাগ রুটিন বাজেটের অংশ হয়েছে । বাজেট 2024 অবশ্যই কৃষিতে প্রযুক্তি এবং শিল্পোদ্যোগ ব্যবহারে একটি কোয়ান্টাম পরিবর্তনের প্রভাব ফেলবে । কীভাবে জেনে নিন ৷

  • আবহাওয়া, সর্বভারতীয় মূল্য এবং সরকারি নীতি সম্পর্কে কৃষকদের সঙ্গে বৃহত্তর তথ্য ভাগ করে নিতে হবে ৷ তাহলে কৃষকদের আরও সচেতন করতে এবং আরও ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে ।
  • অনেক দিন ধরেই ফিউচার মার্কেটের মাধ্যমে কৃষকদের তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রিতে সহায়তা করার কথা ছিল । বাজেটে অবশ্যই এই বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা রাখতে হবে ।
  • সর্বোপরি সময় এসেছে কৃষি উদ্যোক্তা তৈরির । বাজারে ইতিমধ্যেই পর্যাপ্ত কৃষি স্টার্ট-আপ রয়েছে । বাজেট 2024 প্রকৃতপক্ষে কৃষকদের উপকার করার জন্য এই স্টার্ট-আপগুলিকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে ৷

আরও পড়ুন:

  1. আগামী অর্থবর্ষে 7 শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে ভারতীয় অর্থনীতি, আশা আরবিআই প্রধানের
  2. 6 শতাংশে বৃদ্ধির হার, 2047 সালের মধ্যে ভারত নিম্ন মধ্যম অর্থনীতিতেই থাকবে: রঘুরাম রাজন
  3. মুদ্রাস্ফীতি কমানোই মূল লক্ষ্য, চড়া সুদের হার আপাতত বজায় থাকার ইঙ্গিত আরবিআই গভর্নরের
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.