ওয়াশিংটন, 15 মে: অশান্ত মধ্য প্রাচ্য ৷ দাঁত ফোটানোর সুযোগ খুঁজচ্ছে চিন ৷ এই আবহে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির ক্ষেত্রে কূটনৈতিক কৌশল বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকা ৷ সম্প্রতি সেই সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়িত করতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপও নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৷ যার মধ্যে অন্যতম হল প্রেসিডেন্টের বিশেষ কাউন্সিল পদে মেহের বিতারের নিয়োগ ৷
বারাক ওবামা সরকারের সময় হোয়াইট হাউসে ইজরায়েল-প্য়ালেস্তাইন কূটনৈতিক সম্পর্কের দায়িত্বে ছিলেন বিতার ৷ ছাত্র জীবনে প্যালেস্তিনিয় ছাত্রদের এক সংগঠনের সভাপতিও ছিলেন ৷ বর্তমানে এই একই সংস্থা ইজরায়েলকে সমর্থন বন্ধের দাবিতে মার্কিন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ক্য়াম্পাসগুলিতে অধিকাংশ বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছে । উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে এই প্রতিবাদ দমাতে এবং মার্কিন মুসলিম ভোটারদের আকৃষ্ট করতে হোয়াইট হাউসের অন্দরে ইহুদি বিদ্বেষী মনোভাবকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন বাইডেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না ৷ সেইসঙ্গে ইজরায়েলের সরকারকেও সাহায্য বন্ধের বার্তা দিচ্ছে আমেরিকা ৷
বেশ কিছুদিন ধরে রাফা দখলের লড়াইয়ে নেমেছে ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইএমডি) ৷ যদিও এই যুদ্ধে তাদের সমর্থন পাওয়া যাবে না, তা স্পষ্ট জানিয়ে দেয় পেন্টাগন ৷ সম্প্রতি বাইডেন বলেন, "যদি তারা রাফার দিকে যায়, তবে আমি তাদের কোনও রকম সামরিক সাহায্য করব না ৷ আর আমার এই সিদ্ধান্তটি আগেই জানিয়ে দিয়েছি ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে ৷" ইরানের কাছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্য খানিক 'দৈব্যবাণী'র মতো ৷
অন্যদিকে, ইজরায়েলের উপর ইরানি হামলা উপেক্ষা করে কাতার এবং লেবাননকে ক্রমাগত সামরিক সাহায্য করে যাচ্ছে পেন্টাগন ৷ সেইসঙ্গে ইরাকের উপর থেকে সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা তুলে ইরান থেকে বিদ্য়ুৎ আমদানির পথ প্রশস্ত করেছে আমেরিকা ৷ শুধু তাই নয়, এই কেনা-বেচার জন্য ওমানে একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও খোলা হয় মার্কিন প্রশাসনের তরফে ৷
সম্প্রতি অস্ত্র সরবরাহের উপর পর্যালোচনার জন্য একাধিক 'বন্ধু' দেশকে নির্দেশ দেয় হোয়াইট হাউস ৷ সেইসঙ্গে উল্লেখ করা হয়, "যুদ্ধের সময় কিছু ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের জন্য আমেরিকার সরবরাহকৃত অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে ইজরায়েল ।" মার্কিন প্রশাসনের তরফে আরও বলা হয়, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মানব সম্পদ ক্ষয় কমানোর ক্ষেত্রে ইজরায়েলের কাছে পর্যাপ্ত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং সরঞ্জাম রয়েছে ৷ কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আডিএফ সেই বিষয়টিকে কাজে লাগাচ্ছে কী না! সেই বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে যথেষ্ট ৷
হোয়াইট হাউসের এই সমস্ত পদক্ষেপগুলি থেকে এটা প্রমাণিত, ইজরায়েলের কাছে আর 'ব্ল্যাঙ্ক চেক' হতে চায়ছে না আমেরিকা ৷ কারণ, ইজরায়েলের এক বদ্ধ ধারণা হয়ে গিয়েছিল, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেও তারা নিজের মতো সমস্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে ৷ দ্বিতীয়ত, আগামী নির্বাচনে মার্কিন মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কের উপর নজর রয়েছে বাইডেন প্রশাসনের ৷ অন্যদিকে, সামরিক সাহায্য বন্ধ করে দিলে ইহুদি ভোট ব্যাঙ্কের উপর তার বিরুপ প্রভাব পড়বে ৷ সেকথা বুঝে সুপরিকল্পতভাবে বাইডেন ঘোষণা করেন ক্ষেপনাস্ত্র সাহায্য ছাড়াই ইজরায়েলকে সমর্থন করবে আমেরিকা ৷ প্রসঙ্গত, ইজরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে আমেরিকার মিত্র দেশগুলি ৷ সেক্ষেত্রে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে মানব ক্ষতির পরিমাণ বেশি হলে ইজরায়েলের পাশাপাশি সেই সমস্ত দেশের উপরও পড়বে তার প্রভাব ৷ এই আবহে আমেরিকার কৌশলগত পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে আরও একমাত্রা যোগ করেছে মধ্য প্রাচ্যের অশান্তি এবং চিনের আগ্রাসন মনোভাব ৷
প্রসঙ্গত, তেল আভিভকে বরাবর সমর্থন করে এসেছে ৷ এমনকি, মার্কিন সরকারের মধ্যে ইহুদিদের বেশ প্রভাবও রয়েছে ৷ ভবিষ্যতেও এই সমর্থন মার্কিন সরকার বজায় রাখবে ৷ তবে সেক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে চলতে পারবে, এই রকম কোনও নেতা থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে ৷ আগামী নির্বাচনকে মাথায় রেখে খানিক ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে চায়ছে আমেরিকা, তা স্পষ্ট ৷ আর সেক্ষেত্রে নেতানিয়াহুকে ঢাল করে আমেরিকা তার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চায়ছে ৷
আরও পড়ুন: