ETV Bharat / state

Psychiatrist on Belghoria Incident: একাকিত্ব ও গভীর সম্পর্কের কারণেই বারবার ঘটছে রবিনসন স্ট্রিটের মতো ঘটনা, মত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের

author img

By

Published : Jun 26, 2023, 4:51 PM IST

Updated : Jun 27, 2023, 6:26 AM IST

বেলঘড়িয়ায় আবারও রবিনসন স্ট্রিট কাণ্ডের ছায়া ৷ কেন বারবার এমন ঘটনা ঘটছে, তার উত্তর পেতে ইটিভি ভারত কথা বলেছে, বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ওমপ্রকাশ সিং-এর সঙ্গে ৷ যিনি ররিনসন স্ট্রিট কাণ্ডের অন্যতম চরিত্র পার্থ দে-র চিকিৎসা করেছিলেন ।

Psychiatrist on Belghoria Incident
Psychiatrist on Belghoria Incident

মনোরোগ বিশেষজ্ঞের মতামত

বর্ধমান, 26 জুন: রবিনসন স্ট্রিটের কঙ্কাল কাণ্ডের ছায়া বেলঘড়িয়াতে । যেখানে ভাইয়ের মৃতদেহ আগলে ছিলেন তাঁর দাদা । ওই দাদা (বীরেন্দ্রকুমার দে)-রও পচাগলা দেহ ও আর একটা কঙ্কাল উদ্ধার করে পুলিশ । ররিনসন স্ট্রিটের কঙ্কাল কাণ্ডের অন্যতম চরিত্র পার্থ দে-র চিকিৎসা করেছিলেন বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ওমপ্রকাশ সিং । তাঁর মতে, মূলত একাকিত্ব, নিজেদের মধ্যে গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক কিংবা মানসিক কারণে এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে ।

মনোবিদেরা বলছেন, শিক্ষিত সমাজের মধ্যে একা থাকার একটা প্রবণতা দেখা যায় । অনেকেই এমন আছেন, যাঁরা উচ্চ পদে কর্মরত । তাঁদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের সমাজে কিংবা পাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গে সেই ভাবে মেলামেশা করেন না । সে ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাঁদের পরিবারে যদি দুজন বা তিনজন থাকেন, এবং তাঁদের কেউ মারা যান, তাহলে আত্মিক সম্পর্কের কারণে তাঁরা সেটা মেনে নিতে চান না । তাঁদের ধারণা হয়, হয়তো বা মৃত ব্যক্তি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, তাই তাঁর ঘুমের যাতে ব্যাঘাত না হয়, সেজন্য মৃতদেহর পাশে বসে পাহারা দিতে শুরু করেন তিনি । এর ফলে সেই ব্যক্তির নিজের ক্ষতি হয়ে যায় । কিন্তু বস্তি অঞ্চল কিংবা যেখানে মানুষজন দলবদ্ধভাবে বসবাস করেন, সেইসব জায়গায় এই ধরনের ঘটনা সাধারণত দেখা যায় না ।

ইটিভি ভারতের মুখোমুখি হয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ওমপ্রকাশ সিং বলেন, মিশর কিংবা ইন্দোনেশিয়াতে একটা জনজাতি আছে, যাঁরা তাঁদের পরিবারের কেউ মারা গেলে সেই মৃতদেহকে সংরক্ষণ করে রেখে দেন । এমনকী মৃতদেহকে তাঁরা খেতেও দেন । এটা তাঁদের সমাজের একটা রীতি বলা চলে । তবে আমাদের সমাজে যেটা দেখা গিয়েছে, যদি দুজনের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক থাকে, সে ক্ষেত্রে তাঁদের মধ্যে কোনও একজন মারা গেলে, সেটা আমরা মেনে নিতে পারি না । তাই কেউ মারা গেলে অনেক পরিবারকে বলতে শোনা যায় যে না, সে মারা যায়নি ।

আরও পড়ুন: রবিনসন স্ট্রিটের চেয়েও মর্মান্তিক ! উদ্ধার ভাইয়ের কঙ্কাল ও দাদার পচাগলা দেহ

কিন্তু যদি সেই পরিবারে একাধিক লোকজন থাকেন, তাহলে কিছুক্ষণ পরে বা কয়েক ঘণ্টা পরে সেটা কেটে যায় । আসলে পরিবারের অন্যান্য লোকেরা কথাবার্তা বলায়, সেই শোক কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠা যায় । কিন্তু যখন দু জন বা তিনজন এমন কেউ থাকেন যাঁরা অন্যদের থেকে আলাদা, নিজেদের মধ্যে অনেক বেশি গভীর সম্পর্ক থাকে, তাঁদের মধ্যে কেউ মারা গেলে অন্যজন সেটা মেনে নিতে পারেন না । তাঁর ধারণা হয় ওই ব্যক্তি মারা যাননি, হয়তো ঘুমিয়ে আছেন, উঠে বসবেন ।

এ দিকে, ওই বাড়িতে আর দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তি না থাকায় কেউ তাঁকে বোঝানোর থাকেন না । কিংবা ওই ব্যক্তি বাইরের কোনও ব্যক্তির সঙ্গে সেভাবে মেলামেশা না করায় বাইরের কেউ কিছুই জানতে পারেন না । এ দিকে, তখন ওই ব্যক্তির যখন বদ্ধমূল ধারণা হয় যে, যেহেতু তিনি ঘুমিয়ে আছেন তাই তাঁকে পাহারা দিতে হবে । না হলে তাঁর ক্ষতি হবে । এইভাবে তাঁরা নিজের ক্ষতিটাও করে থাকেন । আসলে মানুষ তাঁর প্রিয়জনের মৃত্যুকে মেনে নিতে পারেন না, আবার এমন অনেকে আছেন, যাঁরা মানসিক বিকারগ্রস্ত । ফলে তাঁরা একটা ধারণার বশবর্তী হয়ে এই ধরনের কাজ করে থাকতে পারেন ।

আরও পড়ুন: দরজা ভাঙতেই পচা গন্ধ ! জগাছায় স্ত্রীর মৃতদেহ আগলে বসে অসুস্থ স্বামী

তবে পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে যদি বেশি মেলামেশা থাকে তাহলে যদি কারওকে হঠাৎ করে দেখা না যায়, যদি এলাকার লোকজন খোঁজ খবর নেন, তাহলে এই ধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে না বলে জানালেন ডা. ওমপ্রকাশ সিং । তাঁর কথায়, "মূলত সমাজে এখন দেখা যাচ্ছে, একা থাকার একটা প্রবণতা শুরু হয়েছে । কেউ কেউ বাড়ি থেকে বের হতে চায় না । ফলে তাঁদের ক্ষেত্রে বোঝাবার কেউ থাকে না । আর মানুষের একটা সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে, কোনও কিছু খারাপ হলে তাঁকে আমরা অস্বীকার করার চেষ্টা করি । মন সেটা মেনে নিতে চায় না । পরে আমরা ধীরে ধীরে সেটা মেনে নিই । তবে একাকিত্ব, নিজেদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক কিংবা মানসিক কারণে এই ধরনের ঘটনা সমাজে দেখা যাচ্ছে ।"

Last Updated : Jun 27, 2023, 6:26 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.