ETV Bharat / state

'কোনও কাজই ছোট নয়', বার্তা দিতে মেদিনীপুরে চায়ের দোকান বি-টেক উত্তীর্ণ গৃহবধূর

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Nov 27, 2023, 10:32 PM IST

B.Tech Chawala: বেশি পড়াশুনা করেও যে চায়ের দোকান খোলা যায় ৷ সমাজে সেই বার্তাই দিচ্ছেন মেদিনীপুরের গৃহবধূ সুদেষ্ণা রক্ষিত ৷ তাঁর এই কাজে পাশে দাঁড়িয়েছে শ্বশুরবাড়ির সকলে ৷

BTech Chawala
বিটেক চাওয়ালা

বি টেক উত্তীর্ণ গৃহবধূর চায়ের দোকান

মেদিনীপুর, 27 নভেম্বর: বাঁকুড়া, কলকাতার পর এবার মেদিনীপুরে বি-টেক চায়ের দোকান ৷ তবে এই দোকানটি অন্যদের থেকে একটু আলাদা ৷ কারণ এই দোকানের মালিক একজন গৃহবধূ ৷ সমাজে প্রচলিত রয়েছে, কম শিক্ষিত মানেই সে হয়তো চা বা ছোটখাটো খাবারের দোকান খুলবে ৷ কিন্তু সেই ধারণারই বদল ঘটছে দিন দিন ৷ কোনও কাজই ছোট নয়, তা বারবার প্রমাণ করছেন একদল ছেলেমেয়ে ৷ তারই মধ্যে একজন 32 বছরের বি-টেক পড়াশুনা করা সুদেষ্ণা রক্ষিত ৷ সমাজের ছক ভেঙেছেন তিনি ৷ পাঁচ বছরের মেয়েকে সামলেও তিনি খুলে ফেলেছেন মেদিনীপুর শহরের রাজাবাজারে এই চায়ের দোকান ৷

সুদেষ্ণার চায়ের দোকানের ট্যাগ লাইন হল, 'আড্ডা আর অনেকখানি মন খারাপের আলতো ভালো লাগার জায়গা মানে বি-টেক চায়ওয়ালা'৷ বিভিন্ন ধরনের চা-সহ কচুরি ডালপুরি ও স্ন্যাক্স পাওয়া যায় সুদেষ্ণার দোকানে ৷ যেখানে সন্ধে হলেই জমছে ভিড় ৷ মেদিনীপুরের বাসিন্দা এই গৃহবধূ মেধাবী ছাত্রী ছিলেন ৷ প্রথমে বি-টেক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি । এরপর তিনি এমবিএ করেন ৷ তারপর পড়াশুনা শেষে একটি কোম্পানিতে কাজও করেছিলেন সুদেষ্ণা । কিন্তু ভালো লাগেনি তাঁর । এরপর একটি বেসরকারি স্কুলে কিছুদিন কাজও করেন তিনি ৷ কিন্তু মন বসেনি সেখানেও । স্বামী চন্দ্রজিৎ সাহাও বি-টেক উত্তীর্ণ ৷ তিনি কলকাতায় একটি কোম্পানিতে কর্মরত । এরই মধ্যে তাদের কোলে আলো করে আসে একটি ফুটফুটে মেয়ে । তার বয়স এখন প্রায় পাঁচ বছর ।

সন্তান জন্মের পরেই সুদেষ্ণা রক্ষিত ঠিক করেন নিজে স্বাবলম্বী হবেন এবং অপরকে সাবলম্বী করবেন । তাই তিনি চাকরি ছেড়ে দেন ৷ তবে সন্তান ছোট থাকায় তাকে বড় করতেই তখন মনোযোগ দেন তিনি ৷ এরপর মেয়ের বয়স পাঁচ বছর সম্পূর্ণ হলে কিছু করার কথা ভাবেন তিনি ৷ ছোটবেলার নিজের রকমারি রান্নাকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেন একটি দোকান খোলার । কিন্তু কী দোকান খোলা যায়, তাই নিয়েও দ্বিধায় ছিলেন সুদেষ্ণা । এরপর তিনি ঠিক করলেন একটি চা দোকান দিয়ে শুরু করবেন ব্যবসা । সমাজে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিতে তাই তিনি বি-টেক চাওয়ালা নামে দোকান শুরু করেন । এই কাজে তাঁকে স্বামী, ননদ থেকে শশুর সকলেই সাহায্য করতে এগিয়ে আসে ।

এই দোকান নিয়ে সুদেষ্ণা বলেন, "সমাজে যারা চা বিক্রি করে তাদেরকে মূলত ছোট চোখে দেখা হয়। তাই আমি এই চায়ের দোকান খুলেছি এবং নাম দিয়েছি বি-টেক চায়ওয়ালা । যাতে প্রথমে নাম পড়ে সকলে বুঝতে পারে যে ডিগ্রিধারীরাও চায়ের দোকান করতে পারে ।" এই দোকানের বয়স মাত্র কুড়ি দিন । এরই মধ্যে ব্যবসা চলছে রমরমিয়ে ৷ সুদেষ্ণার ইচ্ছে আছে পরে বড় ধরনের ক্যাফেটেরিয়া করার । তাঁর দোকান ও ব্যবসার সবসময়ের সমর্থক স্বামী চন্দ্রজিৎ সাহা । তিনি বলেন, "স্ত্রীর এই উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই । কাজের সূত্রে কলকাতায় থাকি তাই বাড়ি ফিরলে যতটা পারি সাহায্য করার চেষ্টা করি ওকে । তবে মানুষ চাইলেই যে সবকিছু করতে পারে এবং পড়াশোনা বা ডিগ্রী টাই সব বড় কথা নয়, সেটা দেখিয়ে দিয়েছে সুদেষ্ণা ।"

আরও পড়ুন:

  1. কোভিডে কাজ হারিয়ে বাঁকুড়ার বিটেক ইঞ্জিনিয়ার এখন চা-বিক্রেতা
  2. চাকরি নেই ! পেট চালাতে দুই ইঞ্জিনিয়ারের চায়ের দোকান, বি'টেক চা-ওয়ালা
  3. সততায় ভরা এক কাপ রাজনীতি ! মেদিনীপুরের 'পলিটিক্যাল চা-ওয়ালা' দিচ্ছে অভিনব বার্তা
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.