ETV Bharat / state

Ganga Erosion in Malda: মুখ ফিরিয়েছে প্রশাসন, ভাঙন থেকে বাঁচতে গঙ্গাপুজো দুর্গত মহিলাদের

author img

By

Published : Aug 19, 2023, 3:18 PM IST

Distressed People Worship River due to Erosion: প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না ৷ এ দিকে দিনে দিনে তীব্র আকার ধারন করছে গঙ্গা ভাঙন ৷ সেই ভাঙনের হাত থেকে বাঁচতে 2023-এ দাঁড়িয়ে তাই আদিম যুগে ফিরে গেলেন মালদার 50 জন মহিলা ৷ গঙ্গাকে তুষ্ট করতে ভাঙন কবলিত এলাকায় পুজোয় মাতলেন তাঁরা ৷ এ কথা শুনে আতঙ্কিত বিজ্ঞানকর্মীরা ৷

Ganga puja to get relief from erosion
গঙ্গাপুজো মহিলাদের

ভাঙন থেকে বাঁচতে গঙ্গাপুজো দুর্গত মহিলাদের

মালদা, 19 অগস্ট: প্রশাসনের উপরেই আশা করেছিলেন তাঁরা ৷ ভেবেছিলেন, গঙ্গার ভয়াল রোষ থেকে তাঁদের বাঁচাতে এগিয়ে আসবে প্রশাসন ৷ সময়মতো ভাঙা বাঁধের মেরামতি হবে ৷ কিন্তু তাঁরা জেনে ফেলেছেন, ভাঙা বাঁধ মেরামতি থেকে সেচ দফতর হাত তুলে নিয়েছে ৷ তাদের নাকি টাকা নেই ৷ তাই প্রশাসনের কেউ এলাকায় পা পর্যন্ত রাখছে না ৷ এতে ভাঙন প্রবণ এলাকার মানুষের আতঙ্ক আরও বেড়েছে ৷ আতঙ্কে মানুষ এখন বোধহয় ঠিক আর ভুলের ব্যবধানটুকু বুঝতে পারছে না ৷ শুক্রবার তার প্রমাণ মিলেছে পশ্চিম রতনপুর গ্রামে ৷ পুণ্যতোয়ার রোষ থেকে বাঁচতে আজ গঙ্গাপুজো করেছেন ওই গ্রামের 50 জন মহিলা ৷ তাঁদের বক্তব্য, এই পরিস্থিতি থেকে তাঁদের বাঁচাতে পারে একমাত্র মা গঙ্গাই ৷ গোটা ঘটনায় লজ্জিত বিজ্ঞানকর্মীরা ৷ তাঁদের প্রশ্ন, আতঙ্কে মানুষ যেভাবে আদিম যুগে ফিরে যাচ্ছে, তার দায় কার?

নদীকে তুষ্ট করতে আজ পশ্চিম রতনপুর গ্রামে গঙ্গাপুজো দিয়েছেন অঞ্জলি চৌধুরি ৷ তিনি বলেন, "গঙ্গা আমাদের বাড়িঘর কেড়ে নিয়েছে ৷ জমি-জায়গাও আর নেই ৷ আমরা গরিব মানুষ ৷ যাব কোথায়? গঙ্গা বাড়িঘর না কাটলে আমরা এখানে থাকতে পারব৷ প্রশাসনের কারও দেখা নেই ৷ কী খাচ্ছি, কেমনভাবে থাকছি, কেউ দেখে না ৷ মাধেমধ্যে বিডিও আসে, ডিএম আসে ৷ দেখে চলে যায় ৷ কোনও কাজ হয় না ৷ তাই গঙ্গাকে তুষ্ট করতে আজ গ্রামের 50 জন মহিলা গঙ্গাপুজো করেছি ৷"

একই বক্তব্য ওই গ্রামের ঝাক্কা চৌধুরির ৷ তাঁর কথায়, আজ পুজো করে তাঁরা মা গঙ্গাকে ধ্বংসলীলা থামাতে বিনতি জানালেন ৷ গরিব মানুষ তাঁরা বাড়িঘর তলিয়ে গেলে কোথায় যাবেন? কেউ তো তাঁদের দেখতে আসছে না ৷ তিনি বলেন, "জানি, পুজো করে গঙ্গাকে থামানো যাবে না ৷ কিন্তু এখন গঙ্গার কাছে বিনতি করা ছাড়া আর উপায় নেই ৷ গান গেয়ে গঙ্গাকে তুষ্ট করার চেষ্টা করছি ৷"

তৃণমূল পরিচালিত বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রামলাল চৌধুরীর বক্তব্য, এ নিয়ে ভূতনির বাঁধ সাতবার ভাঙল ৷ এর আগে যখনই বাঁধ ভেঙেছে, সেচ দফতর আর প্রশাসন আসত ৷ মোটা অংকের টাকার টেন্ডার হত৷ ঠিকাদাররা লুট করত ৷ এর জন্যই ভূতনির আজ এই অবস্থা ৷ সরকার চাইছে না ভূতনি বাঁচুক ৷ এতে ভূতনির আয়তন 50 শতাংশ কমে গিয়েছে ৷ এবার দু’জায়গায় বাঁধ ভেঙে গিয়েছে ৷ জল এখনও ভিতরে ঢোকেনি ৷ তবে ঢুকবেই ৷ ভাদ্রে জলস্তর বাড়বেই ৷ গোটা ভূতনি ভাসবে ৷ বিলাইমারি আর মহানন্দটোলাও বাঁচবে না ৷ মানুষ যাবে কোথায়? এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের কেউ এলাকায় আসেনি ৷ মানুষ নিজেদের বাড়িঘর ভেঙে ফেলছে ৷ খুব খারাপ পরিস্থিতি ৷

আরও পড়ুন: একে গঙ্গায় রক্ষা নেই, দোসর কোশি ; দুই নদীর ভাঙনে বিপন্ন লাখ তিনেক মানুষ

রতুয়া-1 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মহম্মদ আতাউর রহমান জানান, পশ্চিম রতনপুর বাঁধ কেটে গিয়েছে ৷ খাসমহলে ভাঙন চলছে ৷ বেশ কয়েকটি গ্রাম নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার প্রহর গুনছে ৷ এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি সাহায্য আসেনি ৷ প্রায় দেড় লাখ মানুষ আতঙ্কে রয়েছে ৷ গঙ্গাকে তুষ্ট করতে আজ এখানে মায়েরা পুজো করলেন ৷ এছাড়া তাঁদেরই বা কী করার আছে !

ভাঙন আটকাতে গঙ্গাপুজো ৷ শুনেই আঁতকে উঠলেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের মালদা জেলা কমিটির সদস্য রাহুলরঞ্জন দাস ৷ তিনি বলেন, "মানুষের অসহায়তা কোথায় পৌঁছোলে এমন ঘটনা ঘটে ! গঙ্গা ভাঙন এই জেলার কোনও নতুন সমস্যা নয় ৷ কিন্তু প্রশাসনকে তো দুর্গত মানুষকে রক্ষা করতে কিছু করা প্রয়োজন ! আজ যেভাবে ভাঙন রুখতে গঙ্গাপুজো করা হল, তাতে মনে হচ্ছে, আমাদের সমাজটা পিছনের দিকে যাচ্ছে ৷ আমরা কি ফের আদিম যুগে ফিরে যাচ্ছি? 2023 সালে এমন ঘটনা কল্পনা করা যায় !"

তাঁর কথায়, অন্যান্য দেশেও ভাঙন প্রবণ নদী রয়েছে ৷ কিন্তু সেসব দেশ একটা জায়গায় পৌঁছোতে পেরেছে ৷ টেমস লন্ডনকে, ভলগা মস্কোকে কিংবা রাইন জার্মানিকে কি ভাঙতে পেরেছে? ওই নদীগুলিও তো গঙ্গার মতোই প্রাচীন ৷ সেসব দেশ কীভাবে ভাঙন আটকাতে পারল ৷ এদেশে কি গঙ্গার ভাঙন নিয়ে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার মাথাই ঘামায় না? এ’রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তো সোজাই বলে দিয়েছিলেন, গঙ্গার ভাঙন আটকানো যাবে না ৷ যদি সেটাই হয় তবে অন্তত বিপন্ন মানুষগুলোর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক ৷ ভাঙন এলাকার মানুষ যেভাবে আদিম যুগে ফিরে যাচ্ছেন, তার জন্য দায়ী কে ?

আরও পড়ুন: বিপদসীমা পেরল গঙ্গা, তীব্র ভাঙন অব্যাহত; বিপন্ন গোপালপুর

চলতি বর্ষা মরশুমের শুরু থেকেই পাড় কাটছে গঙ্গা ৷ গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ভাঙনের ব্যাপ্তি বেশি ৷ ইতিমধ্যে ভূতনি চরের একটি বাঁধ 90 শতাংশ ভেঙে গিয়েছে ৷ আরেকটি বাঁধও ভাঙতে শুরু করেছে ৷ এর মধ্যেই মানিকচক ব্লকের উত্তর ও দক্ষিণ চণ্ডীপুর এবং হীরানন্দপুর, রতুয়া-1 নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলা ও বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কিছু গ্রামের প্রচুর বাড়ি নদীগর্ভে চলে দিয়েছে ৷ অনেক মানুষ নদীর পাড় থেকে নিজেদের বাড়িঘর অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়েছেন ৷ এখনও সরাচ্ছেন ৷ মালদা জেলায় গঙ্গার জল মূলত 15 অগস্ট থেকে বাড়তে শুরু করে ৷ বৃষ্টিও শুরু হয় এই সময় থেকে ৷ তাই এই পরিস্থিতিতে নদীপাড়ের বাসিন্দারা সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.