মালদা, 01 এপ্রিল: তিলজলার পর গাজোল ৷ কেন্দ্রীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের দলকে নির্যাতিতা ও তার বাড়ির লোকজনের সঙ্গে দেখা করতে বাধা দেওয়া হল এখানেও ৷ বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে খোদ রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে ৷ এই নিয়ে শনিবার বিজেপি-তৃণমূলের মহিলা বাহিনীর ঝামেলাও দেখেছেন গ্রামবাসীরা ৷ রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের আধিকারিকরা ৷ পরে গ্রামবাসীদের সহযোগিতাতেই কেন্দ্রীয় দলের দুই সদস্য নির্যাতিতা ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছেন ৷ তবে ঘটনার জেরে নির্যাতিতার বাড়ি আজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৷
গত 20 মার্চ গাজোলের একটি স্কুলের ক্লাসরুমে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল স্থানীয় তিন যুবকের বিরুদ্ধে ৷ অভিযোগের ভিত্তিতে তিন যুবককেই গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ সেই ঘটনার সঙ্গে তিলজলার ঘটনার তদন্তে শুক্রবারই রাজ্যে এসেছেন কেন্দ্রীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রিয়াঙ্ক কানুনগো এবং মেম্বার সেক্রেটারি রূপালি বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ রাজ্য সরকারকে আগাম জানালেও শুক্রবার রাতে তিলজলায় তাঁদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে ৷ শনিবারও তাঁরা গাজোলে নির্যাতিতার বাড়িতে এলে দেখা যায় সেখানেও আগে থেকেই রয়েছেন রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায়-সহ আরও কয়েকজন ৷ ছিলেন পুলিশকর্মীরাও ৷ কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা ঘরে ঢুকতে গেলে তাঁদের বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ৷
এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ৷ গ্রামবাসীরাও কেন্দ্রীয় দলকে ঘরে ঢোকানোর দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন ৷ যদিও তাঁদের দাবিতে কর্ণপাত করেনি পুলিশ কিংবা রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন ৷ এরপর কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা নির্যাতিতার স্কুলে চলে যান ৷ ঘটনাস্থল-সহ গোটা স্কুল ঘুরে দেখেন তাঁরা ৷ এরপর নির্যাতিতার বাড়ি থেকে রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের সদস্যরা চলে গেলে ফের কেন্দ্রীয় দল নির্যাতিতার বাড়িতে ঢুকতে গেলে বাধা দেন তৃণমূলের মহিলা কর্মীরা ৷ পালটা বিজেপির মহিলা কর্মীরাও বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন ৷ অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল নেত্রী জুতো হাতে তেড়েও যান বিজেপি কর্মীদের দিকে ৷
অবশেষে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর গ্রামবাসীরাই কেন্দ্রীয় দলকে নির্যাতিতার বাড়িতে প্রবেশ করতে সাহায্য করেন ৷ এই বিষয়ে জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রিয়াঙ্ক কানুনগো অভিযোগ করে বলেন, "রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন উর্দিধারী মহিলা পুলিশকর্মীদের নিয়ে নির্যাতিতার ঘরে ঢুকে বসে রয়েছেন ৷ এটা করা যায় না ৷ তিনি আমাদের বাচ্চাটির সঙ্গে কথা বলতে দিচ্ছিলেন না ৷ বাচ্চার মা আমাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য কান্নাকাটি করছিলেন ৷ রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন, রাজ্য সরকারের গাফিলতি লুকোনোর চেষ্টা করেছেন ৷ এখানে পুলিশও নিজের কাজ করেনি ৷ এসব ঘটনা যাতে রিপোর্টে না আসে, তার জন্যই এই চেষ্টা ৷"
আরও পড়ুন: 24-এর ভোট আসছে বলে বিজেপি হিন্দুত্বের রাজনীতি শুরু করেছে, অভিযোগ মহুয়ার
অন্যদিকে রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় বলেন, "প্রতিটি ঘটনাতেই আমাদের ঘটনাস্থলে যেতে হবে ৷ আমরা তদন্তের রিপোর্ট পেয়ে ফলো আপ করতে এসেছি ৷ আমি কাউকে বাধা দিইনি ৷ সিপিসিআর অ্যাক্টে লেখা রয়েছে, আমরা কোথাও ঢুকলে জাতীয় কমিশনের ঢোকার এক্তিয়ার নেই ৷ যদি ঢুকেও পড়েন, তবে আমরা যৌথভাবে তদন্ত করব ৷ কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে অভব্য আচরণ করেছেন ৷ তবে বাচ্চাটি ভীষণ আতঙ্কে রয়েছে ৷ ওর কাউন্সেলিং করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে ৷"