মালদা, 15 অগস্ট : আজ 75তম স্বাধীনতা দিবস । বিশেষ এই দিনটিতে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মরণ করা হয় দেশজুড়ে । কিন্তু প্রয়াত বীর সেনানীদের পরিবার এখন কী অবস্থায় রয়েছে, তা জানার চেষ্টা করা হয় কি ? এ নিয়ে বিতর্ক চললেও হরিশ্চন্দ্রপুরের স্বাধীনতা যোদ্ধা বীরসা ওঁরাওয়ের পরিবারের খোঁজ নিতে গিয়ে সামনে এল কিছু জানা-অজানা তথ্য ।
মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরে তেঁতুলবাড়ি মোড় থেকে সামান্য দূরে জেলার স্বাধীনতা সংগ্রামী বীরসা ওঁরাওয়ের পরিবারের বসবাস । বেতের চাটাইয়ের উপরে ভাঙা টালির চালের নিচে দিন কাটছে তাঁদের । কোনও সরকারি সাহায্য মেলেনি । পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যকে একাধিকবার সরকারি আবাস যোজনার ঘরের জন্য বলা হয়েছে । কিন্তু পঞ্চায়েত সদস্য তাঁদের জানিয়েছেন, তাঁরা ধনী । তাঁদের সরকারি ঘর মিলবে না । তবে 20 হাজার টাকা দিলে ঘরের ব্যবস্থা হতে পারে ।
বিরসা ওঁরাওয়ের ভাইয়ের ছেলে রামধনী ওঁরাও বলেন, "জ্যাঠামশাই স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন । স্বাধীনতার পর হরিশ্চন্দ্রপুরের প্রথম বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি । আমরা দুঃস্থ পরিবার । কিন্তু কোনও সরকারি সাহায্য পাইনি ।" তাঁর অভিযোগ, 20 হাজার টাকার বিনিময়ে আবাস যোজনায় ঘর পাওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে পঞ্চায়েত সদস্য । কিন্তু টাকা না দেওয়ায় ঘর জোটেনি ৷
বীরসার নাত-বৌ সামিয়া ওঁরাও জানান, তাঁর কাকাশ্বশুর দেশের জন্য লড়াই করলেও এখন তাঁদের অবস্থা শোচনীয় । কোনও রকমে সংসার চলছে । বর্ষায় জল জমে বাড়ি কাদা কাদা হয়ে গিয়েছে । আবাস যোজনায় ঘরের জন্য আবেদন করলেও কাটমানি না দিলে ঘর পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছে পঞ্চায়েত সদস্য । তাঁরও অভিযোগ, পঞ্চায়েত সদস্য বাবুয়া ঘর পাইয়ে দেওয়ার জন্য 10 হাজার টাকা চেয়েছিলেন । তাঁরা বছর খানেক আগে 5 হাজার টাকা দিলেও ঘর তৈরি হয়নি । এমনকি বর্ষার শুরুতে বাড়িতে জল ঢোকার দৃশ্য দেখালে বাবুয়া ত্রিপল দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন । কিন্তু সেটুকুও জোটেনি ।
আরও পড়ুন : Independence Day : মাস্টারদা'র সহযোগী অনুরূপ চন্দ্র সেনকে ভুলতে বসেছে বুড়ুল গ্রাম
কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন তেঁতুলবাড়ির পঞ্চায়েত সদস্য ফুলকুমার হরিজন ওরফে বাবুয়া । তিনি বলেন, "এই কাটমানির অভিযোগ সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই ।" আগে তিনি বিজেপির সদস্য ছিলেন এবং বিজেপির টিকিটেই জিতেছিলেন । মাস তিনেক আগে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন । এ প্রসঙ্গে তিনি জোর দিয়ে বলেন, "আমি বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য ।"
এই বিতর্ক প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক জম্মু রহমান বললেন, "যে সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি বিজেপির টিকিটে জিতেছেন । বিজেপির কাটমানি নিয়েই কারবার । উনি তৃণমূলে যোগদান করেননি । আর আমাদের মুখ্যমন্ত্রী কাটমানি নিয়ে বারবার সরব হয়েছেন । কঠোর ব্যবস্থাও নিয়েছেন ।"
বিজেপির হরিশ্চন্দ্রপুর 1 মণ্ডল সভাপতি রূপেশ আগরওয়ালা বলেন, "বিষয়টি সংবাদমাধ্যম থেকেই জানতে পারলাম । উনি আগে আমাদের দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । সেই সময় তিনি এই সব ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না ।" তাঁর দাবি পরে তৃণমূলে যোগদান করে তাঁর নীতি পরিবর্তন হয়েছে । এখন তিনি তৃণমূলের কাটমানির আদর্শে চলছেন ।
জেলার প্রথম আদিবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে নাম লিখিয়েছিলেন বীরসা ওঁরাও । গান্ধিজির হাত ধরে আইন অমান্য, সত্যাগ্রহ, ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন । গ্রেফতারও হয়েছিলেন । 1946-এ অবিভক্ত বাংলায় বঙ্গীয় আইন পরিষদের বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন বীরসা ওঁরাও । স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে ভারত সরকারের থেকে পেয়েছিলেন তাম্রফলক । পরিবারের সদস্যরা বহুদিন ধরে মূল্যবান তাম্রফলক সযত্নে রেখে দিয়েছিলেন ৷ 2017-র বন্যায় প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে জলে তলিয়ে যায় সেই সম্মান ।