ETV Bharat / state

বাবা সাফাইকর্মী, 'সোনার মেয়ে' মনিকা স্বপ্ন দেখছে মেরি কম হওয়ার

author img

By

Published : Oct 12, 2019, 11:04 PM IST

Updated : Oct 12, 2019, 11:30 PM IST

বক্সিং করতে ভয় লাগে না । বক্সিং রিংয়ে জীবন খুঁজে পান । সারা বাংলা বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে 48 কেজি বিভাগে রুপো পাওয়া ছাড়াও দক্ষিণ কলকাতা জেলা স্কুল চ্যাম্পিয়নশিপে 52 কেজি বিভাগে সোনা জিতেছেন মনিকা । রাজ্য বক্সিং ও দক্ষিণ কলকাতা জেলা বক্সিংয়ের জুনিয়র বিভাগে পরপর দু'বছর সোনা জয় তাকে ঘিরে বড় সাফল্যের আশা জাগাচ্ছে । জাতীয় পর্যায়ে পদকের দৌড়ে জায়গা না করতে পারলেও মনিকা যে লম্বা রেসের ঘোড়া তা মানছেন সকলেই ।

মনিকা

কলকাতা, 12 অক্টোবর : আদি গঙ্গার গোপাল ঘাটের ধারে শশী শেখর বোস রোড ৷ বস্তি এলাকার বাসিন্দাদের জল নেওয়ার লাইনে ঝামেলা বাধে রোজই ৷ কিন্তু সেখানে একটি মেয়েকে দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন সঞ্জয় প্রসাদ ৷ তারপরই খোঁজ শুরু হয় মেয়েটির ৷ সঞ্জয় নিজে একসময় বক্সিং করতেন ৷ রিং থেকে সরে এলেও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ৷ অফিস শেষ হতেই বাড়ি না গিয়ে পাড়ায় খোঁজ শুরু করেন তিনি ৷ সমস্যা হয়নি ৷ সামান্য জিজ্ঞাসার পরই মেয়েটির বাড়ি খুঁজে পেয়ে যান সঞ্জয় ৷

কোনও ভনিতা না করেই মেয়েটিকে নাম জিজ্ঞাসা করেছিলেন ৷ হতবাক হয়ে ঘুম থেকে উঠে এসেছিলেন সুরেশ মল্লিক ৷ কর্পোরেশনের সাফাই কর্মীর কাজ ছাড়াও বিভিন্ন আবাসনে সাফাই করার কাজ করেন ৷ সাতজনের পেটের ভাত যোগাতে বাড়তি পরিশ্রম করতেই হয় ৷ প্রথমে ভেবেছিলেন কোনও উটকো ব্যক্তি এসে খোঁজ করছে ৷ কিন্তু সঞ্জয়ের আন্তরিক ব্যবহার ও ভবিষ্যৎ চিন্তা করে মেয়ে মনিকা মল্লিককে বক্সিং শেখার অনুমতি দেন ৷

শশী শেখর বোস রোডের বস্তিতে বক্সিং বা পড়াশোনার হাত ধরে সাফল্য পাওয়ার চেষ্টা হয়তো দিবাস্বপ্ন । একটা উঠানে সঞ্জয়ের বক্সিং স্কুল । আবার সকালে ভবানীপুরের গোরস্থানে এখানকার 120 জন বক্সিং শিক্ষার্থী অনুশীলন করেন । বিকেলে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় চলে বক্সিং অনুশীলন । এভাবেই বাংলার মহিলা বক্সিংয়ে আলো দেখাচ্ছেন মনিকা মল্লিকরা ।

দেখুন ভিডিয়ো

আদর্শ হিন্দি হাইস্কুলের ছাত্রী মনিকা জানান, বক্সিং করতে ভয় লাগে না । বক্সিং রিংয়ে জীবন খুঁজে পান । সারা বাংলা বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে 48 কেজি বিভাগে রুপো পাওয়া ছাড়াও দক্ষিণ কলকাতা জেলা স্কুল চ্যাম্পিয়নশিপে 52 কেজি বিভাগে সোনা জিতেছেন মনিকা । রাজ্য বক্সিং ও দক্ষিণ কলকাতা জেলা বক্সিংয়ের জুনিয়র বিভাগে পরপর দু'বছর সোনা জয় তাকে ঘিরে বড় সাফল্যের আশা জাগাচ্ছে । জাতীয় পর্যায়ে পদকের দৌড়ে জায়গা না করতে পারলেও মনিকা যে লম্বা রেসের ঘোড়া তা মানছেন সকলেই । জাতীয় স্কুল ও চ্যাম্পিয়নশিপে অল্পের জন্যে শেষ চারে জায়গা হয়নি ।

প্রশিক্ষক সঞ্জয় প্রসাদ জানান, পরিকাঠামো, সচেতনার অভাব তাঁর বক্সিং স্কুলের শিক্ষার্থীদের বড় সমস্যা । মনিকাকে তিনি আগলে রাখছেন । কিন্তু লড়াইটা বেশ কঠিন । মেরি কমের সাফল্য ওদের কাছে প্রেরণা । মনিকা মনে করেন, মেরি কম পারলে তাঁরাও পারবেন । পড়াশোনা আলো দেবে । বক্সিং তাদের স্বচ্ছলতা আনবে । তাই বক্সিং রিংয়ে সাফল্যকে পাখির চোখ করতে চান । এক কামরার ঝুপড়িতে গাদাগাদি করে দিন যাপন । অভাবের জোরালো হাতছানিতে দিকভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে । তা সত্ত্বেও মেরি কমের অদৃশ্য উপস্থিতি লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা দেয় ।

Intro:সকালবেলার জল নেওয়ার লাইনে সামান্য বচসায় একটি মেয়ের খুন্নাস মনোভাব দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন সঞ্জয় প্রসাদ। অফিস যাওয়ার সময়ে মজে যাওয়া আদি গঙ্গার গোপাল ঘাটের ধারে শশী শেখর বোস রোডের জল নেওয়ার লাইনে পারস্পরিক তু তু ম্যায় ম্যায় নিত্য দিনের ঘটনা। কিন্তু সেদিনের ঘটনায় মেয়েটির লড়ে যাওয়া নজর কেড়েছিল। নিজে বক্সিং করতেন। রিং থেকে সরে দাড়ানোর পরে কোচিং করাচ্ছেন। কিন্তু মেয়েটি তাকে চমকে দিয়েছিল। সারাদিন অফিস করলেও মনটা খচখচ করছিল। অফিস ছুটি হতেই সোজা বাড়ি নয়,পাড়ায়। যে কলের জলের লাইনে বচসা হয়েছিল সেখানেই খোঁজ করেছিলেন। হদিশ পেতে সমস্যা হয়নি। সামান্য জিঞ্জাসা তেই মেয়েটির দরজায় পৌঁছে গিয়েছিলেন।
কোনও ভনিতা না করে মেয়েটিকে নাম জিঞ্জেস করেছিলেন। প্রায় অচেনাএকটি ছেলে তার মেয়ের কথা জানতে চাইছে শুনে ঘুম থেকে উঠে এসেছিলেন সুরেশ মল্লিক। কর্পোরেশনের ঝাড়ু দেওয়ার কাজ করা ছাড়াও বিভিন্ন আবাসনে ঝাড় দেওয়া ময়লা ফেলার কাজ করেন। সাত জনের পেটের ভাত যোগাতে বাড়তি পরিশ্রম করতেই হয়। এই অবস্থায় উটকো কেউ তার মেয়ের সম্বন্ধে জানতে চাইছে জেনে বিরক্ত হয়েছিলেন। ভেবেছিলেন খেদিয়ে দেবেন। কিন্তু সঞ্জয় প্রসাদের আন্তরিক ব্যবহার ও ভবিষ্যৎ চিন্তা করে মেয়ে মনিকা মল্লিককে বক্সিং শেখার অনুমতি দিয়েছিলেন।
মতি নন্দীর কোনি উপন্যাসের ক্ষিদ্দা ও কোনির প্রথম সাক্ষাৎ অনেকটা এরকম।
আদি গঙ্গার ধারে শশী শেখর বোস রোডের বস্তির আকাশে দারিদ্র,লড়াই, হাতাহাতি পাশাপাশি অবস্থান করে। সেখানে খেলাধুলা বা পড়াশোনার হাত ধরে সাফল্যের রাজপথে যাওয়ার চেষ্টা নিতান্তই দিবাস্বপ্ন।
পুরানো দিনের বাড়ির ভেঙে পড়ার উঠোনে সঞ্জয় প্রসাদের বক্সিং স্কুল। মজে যাওয়া আদি গঙ্গার নোংরা গন্ধ এখানে প্রতিনিয়ত নাকে ঝাপটা দেয়। সকালে ভবানীপুরের গোরস্থানে এখানকার 120জন বক্সিং শিক্ষার্থী অনুশীলন করে। বিকেলে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় বক্সিং অনুশীলন। এভাবেই বাংলার মহিলা বক্সিংয়ে আলো দেখাচ্ছেন মনিকা মল্লিক,নেহা সাউরা।
একলব্যের কাছে দ্রোনাচার্য যেমন ছিলেন মেরি কম ওদের কাছে ঠিক তেমনই। উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্য থেকে প্রতিকুলতা ডিঙিয়ে সাফল্যের রাজপথে রোলস রয়েজ চালানো মেরি কম যেকোনও শিক্ষার্থীর কাছেই আদর্শ।সে যদি বক্সার হন তাহলে তো মেরি কম নীল ধ্রুব তারা হবেনই।
আদর্শ হিন্দি হাইস্কুলের ছাত্রী মনিকা বলছিল বক্সিং করতে ওর ডর লাগে না। বরং বক্সিং রিংয়ে জীবন খুজে পান। তার কথায় যে সারবত্তা রয়েছে তা পারফরম্যান্স কার্ডে প্রমাণিত।অল বেঙ্গল বক্সিং চ্যাম্পিয়ন শীপে 48 কেজি বিভাগে রূপো পাওয়া ছাড়া দক্ষিণ কলকাতা জেলা স্কুল চ্যাম্পিয়ন শীপে 52কেজি বিভাগে সোনা জিতেছেন। রাজ্য বক্সিং ও দক্ষিন কলকাতা জেলা বক্সিং এ জুনিয়র বিভাগে পরপর দুবছর সোনা জয় তাকে ঘিরে বড় সাফল্যের আশা জাগাচ্ছে।জাতীয় পর্যায়ে পদকের দৌড়ে জায়গা না করতে পারলেও মনিকা যে লম্বা রেসের ঘোড়া তা মানছেন সকলে। জাতীয় স্কুল ও চ্যাম্পিয়ন শীপে অল্পের জন্যে শেষ চারে জায়গা হয়নি। কোচ সঞ্জয় প্রসাদ বলছেন পরিকাঠামো, সচেতনার অভাব তার বক্সিং স্কুলের শিক্ষার্থীদের বড় সমস্যা। অদৃশ্য প্রলোভন অনেকেই ভালো শুরুর পরেও ছিটকে দিয়েছে। মনিকাকে তিনি আগলে রাখছেন।কিন্তু লড়াই টা বেশ কঠিন। মেরি কমের সাফল্য ওদের প্রেরণা। মনিকা বলছেন মেরি কম পারলে তারাও পারবেন। পড়াশোনা তাদের আলো দেবে। বক্সিং তাদের স্বচ্ছলতা আনবে। তাই বক্সিং রিং এ আরও বেশি ক‍রে পড়ে থেকে সাফল্য কে পাখির চোখ করতে চান।
এক কামরার ঝুপড়িতে গাদাগাদি করে দিন যাপন। অভাবের জোরালো হাতছানি তে দিগভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তা সত্ত্বেও মেরি কমের অদৃশ্য উপস্থিতি ফাইট করার অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যায়।



Body:মনিকা


Conclusion:
Last Updated : Oct 12, 2019, 11:30 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.