নিউ টাউন, 9 সেপ্টেম্বর : ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন নিয়ে ফের প্রশ্ন তুললেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ৷ একইসঙ্গে দুর্গাপুজোয় ক্লাবগুলিকে অনুদান দেওয়ার পেছনে উদ্দেশ্য নিয়ে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করলেন ৷ গতকাল নিউটাউনে প্রাতঃভ্রমণ সেরে সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি ৷
করোনাকালে উপনির্বাচন প্রসঙ্গে-
কলকাতায় প্রতিদিন নতুন করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় 100 ছুঁই ছুঁই ৷ এমতাবস্থায় রাজ্যের 3টি কেন্দ্রে নির্বাচনের কথা ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন ৷ এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভবানীপুর কেন্দ্র, কারণ সেখানে প্রার্থী স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
করোনাকালে উপনির্বাচনে একেবারে মত নেই গেরুয়া শিবিরের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ৷ তিনি বলেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশন এই করোনা পরিস্থিতিতে পৌর ভোট করা নিয়ে নিমরাজি ৷ তারা লিখে পাঠিয়েছিল যে এখন কোভিডকালে পুর নির্বাচন করার মতো পরিস্থিতি নেই ৷ তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, তাতে নির্বাচনের সময় এই সংক্রমণের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে ৷ তাই তাঁর বড় প্রশ্ন, "এই পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে কী ভাবে এই উপনির্বাচন হচ্ছে ?"
কংগ্রেস আস্তে আস্তে উঠে যাচ্ছে-
ভবানীপুরে উপনির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস ৷ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী জানান এআইসিসির নির্দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়া হচ্ছে না, প্রচারেও থাকবে না কংগ্রেস ৷
এটা নাকি গতবারেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল, জানালেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ ৷ তিনি কংগ্রেসকে বিদ্রুপ করে বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, তোমাদের রোলটা আমি প্লে করব ৷ তাই আজ কংগ্রেস ছেড়ে দিয়েছে ৷" তাঁর মতে এবার ফাঁকা ময়দান ৷ তবে তিনি কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে বলেন, "কংগ্রেসের ব্যবসা গুটিয়ে গিয়েছে ৷ নিজের নাক কেটে আমাদের যাত্রাভঙ্গ করার চেষ্টা করেছে ৷" আর তার পরিণাম ? তিনি জানালেন, কংগ্রেস আস্তে আস্তে উঠে যাচ্ছে ৷ তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী, "লোকসভাতেও পরের বার কংগ্রেসের কোনও প্রতিনিধি থাকবে না ৷"
আরও পড়ুন : Durga Puja Grant: এবছরও দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে ₹50 হাজার করে অনুদান রাজ্যের
তৃণমূলের তো একজনই প্রার্থী-
ভবানীপুরে উপনির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিজেপি কাকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করাবে, এ নিয়ে উত্তেজনা রয়েছে দু'দলে ৷ আর সারা দেশেও ৷
কিন্তু দিলীপ ঘোষ বললেন, "তৃণমূলের তো একজনই প্রার্থী, একজনেরই পার্টি ৷ ভারতীয় জনতা পার্টি সর্বভারতীয় পার্টি ৷ তার একটা প্রক্রিয়া আছে ৷" তবে তিনি জানালেন যে, প্রার্থীদের নাম ঠিক করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ হয়তো আজ বিজেপির সংসদীয় কমিটি নাম ঘোষণা করতে পারে ৷
অর্জুন সিংয়ের বাড়িতে বোমাবাজি রুটিন প্রোগ্রাম-
বুধবার ভোররাতে ব্যারাকপুরে বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংয়ের (Arjun Singh) বাড়িতে বোমাবাজি চালায় দুষ্কৃতীরা ৷ অল্পের জন্য রক্ষা পান কর্তব্যরত সিআরপিএফ জওয়ানরা । অর্জুন সিং এই মুহূর্তে দিল্লিতে রয়েছেন ।
এই ঘটনাকে বিজেপি রাজ্য সভাপতি "রুটিন প্রোগ্রাম" বলে উল্লেখ করেন ৷ তিনি বলেন, "অর্জুন সিংয়ের মতো নেতাকে ওরা ঝোঁকাতে পারছে না ৷ তাই তাঁর ব্যবসা, পরিবার সবাইকে উত্যক্ত করার চেষ্টা করছে ৷" তবে এই ঘটনা প্রথম নয় ৷ তিনি জানিয়েছেন যেদিন থেকে অর্জুন সিং বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, প্রায় আড়াই বছর ধরে এরকম চলছে ৷ কিন্তু তিনি অর্জুন সিংয়ের প্রশংসা করে বলেন, "তিনি তার যোগ্য জবাব দিচ্ছেন, টক্কর দিচ্ছেন ৷" দিলীপবাবুর মতে, যারা শক্তি দিয়ে, গুন্ডা দিয়ে, গায়ের জোর দিয়ে, পুলিশ দিয়ে রাজনীতি করতে চায়, মানুষ একদিন তাদের জবাব দেবে ৷
আরও পড়ুন : Arjun Singh : ভাটপাড়ায় অর্জুন সিংয়ের বাড়িতে বোমাবাজি, নিন্দা রাজ্যপালের
পুজোয় অনুদান দিয়ে সরকার দলে টানতে চাইছে-
আসন্ন দুর্গাপুজোয় ক্লাবগুলিকে অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার ৷ এ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা জানালেন, দুর্গাপুজো যাঁরা করেন, তাঁরা সমাজের সাহায্যের জন্য করেন ৷ তিনি বলেন, "সরকারের কাছে তাঁরা কখনও হাত পাতেননি ৷ সরকার তাঁদের ইচ্ছে করে নিজের কাছে নিয়ে আসছে ৷ পয়সা দিয়ে কিনে নেওয়ার চেষ্টা করছে ৷" তাঁর মনে হয় সরকারের এ বিষয়ে বেশি হস্তক্ষেপ করার দরকার নেই ৷ আর সেই পয়সা নিয়ে পুজো করারও দরকার নেই ৷ কারণ তিনি বলেন, "দুর্গাপুজো নিজেদের সহযোগিতায় শুরু করেছিলেন সাধারণ মানুষ ৷ সেভাবেই তা হওয়া উচিত ৷ তাহলে মানুষের গর্ব করার মতো বিষয় থাকবে ৷"
সাম্প্রতিক দুর্গাপুজোর অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর আরও মনে হয় এই টাকা দেওয়ার পরিবর্তে হাজার রকমের শর্ত দেবে সরকার ৷ উদাহরণ হিসেবে তিনি মনে করিয়ে দেন কবে নিরঞ্জন হবে, কবে থেকে রাজ্যে পুজো শুরু হবে, কবে উদ্বোধন হবে, সব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক করতেন ৷ কিন্তু তিনি বলেন, "এর আগে আমাদের সমাজে এরকম কোনও দিন ছিল না ৷" এই অনুদান দেওয়াকে "ডোল পলিটিক্স" আখ্যা দিয়ে বিজেপি নেতা বলেন, "দেশের উন্নয়নের টাকা কোথাও ক্লাবে, কোথাও পুজোতে দিয়ে নয়ছয় হচ্ছে, কেবলমাত্র ভোট কেনার জন্য় ৷ এতে সাধারণ মানুষের এবং আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হচ্ছে ৷"
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে-
কলকাতা-সহ রাজ্যে উপনির্বাচনের দিন ঘোষণার পরে এই পুজোয় অনুদানের ঘোষণায় নির্বাচনী আচরণবিধি (Model Code of Conduct, MCC) লঙ্ঘন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ৷
বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেন, "এতে আমাদের মনে হয়েছে এমসিসি লঙ্ঘন করা হয়েছে ৷" তিনি জানিয়েছেন, এ নিয়ে বিজেপির নেতারা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন ৷ বিশেষত কলকাতা জেলায় উপনির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পর এ কাজ আইনানুগ নয় ৷ তিনি বলেন, "যেখানেই নির্বাচন হোক না কেন, সেখানে নির্বাচনী আচরণবিধি শুরু হয়ে যায় ৷ কলকাতা আর মুর্শিদাবাদ জেলাতেও রয়েছে ৷" তিনি এই অনুদানকে দানখয়রাতের প্রোগ্রাম বলে জানিয়ে অভিযোগ করেন, খোদ মুখ্যমন্ত্রী এখানে প্রার্থী ৷ তাই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে ৷