কলকাতা, 1 মে: কলকাতায় পা রেখেই স্মৃতিতে ডুব দিলেন 6 বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনাজয়ী বিশ্বের প্রথম মহিলা বক্সার মেরি কম। রবিবার সন্ধ্যায় এক নামজাদা হীরের গয়না প্রস্তুতকারী সংস্থার পক্ষ থেকে পদ্মশ্রী ও পদ্মভূষণ খ্যাত মেরি কমকে বিশেষ সম্মান জানানো হয়। পাশপাশি ভারতের বক্সিং কিংবদন্তির জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে একটি দৃশ্য-শ্রাব্য উপস্থাপনাও প্রদর্শিত হয়। সেটি দেখেই আবেগে ভেসে যান মেরি।
মেরি কমের স্মৃতিতে উঠে আসে তাঁর প্রথম জীবনের লড়াইয়ের কথা। ভালো খেললেও পরিবারে ছিল অর্থের অভাব। মাত্র একটা বক্সিং গ্লাভস দিয়েই তাঁকে খেলে যেতে হত একের পর এক ম্যাচ। তিনি বলেন, "আমি যখন খেলা শুরু করেছি সেই সময় মেয়েদের বক্সিং খেলা খুব একটা প্রচলন ছিল না। যার ফলে রাজ্য তথা কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে কোনওরকম সাহায্য পায়নি। খেলার জন্য যে সমস্ত কিটের প্রয়োজন হয় সেইগুলো কিনে দেওয়ার সামর্থ্য আমার পরিবারের ছিল না। আন্তর্জাতিক স্তরে পুরস্কার পাওয়ার পর সরকার আমার কথা ভাবতে শুুরু করে।"
এখানেই শেষ নয়, মেরি কম একবার আত্মহত্যার পথও বেছে নিয়েছিলেন! সেই কথাও কলকাতাবাসীকে জানালেন তিনি। কোনও ব্যথাই তাঁকে কাঁদাতে পারেনি। শুধুমাত্র একবার তাঁর পাসপোর্ট হারিয়ে যায়। সেই সময় পরিবারের অবস্থা বিবেচনা করে দ্বিতীয়বার পাসপোর্ট তৈরি করা কতটা কষ্টসাধ্য তা মনে করেই আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিশ্বের এই খ্যাতনামা খেলোয়াড় মেরি কম।
পাশাপাশি তিনি এও জানান, তাঁর খেলোয়াড় জীবনের তিনি একবার গুরুতরভাবে চোট পেয়েছিলেন। সেই চোট কাটিয়ে ওঠা ছিল প্রায় অসম্ভব। তাঁর কথায়, "বহু মানুষ ওই চোট কাটিয়ে উঠতে পারেন না। খেলার জীবন অনেকেরই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি।" দিনের পর দিন ওই ব্যথা সহ্য করেও নিজের জায়গা থেকে এক বিন্দুও সরেননি মেরি কম।
আরও পড়ুন: ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করবে মেরি কম নেতৃত্বাধীন কমিটি
সেই চোট সামলে 2024-এর অলিম্পিকস এবং এশিয়ান গেমসে তিনি আদৌ খেলতে পারবেন কি ? জবাবে তিনি স্পষ্টই জানিয়ে দেন এখনও তিনি তিন থেকে চার বছর অনায়াসে খেলে যাবেন। বর্তমানে বক্সিং প্রশিক্ষণ না-করলেও নিয়মিত ট্রেড মিলে হাঁটা তাঁর অভ্যাসে রয়েছে। তাঁর কথায় উঠে এসেছে অন্য আরেক মানবিকতার রূপ। তিনি পরিষ্কার জানিয়েছেন, বর্তমানে হিংসা, রাজনীতি পরিবার ও মানুষের মধ্যে ঢুকে গিয়েছেন যা কখনই শ্রেয় নয়। এমনকী নতুন প্রজন্মে যারা উঠে আসছে তাঁরাও ফ্রেম পেয়ে গেলে মানবিকতা ভুলে যায়। মেরি কমের মতে সবাইকে ভালোবাসা ও সম্মান করা উচিত। তাহলেই একজন উন্নতির শিখরে পৌঁছতে পারবে।