ধনেখালি(হুগলি), 31 অক্টোবর: আলোর উৎসব দীপাবলি ৷ বাড়ি বাড়ি সেজে উঠবে প্রদীপে ৷ আলোকিত হবে চারিদিক ৷ আর কালীপুজো বা দীপাবলির অন্যতম উপাদান হল মাটির প্রদীপ ৷ তবে এখন শুধু মাটির প্রদীপ নন, সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে গোবরের প্রদীপও ৷ এতদিন গোবর দিয়ে বিভিন্ন সার তৈরি বা জ্বালানি হিসাবে ঘুটে বানানো হলেও, এবার সেই গোবর দিয়েই তৈরি হচ্ছে প্রদীপ ৷ যাতে ছড়াবে না দূষণ ৷ হুগলির ধনেখালি 2 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের গেঁটেগোড়ি নামে একটি প্রত্যন্ত গ্রামে এই গোরবের প্রদীপ তৈরি করছেন একদল গূহবধূ ৷
জানা গিয়েছে, মাটির চেয়েও ভালো মানের প্রদীপ হচ্ছে গোবরের । প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদানের সহ-মিশ্রণে তৈরি করা হচ্ছে এগুলি । ফেলে দেওয়া গোবরকে প্রক্রিয়াকরণ করে প্রদীপ ও ধূপ বানিয়ে আর্থিকভাবে সচ্ছলতার মুখ দেখছেন গ্রামের মহিলারা । যখন গোবর থেকে বিভিন্ন জায়গায় দূষণ ছড়াচ্ছে । তখন গরুর এই গোবর কাজে লাগিয়ে দূষণ মুক্ত পরিবেশ গড়তে উদ্যোগী হয়েছেন সুদাম কোলে । নাগপুর গো অনুসন্ধান কেন্দ্রের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারে তিনি ।
সুদাম কোলে বলেন, "করোনার পর থেকে এই গোবরের ধূপ ও প্রদীপ গড়ার কাজ শুরু হয়েছে । গ্রামের বেশি কিছু মহিলাদের দিয়ে এই কাজ করানো হচ্ছে । এই প্রদীপ তৈরি করতে গোবর, চুন, গেরি মাটি ও গাওয়ার গাম লাগে । নিদিষ্ট অনুপাতে এগুলি দিয়ে জিনিস তৈরি করা হয় । আমাদের দেশে নাগপুর, হরিয়ানা ও ছত্রিশগড় সরকারি সাহায্যে রং-সহ নানা জিনিস তৈরি করছে গোবর দিয়ে । বর্তমানে আমার কোনও সরকারি সাহায্য পাচ্ছি না । তবে পেলে অনেকটাই লাভবান হব ।"
তাঁর কথায়, সরকারি সাহায্য পেলে এই রাজ্যে নয়, বরং অন্যান্য রাজ্য ও বিদেশেও যোগান দেওয়া যাবে গোবরের তৈরি জিনিসপত্রের । এই গোবরের প্রদীপ মাটির চেয়ে অনেক বেশি হালকা ও টেকসই । আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়েও যায় না তাড়াতাড়ি । এছাড়াও গোবরের ইঁট ও গণেশ-সহ নানা ধরণের জিনিস তৈরি করা হচ্ছে ৷ এর মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে আগামিদিনে ।
আরও পড়ুন: কালীপুজোর আগে মন্দার মুখে ঐতিহ্যবাহী দিওয়ালি পুতুলের ব্যবসা
বর্তমানে একদিনে ধূপ ও প্রদীপ বানিয়ে 100 থেকে 400 টাকা পর্যন্ত রোজগার করা সম্ভব বলে দাবি করেছেন মহিলারা । দুটি সংস্থার অর্ডার অনুযায়ী কাজ করছেন তাঁরা । আগামিদিনে সরকারি সুযোগ পেলে আরও বড় আকারে কাজ করা যেতে পারে । শুধু এই গ্রামে নয়, অন্যান্য গ্রামের মহিলারাও উৎসাহী হচ্ছেন এই কাজে । রিম্পা কোলে বলেন, "গ্রামের অন্যান্য মহিলাদের মতো আমিও এই কাজ করি । আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ । কিছু কাজ করে আর্থিকভাবে সাহায্য হলে ভালোই হয় । প্রদীপ ও মডেল তৈরি করে 100 টাকা থেকে 200 টাকা পর্যন্ত রোজকার করি ।"
অপর মহিলা কর্মী বন্দনা কোলের বক্তব্য, "লকডাউন থেকে প্রথম আমিই গোবর দিয়ে ধূপ তৈরি করা শুরু করি । প্রতিদিন সংসার সামলে 1000 পিস ধূপ তৈরি করি । এটা করলে 200 টাকা রোজগার হয় । গোবর দিয়ে ধূপ ছাড়াও বিভিন্ন রঙের প্রদীপ,গণেশ ও লক্ষ্মীর চরণ তৈরি করা হয় । আমাদের সঙ্গে অন্যান্য গ্রামের মহিলারাও কাজ করেন ।"