ETV Bharat / state

Sarat Chandra Chattopadhyay: দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাব, ধ্বংসের মুখে কথাশিল্পী শরৎচন্দ্রের জন্মভিটে

author img

By

Published : Jan 12, 2023, 9:08 PM IST

রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে পর্যটন দফতরের আওতায় আনা হলেও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মভিটে (Home of Sarat Chandra Chattopadhyay) এখনও অযত্নে পড়ে রয়েছে ৷ সংস্কারের অভাবে নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে সাহিত্যিকের স্মৃতি বিজড়িত স্থান ৷

ETV Bharat
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মভিটে

দেবানন্দপুরে অবহেলায় পড়ে রয়েছে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মভিটে

দেবানন্দপুর (হুগলি), 12 জানুয়ারি: রাজ্য সরকারের তরফে পর্যটন দফতরের আওতায় আনার পরেও অবহেলায় পড়ে রয়েছে কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মভিটে দেবানন্দপুর (Present Condition of Sarat Chandra Home) ৷ হাওড়ার দেউলটিকে সাজানো হলেও ব্রাত্য থেকে গিয়েছে দেবানন্দপুর । সংস্কারের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে সাহিত্যিকের জন্মভিটে-সহ শরৎ সংগ্রহশালা ও গ্রন্থাগার,প্যারি পণ্ডিতের পাঠশালা ৷ এখানে নেই কোনও নিরাপত্তারক্ষী বা দেখভালের জন্য কোনও কর্মী । নেই সিসিটিভি ক্যামেরা । শরৎচন্দ্রের নামাঙ্কিত গ্রন্থাগারটিও প্রতিদিন খোলা থাকে না । স্থানীয় এক চা দোকানী এই ঘরের তালা খোলেন ও বন্ধ করেন । বহু পর্যটক এখানে ঘুরতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যান ৷ সবই ভগ্নপ্রায় ৷ স্থানীয় প্রশাসন প্রতিশ্রুতি দিলেও আদপে কোনও কাজই হয়নি ৷

চুঁচুড়া-মগরা পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত দেবানন্দপুর গ্রাম ৷ 1876 খ্রিস্টাব্দের 15 সেপ্টেম্বর এই গ্রামেই জন্মগ্রহণ করেন কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (Sarat Chandra Birth Place Debanandapur)। এখানেই তাঁর বাল্যজীবন এবং প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা শুরু হয় । এখানে অবস্থিত প্যারি পণ্ডিতের পাঠশালা, বিশালাক্ষী মন্দির, গড়ের জঙ্গল সরস্বতী নদীর বাঁশের ব্রিজ, দত্ত মুন্সীদের পুজোর মণ্ডপ, হেদুয়ার পুকুর এইসব জায়গার নাম বারবার উঠে এসেছে তাঁর সাহিত্যে । দেবানন্দপুরে থাকার সময়ই কাশীনাথ রচনা করেছিলেন ।তাছাড়াও দত্তা, বিরাজ বৌ, রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত-সহ একাধিক সাহিত্যে সরস্বতী নদী ও দেবানন্দপুরের বহু স্মৃতি ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি । সেইসব জায়গা আজ যত্নের অভাবে নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে ৷ শরৎচন্দ্রের স্ট্যাচু ও সেমিনার হল থাকলেও তা দেখাশোনার লোক নেই ৷

আরও পড়ুন : রবীন্দ্রনাথের পর সাহিত্যে দ্বিতীয় নোবেল পেতেন তারাশঙ্কর, প্রয়াণে হাতছাড়া ইতিহাস

সংগ্রহশালায় লেখকের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস রয়েছে ৷ তাঁর জীবনী তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন মডেলের মাধ্যমে । তবে দেখভালের অভাবে অদূর ভবিষ্যতে তাও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসীরা ৷ দূরদূরান্ত থেকে সাহিত্যপ্রেমী মানুষরা আজও আসেন কথা সাহিত্যিকের গ্রাম দেখতে । সরকারি তরফে 11 কোটি টাকার একটা প্রকল্পের ঘোষণা করা হলেও তা এখনও বাস্তবে রূপ পায়নি ।

কেন শরৎচন্দ্রের দেবানন্দপুর এখনও বঞ্চিত ? প্রশ্ন পর্যটকদের । কলকাতা থেকে আগত পর্যটক চৈতালী চক্রবর্তীর কথায়, "এত বড় একজন সাহিত্যিকের এই অবহেলা তো প্রাপ্য নয় । যাঁর গল্প পড়ে আমরা বড় হয়েছি । বর্তমান প্রজন্ম ধীরে ধীরে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে ভুলে যাচ্ছে । মেলা, পুজো সবকিছুই তো হচ্ছে । রাজ্য সরকারের এই বিষয়ে তৎপর হওয়া উচিত । এখান থেকে অনেককিছু জানার এবং শেখার আছে ৷ এই বিষয়ে দ্রুত নজর দিক সরকার ।"

আরও পড়ুন : ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানির ইতিহাস আঁকড়ে আজও পূজিত হন বনদুর্গা

এই বিষয়ে গ্রামবাসী মধুসূদন চক্রবর্তী বলেন,"দেবানন্দপুরে বহু পর্যটক আসেন । শরৎচন্দ্রের সংগ্রহশালা ও তাঁর নানা ইতিহাস দেখতে । কিন্তু যে আশায় তাঁরা আসেন তা পূরণ হয় না ৷ সংস্কারের অভাবে প্রায় সবই নষ্টের মুখে ৷ শরৎচন্দ্রের বিভিন্ন লেখনীর মাধ্যমে দেবানন্দপুরের নানা অংশের পরিচয় পাওয়া যায় । এখানে সেইসব ইতিহাসই রয়েছে । সংগ্রহশালা, শরৎচন্দ্র স্মৃতি মন্দির, বসতভিটে থেকে সেমিনার হল সব কিছুই দেখভালের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । রাজ্য সরকার এই বিষয়ে দ্রুত দৃষ্টি দিক । পর্যটকদের জন্য এখানে বিশ্রামের কোনও জায়গা নেই, নেই শৌচাগারের ব্যবস্থাও ৷ কেউ রাত্রিবাস করার কথা ভাবলে তারও কোনও জায়গা নেই । যাঁরা এখানে আসেন তাঁরা রীতিমতো ক্ষুব্ধ আর হতাশ হয়ে ফিরে যান ৷"

তবে এই বিষয়ে আশ্বস্ত করে চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার বলেন, "আমরা আশা করেছিলাম দেবানন্দপুরে একটা পর্যটন কেন্দ্র তৈরি করার । কিন্তু এখনও তা করে উঠতে পারিনি । চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শরৎচন্দ্রের জন্মভিটেকে নতুন করে সাজিয়ে তোলার ।"

আরও পড়ুন : দোকানেই সাহিত্যচর্চা, পাগল কটাক্ষেও হার না-মানার নাম বেহালার পিন্টু

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.