কলকাতা, 26 জুন : সর্ষের মধ্যেই কি লুকিয়ে রয়েছে ভূত ! কলকাতা পুরনিগমের (Kolkata Municipal Corporation) নাম করে যে প্রতারণা চক্রের ফাঁদ পেতেছিল দেবাঞ্জন দেব, তাতে পুর-প্রশাসনের কেউ জড়িত রয়েছে বলে সন্দেহ ৷ কারণ, পুরনিগমের নামে ভুয়ো ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া, ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট খোলা আর শেষপর্যন্ত ভুয়ো টিকাকরণের শিবিরের আয়োজন ৷ পুরনিগমের কারওর সঙ্গে যোগসাজস ছাড়াই কি করে এত কিছু করে ফেলল ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডের অভিযুক্ত দেবাঞ্জন ?
প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে ৷ যদিও কলকাতা পুরনিগমের মুখ্য প্রশাসক তথা প্রাক্তন মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) জানিয়েছেন, এই ঘটনার সঙ্গে কলকাতা পুরনিগমের কোনও আধিকারিক বা কোনও কর্মী যুক্ত থাকেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
আরও পড়ুন : Kasba Vaccine Controversy : দেবাঞ্জনের সঙ্গে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারের পুরোন ছবি ভাইরাল
প্রসঙ্গত, ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডের (Fake Vaccine Controversy) তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই নতুন নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে ৷ অভিযোগ, কলকাতা পুরনিগমের নাম করে দেবাঞ্জন 90 লক্ষ টাকার দুর্নীতি করেছিল ৷ পুরনিগমের নামে জাল টেন্ডারও বের করে ৷ এমনকী ভুয়ো ওয়ার্ক অর্ডার করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূর্তি তলায় বসানো ফলক তৈরি করায় । তাছাড়া কলকাতা পুরনিগমের নাম ব্যবহার করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও খোলে ৷ যে অ্যাকাউন্টে লেনদেনও হয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে ৷
পুরনিগমকে অন্ধকারে রেখে এত কাজ করা সম্ভব, উঠছে প্রশ্ন ৷ ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, কলকাতা পুরনিগমের নাম ব্যবহার করে টেন্ডার দেওয়া সহজ কাজ নয় । তাহলে এটা হল কীভাবে ? রাজ্য সরকারের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানাচ্ছেন, পুলিশ তদন্ত করছে । তদন্তের জন্য বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে ।
আরও পড়ুন : Dilip Ghosh : ভুয়ো ভ্যাকসিন নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি দিলীপের
এদিকে এই ঘটনায় দুই প্রাক্তন কাউন্সিলরের নাম শোনা যাচ্ছে ৷ অভিযোগ, কলকাতা পুরনিগমের প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেনের সঙ্গেই নাকি পুরনিগমের সদর দফতরে এসেছিল দেবাঞ্জন ৷ আর তালতলা এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর ইন্দ্রাণী সাহা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেবাঞ্জনের আগে থেকেই পরিচয় ছিল ৷ তবে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ ফিরহাদ হাকিম ৷ তিনি জানাচ্ছেন, শুধু ওঁদের কেন অনেকেরই নাম উঠেছে ! তার কারণ যাঁরা জনপ্রতিনিধি, তাঁদের সহজেই অভিযুক্ত করা যায় । ফলক বসানোর সময় ইন্দ্রাণী অনুষ্ঠানে ছিলেন না ৷ শান্তনু সেন মানুষকে সাহায্য করার জন্য পিপিই কিট, মাস্ক ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করেছিলেন । দেবাঞ্জন দেবের সম্পর্কে কারও জানা ছিল না ।
অন্যদিকে কসবার ভুয়ো টিকাকরণ শিবির নিয়ে কেন পুরনিগম কোনও ব্যবস্থা নেয়নি, সেই প্রশ্ন উঠছে ৷ স্থানীয় কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ অভিযোগ করেন, কলকাতা পুরনিগমের কোনও ক্যাম্পের আয়োজন করেনি । এই অভিযোগ পাওয়া মাত্রই পুরনিগমেরর তরফে স্পেশাল কমিশনার (স্বাস্থ্য বিভাগ) ও তিনি স্থানীয় থানায় তিনি অভিযোগ করেন ।
আরও পড়ুন : Fake vaccine kolkata : ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডে কেন্দ্রীয় তদন্ত চেয়ে হর্ষ বর্ধনকে চিঠি শুভেন্দুর
শেষে খবর পাওয়ার পর স্থানীয় ওয়ার্ডের ভারপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার ক্যাম্প পরিদর্শন করেছিলেন । তিনি এই ক্যাম্পের বিষয় কলকাতা পুরনিগমের ডেপুটি সিএমওএইচ তরুণ সাঁপুইকে ফোনে জানান । তরুণ সাঁপুই জানিয়েছেন, তিনি এরপর দেবাঞ্জন দেবের সঙ্গে কথা বলেন এবং স্থানীয় কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন । দেবাঞ্জন দেব তাঁকে জানায়, এই টিকাকরণ অনুষ্ঠানে স্বয়ং পুর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিমের আসার কথা রয়েছে । আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে, এর পরও কেন সন্দেহ হল না ? কেন কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হল না ?
যদিও পুর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, স্থানীয় কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষের অভিযোগের ভিত্তিতেই ভুয়ো করোনার টিকাকরণের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্যাম্প বন্ধ করে দেয় । পুরো বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে ৷ অভিযুক্তরা শাস্তি পাবে । যদি কলকাতা পুরনিগমের আধিকারিকের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাহলে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে ৷
আরও পড়ুন : Kasba vaccine controversy : নিজের বাবাকেও কি ভুয়ো ভ্যাকসিন দিয়েছিল দেবাঞ্জন ? উঠছে প্রশ্ন