কলকাতা, 5 জুন: শনিবার রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের (Sovandeb Chattopadhyay remarks on employment) বক্তব্যে বিরোধীরা তাদের হাতে নতুন করে অস্ত্র পেয়েছে । কাল থেকেই তারা কর্মসংস্থান প্রশ্নে তৃণমূল কংগ্রেসকে কাঠগড়ায় তুলছে । তবে রাজ্যের শাসক দল অবশ্য এই অবস্থায় প্রবীণ মন্ত্রীর পাশেই থাকছে । এ ক্ষেত্রে তাদের বক্তব্য, মন্ত্রীর বক্তব্যের একাংশ তুলে ধরে অহেতুক বিতর্ক তৈরির চেষ্টা হচ্ছে ।
নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্যে (Sovandeb Chattopadhyay on employment)। এই বছরে পাশ হওয়া সব মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শিক্ষিত বেকার হয়ে গেল বলে শিক্ষা মেলায় মন্তব্য করেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় । তারপর থেকেই এই নিয়ে বিতর্ক চলছে । বিরোধী দলগুলো এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সরকারকে কোনঠাসা করার কোনও সুযোগই ছাড়তে রাজি নয় । কাজেই এই বিষয়টি নিয়েই কাল থেকে চলছে রাজনৈতিক তরজা ।
শনিবার দুপুরে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে শিক্ষা মেলায় শোভনদেব বলেন, এ বছর মাধ্যমিকে 12 লক্ষ পড়ুয়া পরীক্ষা দিয়েছে । তাদের মধ্যে পাশ করেছে 86 শতাংশ । ওরা সবাই শিক্ষিত বেকার হয়ে গেল । এর পর ওরা উচ্চমাধ্যমিক দেবে, গ্র্যাজুয়েশন দেবে, মাস্টার্স দেবে । এত ছেলে তৈরি হচ্ছে প্রতি দিন, কিন্তু ওরা ঘুরে বেড়াচ্ছে । শুধু গ্র্যাজুয়েট হয়ে চাকরি পাওয়া যাচ্ছে না । শুধু এমএ পাশ করে মিলছে না চাকরি ।
শোভনদেবের এই মন্তব্যের পরই এই বিষয় নিয়ে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করতে দেরি করেনি বিরোধী দলগুলো । বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, মন্ত্রী রাজ্যের বাস্তব অবস্থার কথা বলেছেন । রাজ্যে যে কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে । মুখ্যমন্ত্রী যতই সিঙ্গুরে দাঁড়িয়ে এই শিল্প আনব, ওই শিল্প আনব বলুন - এ রাজ্যে কর্মসংস্কৃতিটাই লাটে উঠে গিয়েছে ।
আরও পড়ুন: Suvendu Slams Mamata Govt : বাংলাকে ভয়মুক্ত করবে বিজেপি, মালদায় দাবি শুভেন্দুর
সুকান্ত মজুমদার শুধু নন, ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা প্রবীণ বিজেপি নেতা তথাগত রায় এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে টুইট বার্তায় তৃণমূল কংগ্রেসকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি । শোভনদেবের প্রশংসা করে তিনি লেখেন, পশ্চিমবঙ্গে বেকারত্বের ছবিটা ভয়াবহ । তাঁর মতে, তৃণমূলের খুব কম নেতাই শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের মতো সত্ । মাধ্যমিকে 86 শতাংশ পাশ দেখে তিনি বলেছেন, এই 12 লক্ষ ছেলেমেয়েও শিক্ষিত বেকারদের তালিকায় শামিল হল । পশ্চিমবঙ্গে বেকারত্বের ভয়াবহ পরিস্থিতি তাঁর এই মন্তব্যেই প্রতিফলিত । এই আবহে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে ছাড়েননি কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরীও । তিনি বলেন, "আক্ষেপের কথা, আমরা যা বলছি সেটা সত্য । ইনফোসিস কর্তা বলছেন, আজকের পশ্চিমবঙ্গ অতীতের ছায়ামাত্র । তিনিও শোভনদেবের বক্তব্যের সঙ্গে একমত । কিন্তু শোভনদেবের পাশে দাড়ালে ওঁর চাকরি থাকবে না ।"
সুকান্ত মজুমদার বা তথাগত রায় শোভনদেবের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তৃণমূলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালে এর বিরোধিতা করেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ । তিনি এ ব্যাপারে কৃষিমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছেন । কুণাল ঘোষের কথায়, শোভনদেবের বক্তৃতার একটি অংশ তুলে বিরোধীরা সেটিকে বিকৃত করছে । শোভনদেব আসলে বলতে চেয়েছিলেন, আজকের দিনে মূলস্রোতের শিক্ষার পাশাপাশি পেশাদার প্রশিক্ষণ থাকা জরুরি । মেইনস্ট্রিম পড়ে আজকাল চাকরির সম্ভাবনা খুব কম ।
একইসঙ্গে তিনি তথাগতের টুইটের জবাব দিয়ে বলেন, যে ব্যক্তি নিজের দল সম্পর্কে কামিনা-কাঞ্চন মন্তব্য করেন, অর্থাত্ টাকা এবং মহিলা দিয়ে দল চলছে বলেন, নিজে কাচের ঘরে বসে তাঁর অহেতুক অন্যের দিকে ঢিল ছোড়া উচিত নয় । নরেন্দ্র মোদি তো বলেছিলেন, বছরে 2 কোটি করে চাকরি তৈরি করবেন । 2014 সাল থেকে 2022, গত আট বছরে 16 কোটি চাকরি হওয়ার কথা ছিল সে ক্ষেত্রে । কিন্তু আপনার পাড়ার কেউ কেন্দ্রের চাকরি পেয়েছেন বলে দেখান দেখি !
রবিবার শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন দলের শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম । রবিবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ফিরহাদ বলেন, "আমি পাশে ছিলাম । শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেছেন জেনারেল এডুকেশনে চাকরিবাকরি.. যেমন ধরুন আপনি যদি এমএ পড়েন তাহলে তার সঙ্গে বিএড - ডিএলএড পড়তে হবে । তাহলে চাকরির সুবিধা আছে । চাকরি নেই এ কথা কখনও শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেননি ।"