বারাসত, 17 সেপ্টেম্বর: পার্ক-দুর্নীতিকাণ্ডে বরাত পাওয়া এক বেসরকারি সংস্থাকে কাঠগড়ায় তুলে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল তৃণমূল পরিচালিত বারাসত পৌরসভা। এবার আর্থিক অনিয়মে অভিযুক্ত সেই সংস্থার হাতেই ঐতিহ্যবাহী সিরাজ উদ্যান সংস্কারের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হল ! অর্থাৎ, 'শাস্তি' দেওয়ার বদলে পৌর কর্তৃপক্ষ সংস্থাকে কার্যত 'পুরস্কৃত'-ই করল।
সিদ্ধান্ত ঘিরে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে উত্তর 24 পরগনা জেলার সদর শহর বারাসতে। পৌর কর্তৃপক্ষের এহেন সিদ্ধান্তে রীতিমতো বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে তাঁদের ভূমিকা নিয়েও। পার্ক তৈরিতে ওই বেসরকারি সংস্থার গাফিলতির কথা স্বীকার করেও তাঁদের কার্যত দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছেন খোদ পৌরসভার চেয়ারম্যান নিজেই। আর এতেই নতুন করে দুর্নীতির গন্ধ খুঁজে পাচ্ছে গেরুয়া শিবির। বারাসত চাঁপাডালি বাসস্ট্যান্ডের পাশে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী এই সিরাজ উদ্যান তৈরির ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল ওই বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে । শুধু তাই নয়, টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়েও ছিল অস্বচ্ছতার অভিযোগ। গোটা ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল কাউন্সিলর সুনীল মুখোপাধ্যায়ের।
চলতি বছরের 15 ফেব্রুয়ারি এই সংক্রান্ত একটি সংবাদ তুলে ধরেছিল 'ইটিভি ভারত'। সেখানে পার্কের সৌন্দর্যায়ন থেকে বিভিন্ন রাইডের বরাতে বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছিল। এমনকী বরাত পাওয়া ওই বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে পার্ক গড়ার যে অভিযোগ উঠেছিল, তাও তথ্য দিয়ে তুলে ধরা হয়েছিল। সেই সংবাদের জেরে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। প্রকাশিত খবরের জেরে সেই সময় নড়েচড়ে বসে পৌর কর্তৃপক্ষ। পৌরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার ও ফিনান্স অফিসারদের নিয়ে তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়েছিল।
আরও পড়ুন:কাকলী ঘোষদস্তিদারের তহবিলে তৈরি সিরাজ উদ্যান ! কোটি-কোটি দুর্নীতির অভিযোগ
সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে দুর্নীতিকাণ্ডে বরাত পাওয়া ওই বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন পৌরসভার বর্তমান তৃণমূল চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায়। কিন্তু, তারপর কেটে গিয়েছে বেশ কয়েক মাস ! ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটির রিপোর্টও জমা পড়েছে পৌরসভার চেয়ারম্যানের কাছে । তাতে বেসরকারি সংস্থার গাফিলতি ও ত্রুটির কথা স্পষ্টত উল্লেখ রয়েছে বলে খবর পৌরসভা সূত্রে। তার ভিত্তিতে অভিযুক্ত ওই সংস্থার বিরুদ্ধে পৌর কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক অথবা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে, এটাই স্বাভাবিক। অথচ, তার বদলে বরাত পাওয়া ওই বেসরকারি সংস্থার হাতেই পার্কের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে পৌরসভার তরফে ! আর কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত ঘিরেই প্রশ্ন উঠেছে।
বরাতে যদি ত্রুটি থেকেই থাকে, তারপর কোন ম্যাজিকে ভর করে ফের দায়িত্ব পায় বেসরকারি সংস্থাটি ? আর সবচেয়ে বড় বিষয়, বরাত পাওয়ার তিন বছরের মধ্যে কোটি টাকার পার্কের বিভিন্ন জিনিস নষ্ট হতে বসেছে। তার জেরে বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে দুর্নীতির ইঙ্গিত পাচ্ছেন খোদ পৌর আধিকারিকরা। সেখানে পৌর কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্ত দুর্নীতিকে প্রশয় দেওয়া নয় তো ? এমনই সব প্রশ্ন উঁকি মারতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে।