পণ ছাড়া বিয়ে করলে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দুই ব্যক্তির পুরুলিয়া, 27 ফেব্রুয়ারি: "করেছি পণ নেবো না পণ বউ যদি হয় সুন্দরী । কিন্তু আমায় বলতে হবে স্বর্ণ দেবে কয় ভরি ৷" সেই কবেই কবি পণ প্রথাকে ব্যঙ্গ করে একথা বলেছিলেন । তারপরে আজও কিন্তু পণ প্রথার এই মারণ ব্যাধি থেকে মুক্ত হতে পারেনি সমাজ । অতিরিক্ত পণের দাবিতে আকছার কত নিরুপমাকে অত্যাচারিত, নির্যাতিত হতে হচ্ছে প্রতিদিন ৷ কত প্রাণ অকালে ঝরে যাচ্ছে এই সর্বনাশা পণের দাবির কারণে ।
তবে আশার কথা এই যে, বর্তমানে কিয়দংশ শিক্ষিত যুবক এই পণ প্রথার কুফল বুঝতে পেরে এটি বন্ধের জন্য উদ্যোগী হয়েছেন । পুরুলিয়া জেলার জয়পুর থানা এলাকার শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা অভিরাম মাহাতো (Purulia News)। সামান্য একটি স্টেশনারি দোকান চালান সেই সঙ্গে কার্ড ছাপানোর কাজ করেন । তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে যদি কেউ পণ না-নিয়ে বিয়ে করেন তাহলে তিনি সেই যুবকের বিয়ের কার্ড ফ্রি-তে তৈরি করে দেবেন । তাঁর এহেন উদ্যোগকে ইতিমধ্যেই সাধুবাদ জানাতে শুরু করেছে সকলে ৷ বেশ কিছু বন্ধু তাঁকে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান তিনি ।
তাঁর কথায়, "মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে অনেক সময় দেখেছি গরিব পরিবারের পিতাদের সর্বস্বান্ত হতে হয় ৷ তাই আমি মনস্থ করেছি এই ব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব ৷ আমার দেখে যদি আরও কিছু যুবক এগিয়ে আসে তাহলে খুব ভালো হয় । সময় বদলেছে তাই মানুষের চিন্তাভাবনারও বদল ঘটা দরকার ।" তবে অভিরামবাবু পরিষ্কার বার্তা দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন যে পাত্রপক্ষ পণ নিচ্ছেন না সেটা হলফ করে জানান দিতে হবে বিয়ের কার্ডে । যেন সেই বার্তা আরও অনেকের কাছে ছড়িয়ে পড়ে যে পণ নেওয়া এবং দেওয়া অপরাধ । তাঁদের সম্প্রদায়ের মধ্যে দিন দিন যে পণের দাবি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তা রোধে সকলেই যদি এগিয়ে আসে তাহলে খুব ভালো হয় বলে মনে করেন অভিরাম । তবে তিনি নিজের সম্প্রদায় ছাড়া অন্য সম্প্রদায়ের গরিব যুবকদেরও এই সুবিধা দিতে চান, তবে সেটি যাচাই করার পরই ।
অভিরামবাবুর এই উদ্যোগের পরই এগিয়ে এসেছেন জয়পুর থানা এলাকার দাড়িকুড়ি এলাকার রবীন্দ্রনাথ মাহাতো নামে এক ব্যক্তি । তিনি ঘোষণা করেছেন যে মাহাতো সম্প্রদায়ের কোনও যুবক পণ ছাড়া বিবাহ করলে তিনি বরের গাড়ি ভাড়া বাবদ 2 হাজার টাকা দিয়ে সাহায্য করবেন । তাঁর কথায়, "ভেবেছিলাম জয়পুর থানা এলাকার ব্যক্তিদের জন্য এই ব্যবস্থা সীমাবদ্ধ রাখব কিন্তু ইতিমধ্যে আমার সঙ্গে তিনজন যোগাযোগ করেছেন যাদের মধ্যে দু'জন আড়ষা থানা এবং একজন বরাবাজার থানা এলাকার ৷ তাঁদেরকেও ভাবছি সাহায্য করব । পণের কারণে অনেক বিয়ে ভেঙে যায় দেখে খুব খারাপ লাগে তাই আমার এই সিদ্ধান্ত ।" এইভাবে যদি আরও কিছু মানুষ এগিয়ে আসেন তাহলে ভালো হয় বললেন একটি বেসরকারি হাসপাতালে ফার্মাসিস্টের কাজ করা রবীন্দ্রনাথ মাহাতো ।
আরও পড়ুন :পুরুলিয়ায় গার্হস্থ্য হিংসা, পণ চেয়ে ও সন্তান না-হওয়ার কারণে দুই বধূকে নির্যাতনের অভিযোগ