পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Anubrata Mondal: বীরভূমে কি 'অনুব্রতরাজ' শেষ? একনজরে অনুব্রতনামা

তৃণমূলের দোর্দন্ডপ্রতাপ নেতাকে বৃহস্পতিবার গরুপাচার-কাণ্ডে গ্রেফতার করেছে সিবিআই । আজ থেকেই শুরু অনুব্রত মণ্ডলের জেরা পর্ব ৷ ফিরে দেখা যাক তার অনুব্রতনামা (Anubrata Mandal) ৷

Anubrata Mandal
একনজরে অনুব্রতনামা

By

Published : Aug 12, 2022, 12:24 PM IST

Updated : Aug 12, 2022, 3:53 PM IST

বীরভূম, 12 অগস্ট: তৃণমূলের দোর্দন্ডপ্রতাপ নেতাকে বৃহস্পতিবার গরুপাচার-কাণ্ডে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই । অনুব্রতকে আজ থেকেই জেরা করবেন তদন্তকারীরা ৷ ফিরে দেখা যাক তার অনুব্রতনামা (Anubrata Mondal)৷

1. 1960 সালের 1 এপ্রিল জন্ম । বীরভূমের নানুরের হাটসেরান্দি গ্রামে বড় হয়ে ওঠা অনুব্রত মণ্ডলের । তাঁরা তিন ভাই, সুব্রত, অনুব্রত ও প্রিয়ব্রত ৷ তিন ভাইয়ের মধ্যে মেজো ছেলে অনুব্রত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন ।

2. পড়াশোনা শেষে বাবার দোকান দেখভাল করেন । বাড়ির পাশে একটি গ্রিল কারখানা ছিল ৷

পুজোয় সেলফি মুডে অনুব্রত
3.এরপর বোলপুরে চলে আসেন ৷ বোলপুরের নীচুপট্টীর বাড়িতে থাকতে শুরু করেন ৷ সেখান থেকে কংগ্রেসের হাত ধরে শুরু হয় রাজনীতি । বরাবরই ডাকাবুকো ছিলেন । তাই তৎকালীন রাজ্য নেতাদের নজরও কেড়েছিলেন ৷
4.যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী থাকাকালীন প্রায় বীরভূমে আসতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়ই অনুব্রতর সঙ্গে পরিচয় হয় ৷ পরবর্তী কালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপ্তসহায়ক গৌতম বসুর সঙ্গে অনুব্রতর ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে ৷ তাঁর সূত্র ধরেই মমতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে অনুব্রতর ।
বক্তৃতারত অনুব্রত
5.1998 সালে তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা হলে বীরভূম জেলা সভাপতি হন প্রয়াত সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় । আর জেলার যুব সভাপতি হন অনুব্রত মণ্ডল। 2001 সালে নানুরে সূঁচপুরে 11 জন চাষিকে হত্যার ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে মুকুল রায়রা নানুরে আসেন ৷ এই সময়েই বিশেষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজর কাড়েন অনুব্রত ৷ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সূঁচপুর গণহত্যাই রাজ্যের প্রথম তৃণমূলের পালে হাওয়া দিয়েছিল ৷
6.মনোমালিন্যর জন্য দল ছেড়ে দিয়েছিলেন সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় । 2003 সালে সেই জায়গায় তৃণমূল বীরভূম জেলা সভাপতি হন অনুব্রত মণ্ডল । এখনও পর্যন্ত তিনিই সেই পদে রয়েছেন । বাম দূর্গ বীরভূমে সংগঠন করতে গিয়ে বহুবার হেনস্থার শিকার হন তিনি ৷ সঙ্গী ছিলেন বর্তমান রাজ্যের ক্ষুদ্র-মাঝারি ও কুটি শিল্প মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ ।
মঞ্চে সম্মান নিচ্ছেন অনুব্রত মণ্ডল
7.2011 সালে রাজ্য পালা বদলের পর ধীরে ধীরে অনুব্রতর নেতৃত্বে বাম দূর্গ বীরভূম 'অনুব্রতর গড়ে' পরিণত হয় ৷ এখান থেকেই শুরু অনুব্রতর জীবনের দ্বিতীয় পর্ব ৷ অন্য অনুব্রত প্রকাশ পায় রাজ্য রাজনীতিতে ৷
8.2012 সালে এক সভা থেকে নানুরের ওসিকে হুমকি, 2013 সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সভা থেকে 'পুলিশের উপর বোম মারুন, আমি বলছি বোম মারতে, বিরোধীদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিন '- এ ধরনের কথা বহুবার বলেছেন অনুব্রত । আর তা নিয়ে তোলপাড় হয় রাজ্য ৷ এই মন্তব্যের পরেই ওই রাতে খুন হন নির্দল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের বাবা সাগর ঘোষ ৷ যে মামলায় প্রধান অভিযুক্ত ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল ।
বাড়ির সামনে পুলিশকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন অনুব্রত
9.2013 সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর অনুব্রত মণ্ডলকে রাজ্য গ্রামন্নোয়ন পর্ষদের সভাপতি করা হয় ৷ সেই থেকে লালবাতি ব্যবহার করতে শুরু করেন তিনি ৷
10.2014 লোকসভা, 2016 বিধানসভা, 2019 লোকসভা, 2021 বিধানসভা নির্বাচনে অনুব্রত ম্যাজিকে বীরভূমে ভালো ফল করে তৃণমূল । এই নির্বাচনগুলির প্রচারে গিয়ে কখনও গুড়-বাতাসা, নকুলদানা, কখনও পাচনের বাড়ি, কখনও চড়াম-চড়াম, কখনও শুঁটিয়ে লাল করে দেব, কখনও খেলা হবে বলে সংবাদ শিরোনামে থেকেছেন তিনি ৷ নির্বাচন এলেই কমিশনের তাঁর নামে জমা পড়ে একাধিক অভিযোগ । যার জেরে অনুব্রতকে 3 বার নজরবন্দিও করে নির্বাচন কমিশন ৷
মঞ্চে ভাষণ দিচ্ছেন অনুব্রতবাবু
11. শিবপুরে বিরোধীদের জমি বিরোধী আন্দোলনে সটান ঘটনাস্থলে গিয়ে ডিএসপি কাশীনাথ মিশ্রকে অনুব্রত মণ্ডল বলেন, 'কটা বাজে? 2 ঘণ্টার মধ্যে সব কিছু খালি না হলে আমি ঢুকে যাব ৷ তাণ্ডবলীলা খেলে দেব ।' পুলিশকে প্রকাশ্যে এই নিদানেও তীব্র বিতর্ক তৈরি হয় ৷
12.রাজনীতির পাশাপাশি বীরভূম জেলার সমস্ত সিন্ডিকেটের রাশ অনুব্রত মণ্ডলেরই হাতে ৷ সকাল থেকে তাঁর বাড়িতে ভিড় থাকে । অনুব্রতর নির্দেশের এক এক দিকের দায়িত্ব সামলান এক একজন ৷
বীরভূমে নেতা অনুব্রত
13.2020 সালে অনুব্রত মণ্ডলকে সর্বভারতীয় তৃণমূল-কংগ্রেসের কোর কমিটিতে সামিল করেন মুখ্যমন্ত্রী । একজন জেলা সভাপতির দলের কোর কমিটির সদস্য হওয়া রাজনৈতিক মহলের অনেককেই অবাক করেছিল । দলের শীর্ষ নেতাদের একাংশও বিষয়টি নিয়ে দলের অন্দরেই সরব হন বলে শোনা যায় ৷ এছাড়া, বিভিন্ন সময় নির্বাচন এলেই নিজের জেলা ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অনুব্রতকে প্রচারে পাঠানো হত ৷ তাঁর সহজ সরল ভাষায় হুমকির সুরে বক্তব্য তাঁকে আরও জনপ্রিয় করেছে ৷ অন্য নেতাদের থেকে আলাদা করেছে অনুব্রত দৈহিক গঠন ও বিতর্কিত বক্তব্য ৷
14.2021 সালে অনুব্রত মণ্ডলকে রাজ্য স্বরোজগার যোজনার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয় ৷ দেউচা-পাচামি কয়লা খনির জন্য জমি অধিগ্রহণের দায়িত্বও ছিল অনুব্রতর কাঁধেই ৷ তাঁর জীবনী নিয়ে লেখা হয় 'খেলা হবে' বই । উন্মোচন করেন খোদ অনুব্রত ও রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ।
ব্রাত্য বসুর সঙ্গে অনুব্রত
15.গরু পাচার মামলায় নাম জড়ায় অনুব্রতর । গ্রেফতার হয় তাঁর দেহরক্ষী সায়গল হোসেন । তারপরেও ছন্দে ছিলেন অনুব্রত ৷ সিবিআইয়ের হাজিরা এড়িয়ে যাওয়ায় এবার দোর্দণ্ড প্রতাপ অনুব্রতকে তাঁর বোলপুরের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে সিবিআই । যা নিয়ে স্তম্ভিত বীরভূম জেলা ৷ দীর্ঘ 1 দশকের অনুব্রত রাজ বীরভূম জেলা জুড়ে ৷ সেই রাজত্বের কি তবে ইতি হল? এখন এই প্রশ্নই বীরভূমবাসীর মনে ৷
Last Updated : Aug 12, 2022, 3:53 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details