মালদা, 21 অক্টোবর : নিম্নচাপের লেজের ঝাপটাতেই মালদায় ধস নামল রাস্তায় ৷ ভাঙল নদীর সাঁকো । বরাতজোরে প্রাণে বেঁচেছেন প্রায় 25 জন । বৃহস্পতিবার চরম দুর্ঘটনার মুখে পড়েন চাঁদমুনি-1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা ৷ এই এলাকায় মহানন্দার শাখা ভাঁট নদীতে হুড়মুড়িয়ে পড়ে যায় একটি বাঁশের সাঁকো ৷ মহানন্দায় জল বেড়ে যাওয়ার কারণেই এই বিপত্তি ৷ ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে ৷
আবহাওয়া অফিস বৃহস্পতিবারও এই জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয় ৷ তবে এদিন সকাল থেকে জেলার কোথাও বৃষ্টি হয়নি । নিম্নচাপের জেরে রবিবার থেকেই জেলা জুড়ে অল্পবিস্তর বৃষ্টি শুরু হয় । মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টির প্রকোপ বাড়ে । গতকাল দিনভর দফায় দফায় ভারি বৃষ্টি হয়েছে । উত্তরবঙ্গে ভারী বৃষ্টির জেরে তিস্তার সঙ্গে জলস্তর বেড়েছে মহানন্দারও । রতুয়া-1 নম্বর ব্লকের চাঁদমুনি-1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা দিয়ে বইছে মহানন্দার একটি শাখা নদী, যা স্থানীয়দের কাছে ভাঁট নদী নামে পরিচিত । সেই নদীর উপর একটি বাঁশের সাঁকো বানিয়েছিলেন গ্রামবাসীরাই । ওই সাঁকো দিয়ে চাঁদমুনি-1 ও 2, সামসী ও ভাদো গ্রাম পঞ্চায়েতের কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন প্রতিদিন । নদীর অন্য পাড়ে থাকা রতুয়া-2 নম্বর ব্লকের পরাণপুর, আড়াইডাঙা ও মীরজাদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের আরও কয়েক হাজার মানুষও ওই সাঁকো ব্যবহার করেন । এদিন সেখানেই দুর্ঘটনাটি ঘটে ৷ তবে প্রাণরক্ষা হয়েছে মানুষের ৷
প্রবল বৃষ্টিতে বামনগোলা ব্লকের দোগাছি এলাকায় কেটে গিয়েছে পাকা রাস্তা বছর দুয়েক আগে সাঁকোটি সংস্কার করা হয়েছিল । গতকাল রাতে কেরালা থেকে কিছু শ্রমিক জেলায় ফেরেন । তাঁরা মালদা থেকে পরাণপুর হয়ে ওই সাঁকো দিয়ে চাঁদমুনি-1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন গ্রামে যাচ্ছিলেন । কিছু স্থানীয় শ্রমিক সাঁকোর উপর দিয়ে বাইকে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন । বাঁশের এই সাঁকো এত ভার বহন করতে পারেনি । একসময় হঠাৎই সেটি ভেঙে পড়ে । সেইসময় সাঁকোর উপরে জনা পঁচিশ লোক ছিলেন ৷ 3-4টি বাইক-সহ সাঁকোয় থাকা সবাই নদীতে পড়ে যান । তাঁদের চিৎকারে আশপাশের মানুষ ছুটে আসেন । গ্রামবাসীর সহযোগিতায় নদী থেকে সবাইকে উদ্ধার করা হয় । উদ্ধার করা হয় মোটরবাইকগুলিও । বেশ কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে থাকা ব্যাগ নদীর জলে ভেসে যায় । সেই ব্যাগগুলিতেই ছিল তাঁদের ছ’মাসের উপার্জন । সেই অর্থ তাঁরা আর ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি ।
স্থানীয় হাসানুজ্জামান বলেন, "গতকাল রাত আটটা নাগাদ দুর্ঘটনা ঘটে । সেই সময় 20-25 জন পরিযায়ী শ্রমিক ওই সাঁকো দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন । সঙ্গে স্থানীয় কিছু শ্রমিকও ছিলেন । হঠাৎ সাঁকোটি ভেঙে যায় । সবাই নদীর জলে পড়ে যান । গ্রামের লোকজন নদী থেকে সবাইকে উদ্ধার করেন । কয়েকজন জখম হয়েছেন ৷ আঘাত বেশি থাকায় তাঁদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । এখন তাঁরা মোটামুটি সুস্থ । সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় দু’পাড়ের কয়েক হাজার মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে । সাঁকোটি মেরামতের জন্য প্রশাসনিক কোনও ব্যবস্থা নেয়নি ৷ একটি ছোট ডিঙিতে করে মানুষ নদী পারাপার করছেন ।"
আরেক বাসিন্দা মহম্মদ রশিদ অভিযোগ, "এই নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ করার জন্য প্রাক্তন সাংসদ গণি খান চৌধুরী অনেকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন । তিনি প্রয়াত হয়েছেন । ব্রিজ হয়নি । অথচ এই এলাকায় আরও তিনটি ব্রিজ হয়েছে । এলাকার সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েতের 20-25 হাজার মানুষ প্রতিদিন এই সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করেন । বর্তমান বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায় চারবার ভোটে জিতেছেন । প্রতিবার ভোট এলেই তিনি ব্রিজের প্রতিশ্রুতি দেন । কিন্তু কাজ করেন না । তিনি আমাদের সঙ্গে বেইমানি করেন । আজ সকালেও তাঁকে ডাকা হয়েছে । সাড়া মেলেনি ।"
নিম্নচাপের লেজের ঝাপটায় ধস নামল রাস্তায়, ভাঙল সাঁকো, রক্ষা পেলেন গ্রামবাসীরা শুধু সাঁকো ভেঙে পড়াই নয় । গতকাল প্রবল বৃষ্টিতে বামনগোলা ব্লকের দোগাছি এলাকায় একটি পাকা রাস্তা কেটে গিয়েছে । এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ ওই রাস্তা দিয়েই বামনগোলা গ্রামীণ হাসপাতালে যাতায়াত করেন । রাস্তা কেটে যাওয়ায় সেখান দিয়ে গাড়ি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে । রাস্তাটি দ্রুত মেরামতের জন্য প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বামনগোলা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সুনীল বর্মন । তিনি জানিয়েছেন, "দু’দিনের প্রবল বৃষ্টিতে গতকাল সন্ধে নাগাদ বামনগোলা ও ডাকাতপুকুর গ্রামের মধ্যে দোগাছি এলাকায় পাকা রাস্তা কেটে গিয়েছে । ফলে ওই রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে । রাস্তাটি মেরামতের জন্য ইতিমধ্যে আমি সংশ্লিষ্ট দফতর সহ বিডিওর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি । ওই রাস্তায় যাতে কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে তার জন্য ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছি ।"
আরও পড়ুন : Children drown in Torsa : তোর্সায় তলিয়ে গেল একই পরিবারের দুই নাবালিকা