কলকাতা, 18 জুন: 'অগ্নিপথ প্রকল্প' (Agnipath Scheme)-এর বিরোধিতায় দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছে ৷ এই বিষয়ে কী বলছেন সামরিকবাহিনীর প্রাক্তনীরা? তারই খোঁজ নিল ইটিভি ভারত ৷ এই ঘটনা প্রসঙ্গে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শোনা গেল তাঁদের গলায় ৷ কেউ মনে করছেন, এমন একটি প্রকল্প শুরু করার আগে জনতার মানসিকতা ও আবেগ বোঝা দরকার ছিল ৷ আবার অনেকে বলছেন, সরকারি সিদ্ধান্তের সঙ্গে বিরোধ থাকতেই পারে ৷ কিন্তু, প্রতিবাদের নামে তাণ্ডব কখনওই গ্রহণযোগ্য নয় ৷
ব্রিগেডিয়ার (অবসরপ্রাপ্ত) প্রবীর সান্যাল এই প্রসঙ্গে বলেন, "এই ধরনের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল ৷ এমন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার আগে সাধারণ মানুষকে কিছুটা সময় দেওয়ার দরকার ছিল ৷ যাতে মানুষ সরকারের পরিকল্পনা সঠিকভাবে বুঝে নিতে পারে ৷ দেশবাসীর কাছ থেকে এই বিষয়ে মতামত নিলে হয়তো বিভিন্ন ধরনের ভালো মতামত পাওয়া যেত ৷ একটি সমীক্ষা করিয়ে তারপর যদি এই প্রকল্প ঘোষণা করা হত, তাহলে এই কর্মসূচি অনেক বেশি জনমুখী হতে পারত ৷ সাধারণ মানুষ কী চাইছে এবং সরকার দেশবাসীকে কী দিচ্ছে, সেটা দু'পক্ষের কাছেই অনেকটা স্পষ্ট হত ৷ দেশব্যাপী প্রকল্প ঘোষণার আগে পরীক্ষামূলকভাবেও কিছুদিন এই প্রকল্পটি চালানো যেত ৷ তাতে প্রকল্পে কোনও ত্রুটি থাকলে, তা সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব হত ৷ তাই একটি 'পাইলট প্রজেক্ট' চালানোর প্রয়োজন ছিল ৷ তাহলে সেটি 'ফুল প্রুফ' হত ৷"
আরও পড়ুন:Agnipath Scheme: কৃষি আইনের মতোই অগ্নিপথ প্রকল্পও বাতিল করুন, মোদিকে বার্তা রাহুলের
এই প্রসঙ্গে ভারতে কম্পিউটারের আগমন এবং কর্মক্ষেত্রে তার প্রয়োগের কথা মনে করিয়ে দেন বিগ্রেডিয়ার সান্য়াল ৷ তিনি বলেন, "যখন আমাদের দেশে প্রথম কম্পিউটার এল, তখন একটি আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল ৷ অনেকেই ভেবেছিলেন কম্পিউটার আসায় বহু মানুষ চাকরি হারাবেন ৷ কিন্তু, বর্তমানে সেই কম্পিউটার আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ !" অর্থাৎ সময়ের সঙ্গে বদল আসাটা খুব স্বাভাবিক ৷ কিন্তু, সেই বদলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য সময় লাগে ৷ অগ্নিপথ প্রকল্পের ক্ষেত্রে আমজনতা সেই সময়টাই পায়নি বলে মনে করছেন ব্রিগেডিয়ার সান্য়াল ৷ আর তার ফলেই বিরোধিতা প্রবল হয়ে উঠছে ৷ আর একটু প্রচেষ্টা করলে যা হয়তো সহজেই এড়ানো যেত ৷
অন্যদিকে, মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) কে কে গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "দেশজুড়ে অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে যে বিক্ষোভ চলছে এবং যেভাবে রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট করা হচ্ছে, তা কোনও মতেই মানা যায় না ৷ যাঁরা এসব করছেন, তাঁরাই যদি আগামী দিনের ফৌজি হন, তাহলে তাঁরা দেশের জন্য লড়াই করবেন কীভাবে? কীভাবে করবেন দেশরক্ষা ও দেশসেবার কাজ ? তাঁদের শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ বা অবস্থান করা উচিত ছিল ৷"
কেন্দ্রীয় সরকারের এই নয়া প্রকল্প সম্পর্কে মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) গঙ্গোপাধ্যায় আরও বলেন, "সেনাবাহিনীতে যত সংখ্যক জওয়ান নিয়োগ করা হয়, তার অধিকাংশই করা হয় পদাতিকবাহিনীর জন্য ৷ এই পদাতিকবাহিনীকে যুদ্ধক্ষেত্রে ভূমিতে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করতে হয় ৷ তাঁদের প্রাণভয় থাকে না ৷ সেই সময় দেশরক্ষাই তাঁদের প্রধান এবং একমাত্র উদ্দেশ্য হয় ৷ তাঁরা জানেন, যুদ্ধক্ষেত্রে শহিদ হলে বা কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত হলে সেনাবাহিনী ও সরকারই তাঁর পরিবারের দায়িত্ব নেবে ৷ কিন্তু, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে সেই সুবিধা মিলবে না ৷" এর ফলে অগ্নিবীরদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে ৷ যা সেনার মতো চাকরিতে কাম্য নয় ৷
সেনাবাহিনীর প্রাক্তনীদের একাংশ মনে করছেন, চুক্তির ভিত্তিতে সেনা নিয়োগ করা হলে এই কাজের গাম্ভীর্য ও গুরুত্ব কমতে পারে ৷ শুধুমাত্র চার বছরের জন্য চাকরির নিশ্চয়তা পেয়ে ক'জনই দেশরক্ষায় জীবনদান করার পণ নেবেন, সেই প্রশ্নও উঠছে ৷