দিল্লি, 25 এপ্রিল: যদিও ঠিক হয়ে গিয়েছে আগামী বছর রাষ্ট্র সংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য পেতে চলেছে ভারত, তবে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে COVID 19 পরিস্থিতি। কারণ নিয়মমতো রাষ্ট্র সংঘের স্থায়ী ও অস্থায়ী সদস্য দেশগুলির প্রতিনিধিদের ভোটে স্থির হয় সদস্য পদ। যে নির্বাচন আগামী জুনে হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু, বর্তমান অবস্থায় তা কীভাবে সম্ভব ? এ নিয়ে চিন্তায় রয়েছে রাষ্ট্র সংঘের সাধারণ পরিষদ।
এই প্রসঙ্গে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট তিজ্জানি মুহাম্মদ বন্দের মুখপাত্র রিম আবাজা বলেন, শুক্রবার অবধি পূর্ব নির্ধারিত নির্বাচন স্থগিত হয়নি। সদস্য দেশের প্রতিনিধিদের মত নিয়ে এই মাসের শেষেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য পদে পেতে দীর্ঘদিন লড়াই চালাচ্ছে ভারত। বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য 5 টি দেশ। তারা হল আমেরিকা, চিন, রাশিয়া, ফ্রান্স ও ব্রিটেন। এর মধ্যে চারটি দেশ ভারতের স্থায়ী পদের বিষয়ে সম্মতি জানালেও চিনের আপত্তিতে ভারতের পক্ষে স্থায়ী পদ পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে ভারতের এশিয়া পেসিফিক অঞ্চলের অস্থায়ী সদস্য পদে আপত্তি নেই কারও। এমনকী চিন ও পাকিস্তানও এই বিষয়ে সহমত। বর্তমানে এশিয়া পেসিফিক অঞ্চলের অস্থায়ী সদস্য পদে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া। তাদের দু'বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে এই বছর। এক্ষেত্রে একটি আনুষ্ঠানিক নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও কার্যত নির্বাচনের আগেই ভারতের নাম চূড়ান্ত হয়ে রয়েছে। কিন্তু, বিশ্বব্যাপী কোরোনার প্রকোপে বন্ধ রয়েছে নিই ইয়র্কের রাষ্ট্রসংঘের সদর দপ্তর। এমত অবস্থায় সাধারণ পরিষদের পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলির প্রত্যেক প্রতিনিধিকে ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচনে উপস্থিত থাকতে বলা সম্ভব না। বিকল্প হিসেবে ভাবা হচ্ছে 72 ঘণ্টার একটি অনলাইন ভোট। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদ এশিয়া প্যাসেফিক অঞ্চলের আগামী দুই বছরের অস্থায়ী পদের জন্য ভারতের নাম প্রস্তাব করবে। এরপর 72 ঘণ্টা সময় দেওয়া হবে।
এই সময়ের মধ্যে যদি কোনও দেশ আপত্তি না জানায় তবে ভারতকে ওই অস্থায়ী পদ দেওয়া হবে। তবে এই পদ্ধতিতে ভোট করার আগে সদস্য দেশগুলির অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছে রাষ্ট্র সংঘ। কারণ কোনও দেশের আপত্তি থাকলে আটকাতে পারে এই ভোটও। ইতিমধ্যে সহমতের অভাবে পরপর দুটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি রাষ্ট্র সংঘ। একটি ক্ষেত্রে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছে আমেরিকা। অন্য ক্ষেত্রে সৌদি আরবের বিষয়ে আপত্তি তুলেছে সিরিয়া ও ইরান। সাধারণত রাষ্ট্রসংঘের সদস্য দেশগুলির প্রতিনিধিরা গোপন ব্যালটের ব্যবহারে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু, এক্ষেত্রে তা যেহেতু সম্ভব নয়, তাই ই-ভোট হলেও নিরাপত্তার বিষয়টিকে কীভাবে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে তা নিয়েই ভাবছে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদ।
এদিকে ভারত নির্বাচিত হলে ভিয়েতনামের সঙ্গে এশিয়া পেসিফিক অঞ্চলের রাষ্ট্রসংঘের দ্বিতীয় অস্থায়ী দেশ হিসেবে স্থান পাবে। অন্যদিকে মেক্সিকো দীর্ঘদিন ধরেই লাতিন আমেরিকা ও ক্যারেবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ অঞ্চলের অস্থায়ী সদস্য। এদিকে কেনিয়া ও জেবুলে মুখোমুখি আফ্রিকা মহাদেশ অঞ্চলের রাষ্ট্রসংঘের অস্থায়ী সদস্য পদে নিজেদের নাম লেখাতে। নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ড লড়ছে পশ্চিমের ইউরোপ রাষ্ট্রসংঘের অস্থায়ী সদস্য পদ পাওয়ার জন্যে।