পাকিস্তানি নাগরিক নৈহাটির ভোটার ! পুশব্যাকের দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে নথি পাঠালেন অর্জুন
মহম্মদ ইমরানের সঙ্গে বিয়ের পর 1991 সালে করাচি থেকে বাংলায় আসেন সালেহা। ভোটার তালিকায় তাঁর নাম উঠেছিল 2008 সালের আগে ।

Published : October 16, 2025 at 8:24 PM IST
নৈহাটি, 16 অক্টোবর: রাজ্যে SIR (এসআইআর) জল্পনার মধ্যেই এবার নৈহাটিতে সামনে হল অবাক করা কাণ্ড ! ভারতের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে পাকিস্তানি নাগরিকের। যা ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে । সালেহা খাতুন নামে ওই মহিলার স্বামীও স্বীকার করে নিয়েছেন তাঁর স্ত্রী আদতে পাকিস্তানের করাচির বাসিন্দা ৷
অভিযুক্ত মহিলার স্বামীর দাবি, বিবাহসূত্রে এখানে আসার পর ভারতের ভোটার তালিকায় স্ত্রীর নাম ওঠেছে । একইসঙ্গে স্ত্রী'কে ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য ইতিমধ্যে তিনি আবেদন করেছেন প্রশাসনের কাছে । পড়শি দেশের নাগরিকের নাম কীভাবে নৈহাটির ভোটার তালিকায় উঠল, সেই প্রশ্ন তুলে প্রাক্তন সাংসদ তথা বিজেপি নেতা নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে । এমনকি, পাকিস্তানের নাগরিক ওই মহিলাকে গ্রেফতার করে তড়িঘড়ি পুশব্যাক করা উচিত বলেও মনে করছেন তিনি । তবে ভারতের ভোটার লিস্টে পাকিস্তানি নাগরিকের ঠাঁই হওয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ঘাড়েই দায় ঠেলেছেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সনৎ দে। আর ভোটের আগে এই চাপানউতোরের জেরে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়তে শুরু করেছে নৈহাটিতে।
বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন । তার আগে এসআইআর নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ । সেই আবহে ফাঁস হল পাকিস্তানি নাগরিকের কীর্তি। এর আগে রাজ্যে বিভিন্ন সময়ে সামনে এসেছে বাংলাদেশি নাগরিকের ভারতের ভোটার তালিকায় নাম অথবা এদেশে বসবাস।কিন্তু, বৈধ কাগজপত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরেও কোনও পাকিস্তানের নাগরিকের অবৈধভাবে এদেশে বসবাস সচরাচর শোনা যায় না । কিন্তু, সেটাই ঘটেছে উত্তর 24 পরগনার নৈহাটি বিধানসভা এলাকায় । যা ঘিরেই এখন তপ্ত রাজ্যরাজনীতি ৷
জানা গিয়েছে, নৈহাটি বিধানসভার অন্তর্গত এটি ঘোষ লেনের বাসিন্দা সালেহা খাতুন । তবে তিনি নৈহাটির বাসিন্দা হলেও জন্মসূত্রে পাকিস্তানের নাগরিক। সমস্যা ভোটা তালিকায় তাঁর নাম নিয়ে । বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিংয়ের অভিযোগ, পাক নাগরিক হয়েও বাংলায় ভোটার সালেহা। তিনি বলেন, "উনি পাকিস্তানের করাচির বাসিন্দা । করাচি থেকে এখানে এসেছেন । ওঁর মেয়েরও পাকিস্তানের পাসপোর্ট রয়েছে ৷ কিন্তু বাংলায় এসেই তাঁরা হয়ে গিয়েছেন ভারতীয় ।"
ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশন ও স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে সালেয়ার পাকিস্তানি নাগরিক হওয়ার নথি ইমেল করে পাঠিয়ে দিয়েছেন অর্জুন সিং। তাঁর দাবি, "অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে তড়িঘড়ি পুশব্যাক করা উচিত।" এই ঘটনায় প্রাক্তন সাংসদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কেও নিশানা করতে ছাড়েননি। অর্জুন সিং বলেন, "যেভাবে বাংলাদেশি অনুপ্রেবেশকারী ও পাকিস্তানি নাগরিকরা এখানে বসবাস করছে তা কল্পনায় বাইরে। সবটাই হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায়। তিনি ও তাঁর দলের লোকেরা এসআইআর নিয়ে প্রতিনিয়ত ধমকাচ্ছেন নির্বাচন কমিশনকে। হুমকি দিয়ে বলছেন এসআইআর হলে রাজ্যে আগুন জ্বলবে। ওই আগুন বাংলার জনগণ নিভিয়ে দেবে। ওনার সময় শেষ হয়ে এসেছে ।"
সাম্প্রতিককালে রাজ্যে ভুয়ো পাসপোর্ট-কাণ্ডে জড়ানো আজাদ মল্লিকের বিরুদ্ধেও উঠেছিল এই একই অভিযোগ। আজাদ একুশের বিধানসভা নির্বাচন ও গতবছর হওয়া লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলার ভোটার হলেও জন্মসূত্রে তিনি ছিলেন পাকিস্তানের নাগরিক। ইডি-র জেরায় আজাদ সেই কথা স্বীকারও করেছেন বলে খবর সূত্রের।
নৈহাটির ‘ভোটার’ সালেয়ার যে পাকিস্তান-যোগ রয়েছে, সেই কথা অস্বীকার করেননি নৈহাটির তৃণমূল বিধায়ক সনৎ দে। তিনি বলেন,"ভোটার কার্ড দেয় নির্বাচন কমিশন । যা অর্জুন সিংদের আওতায়। ওনারাই দেখুক, কী ব্যাপার। এটা সত্যি কথা যে সালেহা পাকিস্তানের বাসিন্দা। যার সঙ্গে ও'র বিয়ে হয়েছে, তিনি কর্মসূত্রে দুবাইয়ে থাকতেন । 28 বছর আগে ওঁর সঙ্গে বিয়ে করেই সে এই রাজ্যে আসে। এবার ভোটার কার্ড ভুয়ো নাকি আসল তা অর্জুন সিং-ই যাচাই করে দেখুক । ও'র মতো দু'নম্বরি লোক কম আছে । যে দু'নম্বরি সে অন্যকেও দু'নম্বরি ভাবে । এটুকু বলতে পারি।"
অন্যদিকে, পাক নাগরিক সালেহাকে সামনে আনতে রাজি হননি তাঁর স্বামী মহম্মদ ইমরান। তবে তাঁর স্ত্রী যে পাকিস্তানি সেই কথা তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে অস্বীকার করেননি। মহম্মদ ইমরান জানান, "1991 সালে উনি করাচি থেকে এখানে এসেছেন । ভোটার তালিকায় নাম উঠেছিল 2008 সালের আগে। সেই থেকেই ভোট দিয়ে আসছেন ।"
এখানে উল্লেখ্য, সম্প্রতি প্রশাসনের উদ্যোগে বাতিল হয়েছে সালেহার পাসপোর্ট। কূটনৈতিক টানাপোড়েনে রিনিউ হয়নি তাঁর ভিসা। ফলে অবৈধভাবেই বাংলায় রয়ে গিয়েছেন তিনি। অবশ্য ইমরানের পরিবারের দাবি, 'মানবিকতার খাতিরে তাঁর বৈধ পাসপোর্টের ব্যবস্থা করুক প্রশাসন ।' অর্থাৎ ভারতের নাগরিকত্ব চান সালেহা।

