উত্তরে বিপর্যয় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় পৃথক কমিটি গঠন মুখ্যমন্ত্রীর
বুধবার দার্জিলিংয়ের লালকোঠিতে রিভিউ মিটিং করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি সেখানে তুলে ধরলেন ক্ষতির পরিমাণ৷

Published : October 15, 2025 at 7:02 PM IST
দার্জিলিং, 15 অক্টোবর: উত্তরবঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ত্রাণ বণ্টন, পুনর্বাসন ও বিপর্যয় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য মনিটরিং কমিটি গঠন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার শৈলশহরে জিটিএ, দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে রিভিউ মিটিং সারেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তিনি এই কমিটি গঠনের কথা বলেন৷
ওই কমিটিতে রাজ্যের সচিব মনোজ পন্থের নেতৃত্বে সেচ, বন, বিদ্যুৎ, পূর্ত দফতরের আধিকারিক, জিটিএ, প্রত্যেক জেলার জেলাশাসক, পুলিশ সুপারকে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মলয় ঘটক, উদয়ন গুহ, শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব, বিধায়ক নির্মল রায়, জিটিএ-র চিফ এগজিকিউটিভ অনীত থাপাদের রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এদিন সকালে প্রথমে রিচমন্ড হিল থেকে বেরিয়ে পায়ে হেঁটেই লালকোঠি পর্যন্ত যান মুখ্যমন্ত্রী। যাওয়ার সময় পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলেন। ছোটদের মধ্যে চকোলেট ও পুতুল বিলি করেন। এরপর লালকোঠিতে বৈঠকে যোগ দেন তিনি। এদিনের বৈঠকে জিটিএ আধিকারিকরা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতির খতিয়ান তুলে ধরেন।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উত্তরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকারের অনেক টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে লড়াই চলছে। খুব দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কাজ চলছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিপর্যয় মোকাবিলা দল, দমকল, সিভিল ডিফেন্স প্রত্যেকে দারুন কাজ করেছে। রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দল যা কাজ করেছে, তা যে কাউকে টেক্কা দিতে পারবে। সিভিল ডিফেন্সকে আগামীতে এমনভাবে তৈরি করা হবে, যাতে তারা বাকিদের টেক্কা দিতে পারে।" এদিন মুখ্যমন্ত্রী প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মোকাবিলায় পুলিশ, প্রশাসন ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের ধন্যবাদ জানান ও পুরস্কৃত করেন।
এদিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, দার্জিলিং জেলার ন’টি ব্লকের প্রায় 70 হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দার্জিলিং জেলার 1300-র বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। 17টি ত্রাণ শিবির চলছে। 30 হাজার মানুষকে খাবার দেওয়া হচ্ছিল। এখনও 750 জন মানুষ ত্রাণ শিবিরে আছেন। এই বিপর্যয়ে 32 জনের প্রাণ গিয়েছে। যার মধ্যে দার্জিলিংয়ে 21 জন, জলপাইগুড়িতে 9 জন ও কোচবিহারে 2 জন মারা গিয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা মোট 20 হাজার। উত্তরে মোট ত্রাণ শিবির রয়েছে 37টি। প্রায় ছ'হাজারের মানুষ ওই শিবিরগুলিতে রয়েছেন। যাঁদের 55টি কমিউনিটি কিচেনে রান্না করে খাওয়ানো হচ্ছে। সুফল বাংলার তরফে 46টি অতিরিক্ত আউটলেট চালু করা হয়েছে। দুর্গত মানুষদের জন্য রেগুলেটেড মার্কেটের মাধ্যমে 500 কুইন্টাল আলু ও 100 কুইন্টাল পেঁয়াজ সরবরাহ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, গত 14 বছরে উত্তরবঙ্গে শুধু কৃষি উন্নয়নের জন্য সাত হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যে 14 হাজার কোটি টাকা খরচ করছে। 228টি পানীয় জলের প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে 13 হাজার পানীয় জলের বোতল ও তিন লক্ষ 13 হাজার পানীয় জলের পাউচ বিতরণ করা হয়েছে। ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে 930 কিলোলিটার পানীয় জল সরবরাহ করা হয়েছে। 1360টি বিদ্যুতের খুঁটি, 272টি ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার ও দু’টি টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, পরিষেবা সামাল দিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় 1340টি খুঁটি ইতিমধ্যে বসানো হয়েছে। 266টি ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার বসানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত টাওয়ারও সারানো হয়েছে। পূর্ত দফতর 81টি রাস্তা 11টি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভুটানের থেকে ভেসে আসা ডলোমাইট তুলে বিক্রি করে দিতে হবে। সেই টাকা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর খরচ করবে। 94টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও 79টি উচ্চবিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

