দুর্গাপুর গণধর্ষণ-কাণ্ড: 'প্রেমিক' ওয়াসেফ এমন কাজ করতেই পারেন না, দাবি পরিবার-গ্রামবাসীর
দুর্গাপুরে ডাক্তারি ছাত্রীর গণধর্ষণ-কাণ্ডে ওয়াসেফ আলির গ্রেফতারিতে বিস্মিত তাঁর গ্রাম কালিয়াচকের সিলামপুর ৷ পরিবার থেকে প্রতিবেশীরা চাইছেন, সঠিক তদন্ত ও নায্য বিচার ৷

Published : October 15, 2025 at 7:10 PM IST
মালদা, 15 অক্টোবর: দুর্গাপুর গণধর্ষণকাণ্ডে ধৃত সহপাঠী ওয়াসেফ আলি এমন কাজ কিছুতেই করতে পারেন না ৷ তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি পরিবার থেকে গ্রামবাসীর ৷
দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রীকে গণধর্ষণ-কাণ্ডে জড়িয়ে গিয়েছে মালদার নাম ৷ ওই মামলায় আগেই পাঁচ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিল আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের পুলিশ ৷ মঙ্গলবার সন্ধেয় গ্রেফতার করা হয়েছে নির্যাতিতা ছাত্রীর তথাকথিত প্রেমিক ওয়াসেফ আলিকেও ৷ এর পরেই মালদা জেলার নজর ঘুরে গিয়েছে কালিয়াচক থানার সিলামপুর গ্রামের মহালদার পাড়ার দিকে ৷ যদিও গ্রামবাসীরা ওয়াসেফের গ্রেফতারির পিছনে কোনও দুষ্টচক্রের হাত দেখছেন ৷
কালিয়াচক থানা থেকে মোথাবাড়ির রাস্তা দিয়ে যেতে প্রায় ছ'কিলোমিটার দূরে সিলামপুর গ্রামের মহালদার পাড়ায় রাস্তার পাশেই ওয়াসেফদের বিশাল বাড়ি ৷ নীচতলায় গৃহ নির্মাণ সামগ্রীর দোকান রয়েছে ৷ এদিন দোকান খোলা থাকলেও পুরো ফাঁকা ৷ বাড়ির সদরে হলুদ কোলাপসবিল গেট আটকানো ৷ ভিতরে রাখা একটি মোটরবাইক ৷ বেশ কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করার পরও ভিতর থেকে সাড়া মেলেনি ৷
স্থানীয়রা জানালেন, বাড়িতে কেউ নেই ৷ ওয়াসেফের বাবা-মা মঙ্গলবারই দুর্গাপুর চলে গিয়েছেন ৷ এই মুহূর্তে গোটা বাড়িতে শুধু ওয়াসেফের দাদু রয়েছেন ৷ তিনি গতকাল থেকেই বাইরে বেরোচ্ছেন না ৷ এলাকার লোকজন আরও জানান, ওয়াসেফের দাদু এলাকায় হাজি সাহেব নামে পরিচিত ৷ নিপাট ভদ্র মানুষ ৷ তাঁর বাবাও ভদ্রলোক ৷ একসময় কংগ্রেসের টিকিটে জিতে গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য হয়েছিলেন ৷ এখন ব্যবসা করেন ৷

গ্রামের প্রতিটি মানুষ যেকোনও পরামর্শের জন্য তাঁর কাছে যায় ৷ তাঁর এক ছেলে, দুই মেয়ে ৷ দুই মেয়েই হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে ৷ ওয়াসেফও ছোট থেকে হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতেন ৷ ভীষণ মেধাবী ৷ পড়া ছাড়া কিছুই জানে না ৷ উৎসব অনুষ্ঠানে কয়েকদিনের জন্য বাড়ি আসতেন ৷ বাড়ির বাইরে বিশেষ বেরোতেন না ৷ কারও সঙ্গে তেমন মিশতেনও না ৷
এদিন ওয়াসেফের দাদুকে পাওয়া না গেলেও কথা হয় তাঁর কাকা মোক্তার আলির সঙ্গে ৷ তিনি বলেন, "এই ছেলে এমন ঘটনা কখনও ঘটাতে পারে না ৷ খুব ভালো ছেলে ৷ ছোট থেকে দুর্গাপুরেই পড়াশোনা করে ৷ যখন বাড়ি আসত, বাড়ির ভিতরে থাকত ৷ কারও সঙ্গে মিশত না ৷ বাইরেও তেমন বেরোত না ৷ এই ছেলের কোনও খারাপ রিপোর্ট নেই ৷ কোনও নেশা নেই ৷ বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডাও দিত না ৷ ওকে ফাঁসানো হচ্ছে ৷ দুর্গাপুরের দুষ্টচক্রই ওকে ফাঁসাচ্ছে ৷’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘ওর গ্রেফতারির খবর পেয়ে গতকালই আমার দাদা-বউদি দুর্গাপুর চলে গিয়েছে ৷ এখন বাড়িতে শুধু ওর দাদু রয়েছে ৷ আমরা চাই, সঠিক বিচারের পর ওকে রেহাই দেওয়া হোক ৷ ও পড়াশোনায় খুব ভালো, ডাক্তারি পড়ছে ৷ ডিগ্রিও পেয়েছে ৷ এই ঘটনায় ওর গায়ে কলঙ্কের দাগ লেগে গেল ৷ এটা ওর চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষতি করবে ৷"
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, "আমরা পাড়ার লোক ৷ এখনই মিডিয়ার মাধ্যমে ঘটনাটি শুনলাম ৷ আগে কিছু জানতাম না ৷ আদপে কী হয়েছে সেসব বলতে পারছি না ৷ কিন্তু এই ছেলেটি এমন কাজ করতে পারে না ৷ ওর দাদু হাজি সাহেব ৷ সবাই তাঁকে মান্য করে ৷ তাঁর এক ছেলে ৷ নাতিও একটিই ৷ ছোট থেকে ছেলেটি বাইরে হস্টেলে থেকেই পড়াশোনা করে ৷ মাঝেমধ্যে দু'চারদিনের জন্য বাড়ি আসত ৷ কিন্তু আমাদের সঙ্গে তেমন কথা বলত না ৷ বাড়িতেই থাকত ৷ ওর বন্ধুবান্ধবও নেই ৷ ও এমন কাজ করতেই পারে না ৷ ওকে ফাঁসানো হচ্ছে ৷"
আপাতত গোটা সিলামপুরের চোখ এই মামলায় পুলিশি তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার দিকে ৷ গ্রামের সবাই চাইছেন, ওয়াসেফ কলঙ্কমুক্ত হোক ৷ আদপে কী হবে, সেটা অবশ্য সময়ের অপেক্ষা ৷

