ETV Bharat / state

পাহাড়ে মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ 'একতরফা', প্রত্যাহারের দাবিতে মোদিকে চিঠি মমতার

গোর্খাল্যান্ডের সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে প্রাক্তন আইপিএস অফিসার পঙ্কজ কুমার সিংকে নিয়োগ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ এই পদক্ষেপ একতরফা বলে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷

CM Mamata Banerjee
পাহাড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় (ফাইল ছবি (মুখ্যমন্ত্রীর ফেসবুক))
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : October 18, 2025 at 3:32 PM IST

|

Updated : October 18, 2025 at 4:00 PM IST

5 Min Read
Choose ETV Bharat

কলকাতা, 18 অক্টোবর: পাহাড়ের সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে প্রাক্তন আইপিএস অফিসার পঙ্কজ কুমার সিংকে নিয়োগ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ এই নিয়োগ নিয়ে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এই সংক্রান্ত একটি চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে কোনওরকম পরামর্শ না-করে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে ৷

এই পদক্ষেপ 'সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় চেতনার পরিপন্থী' এবং রাজ্যের প্রশাসনিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে ৷ আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের একতরফা এই পদক্ষেপে তিনি হতবাক বলে জানিয়েছেন ৷

পাহাড়ে রাজনৈতিক সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন গোর্খা সংগঠন ৷ তাদের দাবিগুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দার্জিলিং, কালিম্পং ও তরাই-ডুয়ার্সের একাংশকে নিয়ে একটি পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্য গঠনের প্রস্তাব ৷ এছাড়াও পাহাড়ের 11টি জনজাতিকে তফশিল উপজাতির অধীনে আনার দাবিও রয়েছে ৷

গতকাল গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) সংক্রান্ত আলোচনার জন্য অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস আধিকারিক পঙ্কজ কুমার সিং-কে ইন্টারলোকিউটার হিসেবে নিয়োগ করার বিষয়টি সামনে আসে ৷ প্রাক্তন এই আমলা দেশের উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন ৷ এই নিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা এবং পাহাড়ের অন্য নেতারা ৷ তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ৷ শনিবার সকালে বিজেপি সাংসদ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা (জেজিএম)-এর কার্যালয়ে গিয়ে দলের সভাপতি বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে দেখা করেন এবং এই বিষয়ে আলোচনা করেন ৷

এদিকে চিঠির শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, "ভারত সরকার অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস আধিকারিক শ্রীপঙ্কজ কুমার সিং-কে দার্জিলিং পাহাড়, তরাই এবং দুয়ার অঞ্চলে গোর্খা সম্প্রদায়-সম্পর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনার জন্য একজন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়োগ করেছে ৷ এই বিষয়টি জানতে পেরে আমি বিস্মিত ও স্তম্ভিত ৷ এই নিয়োগ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে কোনও পরামর্শ ছাড়াই করা হয়েছে ৷ কিন্তু গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) সরাসরি পশ্চিমবঙ্গের অধীনস্থ একটি স্বশাসিত সংস্থা ৷ তাই এই বিষয়গুলি সরাসরি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা, শান্তি এবং শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ৷"

তিনি অভিযোগ করেছেন, "এই ধরনের একতরফা পদক্ষেপ আমাদের সংবিধানের সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় মূল নীতির পরিপন্থী ৷" চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, "2011 সালের 18 জুলাই দার্জিলিংয়ে স্বাক্ষরিত ত্রিপাক্ষিক চুক্তির ভিত্তিতেই গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন গঠিত হয়েছিল ৷ সেই চুক্তি স্বাক্ষরের সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ৷"

চিঠিতে তিনি লেখেন, "গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) গঠনের উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়ি এলাকার সামাজিক-অর্থনৈতিক, পরিকাঠামোগত, শিক্ষাগত, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত উন্নয়ন নিশ্চিত করা ৷ গোর্খা জনগোষ্ঠীর জাতিগত পরিচয় রক্ষা করা এবং পাহাড়ে সব সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখা— যা ঐক্য ও সম্প্রীতির অন্যতম নিদর্শন ৷" মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে দাবি করেন, রাজ্য সরকারের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার ফলেই গত এক দশক ধরে পাহাড়ে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রয়েছে ৷

তাঁর কথায়, "আমাদের রাজ্যের পাহাড়ি জেলাগুলিতে শান্তি ও সম্প্রীতি বিরাজ করছে ৷ এটি সম্ভব হয়েছে 2011 সালে আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ধারাবাহিক ও নিবেদিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ৷ আমরা ভবিষ্যতেও সেই ইতিবাচক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর ৷"

জিটিএ চুক্তি

2011 সালে প্রথম বার মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি অশান্ত পাহাড়ের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেন ৷ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে আলোচনায় বসে রাজ্য সরকার এবং চুক্তিতে সম্মত হয় ৷ এরপর 18 জুলাই গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) গঠন নিয়ে সরকারিভাবে চুক্তি হয় ৷ সেখানে জেজিএম-এর অধিকাংশ দাবি মেনে নেয় প্রথম তৃণমূল সরকার ৷ এই চুক্তি হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা (জিজেএম)-র মধ্যে ৷ তাই এই জিটিএ ত্রিপাক্ষিক বিষয় ৷ পরে 2 সেপ্টেম্বর জিটিএ, 2011 বিল পাশ হয় রাজ্য বিধানসভায় ৷

মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন, কেন্দ্রীয় সরকার যেন এই একতরফা নিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজ্য সরকারের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ পরামর্শ করে ৷ তিনি লেখেন, "পশ্চিমবঙ্গ সরকার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে গোর্খা সম্প্রদায় বা জিটিএ অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্কিত যে কোনও উদ্যোগ রাজ্য সরকারের সঙ্গে পূর্ণ পরামর্শের মাধ্যমেই নেওয়া উচিত— যাতে এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা অক্ষুণ্ণ থাকে ৷ এই সংবেদনশীল বিষয়ে কোনও একতরফা পদক্ষেপ এই অঞ্চলের শান্তি ও সম্প্রীতির পরিপন্থী হবে ৷"

শেষে মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে লেখেন, “আমি আপনাকে অনুরোধ করছি যে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে পূর্ব পরামর্শ ছাড়াই জারি করা এই নিয়োগের আদেশটি পুনর্বিবেচনা করে বাতিল করুন— যেমনটি সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় এবং কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধার চেতনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ৷ চিঠির শেষে নিজের হাতে প্রধানমন্ত্রীকে দীপাবলির শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী "আপনাকে জানাই শুভ দীপাবলির শুভেচ্ছা।"

নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ ধরনের একতরফা সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ বিষয়টি ত্রিপাক্ষিক হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার যেন ভবিষ্যতে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সম্পর্কিত যে কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে, তা নিশ্চিত করে বুঝিয়ে দিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ প্রশাসনিক মহলের মতে, চিঠিটি কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের সূক্ষ্ম ভারসাম্য ও পাহাড়ের শান্তি বজায় রাখার প্রয়াসে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে ৷

Last Updated : October 18, 2025 at 4:00 PM IST