মেচি নদীতে ভেসে আসা হস্তিশাবকের নামকরণ মুখ্যমন্ত্রীর
10 দিন পর নয়টি গণ্ডারকে জাতীয় উদ্যানে ফেরাতে সক্ষম জলদাপাড়া বন্যপ্রাণ বিভাগ ৷

Published : October 15, 2025 at 8:27 PM IST
জলপাইগুড়ি, 15 অক্টোবর: নাম পেল বন্যায় মেচি নদীতে ভেসে আসা হস্তিশাবক ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার নাম রেখেছেন ৷ বুধবার দার্জিলিং-এর রিভিউ মিটিং থেকে মমতা হস্তিশাবকটির নাম রাখেন 'লাকি' ৷ গত 5 অক্টোবর দুর্যোগের রাতে কার্শিয়াং বনবিভাগের মেচি নদীর তীব্র স্রোতে ভেসে গিয়ে দলছুট হয়ে যায় এই শাবকটি ৷ নদীতে ভেসে আসা হস্তিশাবককে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছিল জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে ৷ সেখানেই আদর-যত্নে আছে 'লাকি' ৷
দার্জিলিংয়ে রিভিউ মিটিংয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সাতদিনের একটি হাতির বাচ্চা উদ্ধার হয়েছে ৷ তার মা-কে খুঁজে পায়নি ৷ আজ থেকে বাচ্চাটির নাম 'লাকি' দেওয়া হল ৷ সাতদিনের বাচ্চা হাতি এইভাবে বেঁচে আছে, এটাই অনেক ৷"

গত 5 অক্টোবর বন্যার জলে কার্শিয়াং বনবিভাগের তারাবাড়ির কাছে হস্তিশাবকটি ভেসে আসে ৷ নেপাল ও ভারতের স্থানীয় বাসিন্দা এবং বনকর্মীদের প্রচেষ্টায় অবশেষে মণিরামজোতের কাছে উদ্ধার করা হয় সাতদিনের হস্তিশাবককে ৷ তবে, মায়ের দুধ না-পেয়ে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছিল সে ৷ এই পরিস্থিতিতে হাতির প্রাণ বাঁচাতে দলছুট হস্তিশাবককে নিয়ে আসা হয় জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে ৷ সেখানকার হলং সেন্ট্রাল পিলখানায় আদর-যত্ন করে শাবকটিকে পালন করা হচ্ছে ৷ বেশ খোশ মেজাজে আছে লাকি ৷ মাহুতদের সঙ্গে খেলাও করছে সে ৷
জলদাপাড়া বনবিভাগের ডিএফও প্রবীণ কাসোয়ান বলেন, "হস্তিশাবকটিকে অভিজ্ঞ মাহুত দেখভাল করছেন ৷ বন্যপ্রাণ চিকিৎসক নিয়মিত স্বাস্থ্যের খোঁজ রাখছেন ৷"

অন্যদিকে, জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান থেকে একাধিক গণ্ডার বন্যার জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছিল ৷ প্রায় 10 দিন পর অনেক চেষ্টায় মোট 9টি গণ্ডারকে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে ফেরানো হয়েছে ৷ জলদাপাড়া বন্যপ্রাণী বিভাগ, বন্যপ্রাণী প্রেমী সংগঠন এবং স্থানীয়দের সাহায্যে গণ্ডারগুলিকে জঙ্গলে ফেরানো হয়েছে ৷ তবে, এখনও জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের কর্মীরা স্ক্যানিং চালাচ্ছেন জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় ৷ উদ্ধার হওয়া গণ্ডারগুলি সুস্থ রয়েছে বলে জানানো হয়েছে বন্যপ্রাণ বিভাগের তরফে ৷
গত 5 অক্টোবর তোর্সা নদীর বিধ্বংসী বন্যায় ভেসে যায় অনেক গণ্ডার ৷ পরবর্তী সময়ে সেগুলি লোকালয় লুকিয়ে পড়ে ৷ কখনও পুন্ডিবাড়ি, তো কখনো মাথাভাঙার বিভিন্ন এলাকায় দাপিয়ে বেড়ায় ঘরছাড়া গণ্ডারগুলি ৷ জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান ও জলদাপাড়া বন্যপ্রাণ বিভাগের বনকর্মীরা কুনকি হাতি দিয়ে ড্রাইভ করে, আবার কখনও ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে ট্রাক্টরে করে চিলাপাতার জঙ্গলে ছেড়েছে সেগুলিকে ৷

জলদাপাড়া বন্যপ্রাণী বিভাগের বিভাগীয় বনাধিকারিক প্রবীণ কাসোয়ান বলেন, "আমাদের কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে ৷ বেশ কিছু বন্যপ্রাণীর জঙ্গল ছেড়ে জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছিল ৷ আমাদের 9টি গণ্ডার জঙ্গল থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল ৷ 5 অক্টোবর থেকে লাগাতার চেষ্টা করে 9টি গণ্ডারকে জঙ্গলে ফেরাতে সক্ষম হয়েছি ৷ 13 অক্টোবর জলদাপাড়া দলের সদস্যরা কোচবিহারের পাতলাখাওয়া এলাকা থেকে দু’টি একশৃঙ্গ গণ্ডারকে ঘুমপাড়ানি গুলি করে উদ্ধার করে ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘14 অক্টোবর কোচবিহারের পুটিমারি এলাকা থেকে আরও একটি গণ্ডারকে উদ্ধার করা হয় ৷ গণ্ডার দু’টিকে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ৷ উদ্ধার হওয়া সমস্ত গণ্ডার সুস্থ আছে ৷ আমাদের বনকর্মীরা যেভাবে কাজ করেছেন, তাঁদের জন্য আমরা গর্বিত ৷ তাঁদের যথাসময়ে সম্মানিত করা হবে ৷’’

