
রিচাই আমাদের স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে, মেয়ের বিশ্বজয়ের আবেগে ভাসছেন মানবেন্দ্র
বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য রিচাকে শিলিগুড়ি মহিলা ক্রিকেটের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর ঘোষণা করল মহকুমা পরিষদ ৷ বিশ্বজয়ী রিচার ঘরে ফেরার অপেক্ষায় শিলিগুড়ি শহর ৷

Published : November 5, 2025 at 8:38 PM IST
শিলিগুড়ি, 5 নভেম্বর: প্রথম বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের সদস্য শিলিগুড়ি তথা বাংলার মেয়ে রিচা ঘোষ ৷ তবে, 22 বছরের রিচা যে কোনোদিন এমন উচ্চতায় পৌঁছবেন, তা ভাবতেই পারেননি তাঁর বাবা মানবেন্দ্র ঘোষ ৷ জানালেন, তাঁকে সেই স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে তাঁর মেয়ে ৷ রিচার চোখেই বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন তিনি ৷ আর আজ সেই স্বপ্ন সত্যি হয়েছে ৷
বুধবার মুম্বই থেকে শিলিগুড়ি ফিরেছেন মানবেন্দ্র ঘোষ এবং তাঁর স্ত্রী ৷ তবে, রিচা এখনই ফিরছেন না ৷ বর্তমানে তিনি দলের সঙ্গে দিল্লিতে রয়েছেন ৷ আগামী শুক্রবার শিলিগুড়ি ফিরবেন ৷ একদিন থেকে আবার কলকাতায় ফিরে যাবেন ৷ তাই ফেরার আগে বিশ্বজয়ী মেয়েকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে শিলিগুড়ির বাড়িতে ৷
মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, "আমি কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবিনি আমার মেয়ে ভারতের হয়ে বিশ্বকাপ খেলবে ও জয়ী হবে ৷ আমি ওকে খেলায় ঢুকিয়েছিলাম শরীর চর্চার জন্য ৷ পরে দেখলাম ওর খেলার প্রতি দারুণ আগ্রহ ৷ তারপর থেকে আমি স্বপ্ন দেখতে শুরু করি ৷ প্রথমে স্বপ্ন ছিল ডিস্ট্রিক্ট খেলবে ৷ সেটা খেলার পর বেঙ্গল খেলার স্বপ্ন সার্থক হয় ৷ বেঙ্গল খেলার পর স্বপ্ন দেখেছিলাম ভারতের হয়ে খেলবে ৷ সেই স্বপ্নও সত্যি করেছে রিচা ৷ আর এই সব স্বপ্ন রিচাই দেখাতে শিখিয়েছে ৷"
আর মেয়ের পারফর্ম্যান্স নিয়ে মানবেন্দ্র বলেন, "রিচা যখন ব্যাট করতে নেমেছিল, তখন আমি কফিডেন্ট ছিলাম ৷ কারণ ও সবসময় বলে, 'আমি যদি ধরে খেলতে যাই, তাহলে হয়তো এক রান পাব ৷ কিন্তু, সেখানে আউট হয়ে গেলে আফসোস করেও লাভ হবে না' ৷ তাই রিচা সবসময় আগ্রাসী খেলার পক্ষে ৷ তাই ও যখন নেমেছিল, আমি জানতাম বড় শট খেলে রানটা তুলে দেবে ৷"
তবে, শুধু মেয়ের পারফর্ম্যান্স নয় ৷ মানবেন্দ্র ঘোষের কথায় উঠে এল শেফালি ভার্মা, স্মৃতি মন্ধানাদের কথাও ৷ তিনি বলেন, "ক্রিকেট একটা টিম গেম ৷ সেখানে রিচা শুধু নয় ৷ দলের প্রত্যেকটা মেয়ে ভালো খেলেছে ৷ ওদের মিলিত প্রচেষ্টায় বিশ্বকাপ এসেছে ৷ শেফালিকেই দেখুন ৷ সেদিন কী অসাধারণ খেলল ৷ স্মৃতি পুরো টুর্নামেন্টটা ব্যাটে লিড করল ৷ দীপ্তি, জেমাইমা সবাই নিজেদের দায়িত্বটা পালন করেছে ৷"
উল্লেখ্য, শুক্রবার রিচার শিলিগুড়ি ফেরা আগে জোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে শিলিগুড়িতে ৷ ইতিমধ্যে, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের তরফে রিচাকে শিলিগুড়ি মহিলা ক্রিকেটের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর ঘোষণা করা হয়েছে ৷ এর আগে ঋদ্বিমান সাহাকে শিলিগুড়ি ক্রিকেটের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করা হয়েছিল ৷

রিচাকে কীভাবে সংবর্ধনা দেওয়া হবে, তার মোটামুটি পরিকল্পনা করা হয়ে গিয়েছে ৷ ঘরের মেয়েকে স্বাগত জানাতে বাগডোগরা বিমানবন্দরে থাকবেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব ৷ সেখান থেকেই রোড-শো করে নিয়ে যাওয়া হবে রিচাকে ৷ রিচাকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বাঘাযতীন অ্যাথলেটিক ক্লাব ৷
এই ক্লাবেই চার বছর বয়সে রিচার ক্রিকেটে হাতেখড়ি ৷ সম্পাদক প্রসূন দাশগুপ্ত বলেন, "বুধবার ভারতীয় দলকে সংবর্ধনা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী ৷ আরও কিছু সংবর্ধনা রয়েছে ৷ আমরা প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি ৷ বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে হুড খোলা জিপে ও বাইকের কনভয় করে রিচাকে ক্লাবে নিয়ে আসা হবে ৷ বাগডোগরা বিমানবন্দরে রিচাকে স্বাগত জানাবেন মেয়র ৷"
শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের ক্রিকেট সচিব ভাস্কর দত্ত মজুমদার বলেন, "এর আগে আমরা ঋদ্ধিমান সাহাকে শিলিগুড়ির ক্রিকেটের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করেছি ৷ আমরা রিচাকে শিলিগুড়ির মহিলা ক্রিকেটের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করতে চাই ৷ ইতিমধ্যেই সেই নিয়ে সরকারিভাবে চিঠি দেওয়া হয়েছে ৷ রিচা যেভাবে বাংলাকে ও শিলিগুড়িকে গর্বিত করেছে, আর যেভাবে মহিলা ক্রিকেটের একটা অনুপ্রেরণায় পরিণত হয়েছে, সেজন্য আমাদের এই সিদ্ধান্ত ৷"

