
বন্যা দুর্গত-ভাঙনে উদ্বাস্তুরা কীভাবে SIR-এর নথি জোগাড় করবে, সরব কংগ্রেস
মঙ্গলবার মালদায় হাজির হন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার৷ সেখানেই তিনি এই নিয়ে সরব হন৷ একই দাবি রাজ্যের সেচ প্রতিমন্ত্রীরও৷

Published : October 14, 2025 at 9:51 PM IST
মালদা, 14 অক্টোবর: একদিনের সফরে মালদা এসে বিজেপি ও তৃণমূলকে বিঁধলেন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার৷ এসআইআর ইস্যুতে মানুষের মনে ভয় ধরানোর জন্য তিনি যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করেছেন, তেমনই তাঁর নিশানায় বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব৷
তিনি জানিয়েছেন, দেশ ও রাজ্যের রাজনীতিতে তৃণমূল ও বিজেপি পরস্পরের পরিপূরক হিসাবে কাজ করছে৷ রাজ্যে এসআইআর লাগু হওয়ার আগে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজনের বিষয়েও চিন্তা প্রকাশ করেন তিনি৷
জানা যাচ্ছে, ছটপুজোর পরেই রাজ্যে শুরু হতে চলেছে এসআইআর৷ এরই মধ্যে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ৷ মালদা জেলায় নদী ভাঙন ও বন্যায় অনেক মানুষ নিজেদের ঘর হারিয়েছেন৷ প্রয়োজনীয় নথিপত্র জলে ভেসে গিয়েছে৷ পাহাড় ও ডুয়ার্সের সাম্প্রতিক বন্যাতেও অনেকের এমন ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে৷ প্রশ্ন উঠেছে, এই মানুষগুলো এসআইআর-এর প্রয়োজনীয় নথিপত্র কীভাবে পেশ করবেন?
মালদা দক্ষিণ কেন্দ্রের সাংসদ ইশা খান চৌধুরি বলেন, “কিছুদিনের মধ্যেই রাজ্যে এসআইআর আসছে৷ কিন্তু একটি বিষয় নিয়ে আমরা চিন্তিত৷ বন্যা ও নদীভাঙনে সর্বস্ব হারানো কয়েক হাজার মানুষ আমার কাছে নিজেদের সমস্যা নিয়ে এসেছেন৷ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে তাঁরা তাঁদের সমস্ত নথিপত্র হারিয়েছেন৷ নদী ভাঙনে হাজার হাজার বাড়ি নদীতে তলিয়ে গিয়েছে৷ রাতের মধ্যে গোটা গ্রাম নদীতে তলিয়ে গিয়েছে৷ তাঁরা কীভাবে এসআইআর-এর প্রয়োজনীয় নথিপত্র পেশ করতে পারবেন?’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আমি ইতিমধ্যে জেলাশাসককে চিঠি দিয়েছি৷ এই মানুষদের নথিপত্রের নকল বের করার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের৷ জেলা প্রশাসনিক দফতরে সেই কাজ করার জায়গা রয়েছে৷ দুর্গত মানুষদের আমরা বলছি, সবাই যেন কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন৷ আমরা তাঁদের এসব নথিপত্র পেতে যথাসম্ভব সাহায্য করব৷ আমি জেলাশাসককে জানিয়েছি, জেলা নির্বাচন আধিকারিক হিসাবে তাঁকে এই কাজ করে দিতে হবে৷”
এদিন সকালে মালদায় পৌঁছে প্রথমেই কোতওয়ালি যান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার৷ প্রয়াত বরকত গনি খানের কবরে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পর জেলা কংগ্রেসের সদর দফতর হায়াত ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি৷ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেন, “বিজেপি জানে, চন্দ্রবাবু নাইডু কিংবা নীতিশ কুমার কোনও কারণে সমর্থন তুলে নিলে তাদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থন তাদের প্রয়োজন৷ তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসের থেকে ভালো৷ বিজেপি কোনোভাবেই কংগ্রেসকে চায় না৷ তাই ইডি, সিবিআই আর নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে কংগ্রেসকে হারানোর চেষ্টা করছে৷ তবে এতে কাজ হবে না৷’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘রাহুল গান্ধি তাদের খেলা ধরে ফেলেছেন৷ তাই রাহুল গান্ধিকে বিভিন্নভাবে আক্রমণ করছে৷ কিন্তু মালদার মানুষ কংগ্রেসপ্রেমী৷ এই জেলার মানুষ জানেন, কংগ্রেস ছাড়া তাঁদের বাঁচানোর কেউ নেই৷ বিহারে কংগ্রেস দেখিয়ে দিয়েছে, এভাবে ভোটার তালিকা থেকে মানুষের নাম বাদ দেওয়া যায় না৷ তাই এখানে যেভাবে ভয় দেখিয়ে মানুষের মধ্যে ফিয়ার সাইকোসিস তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে কংগ্রেস রাস্তায় নেমে কাজ করবে৷”
মালদার নদী ভাঙন প্রসঙ্গে এই কংগ্রেস নেতার বক্তব্য, “2024 সালে আমরা দু’বার আমাদের বক্তব্য রাজ্য সরকারের কাছে তুলে ধরেছি৷ তার পরেও এখনও পর্যন্ত গঙ্গা ভাঙন অব্যাহত৷ একের পর এক বাড়ি তলিয়ে যাচ্ছে৷ মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে৷ অথচ সরকারের তরফে তাদের পুবর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না৷ আমরা এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই৷’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘এই নিয়ে আমরা নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেছি৷ আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, আন্দোলনের রূপরেখা কেমন হবে, সেসব আগামীতে বিস্তারিতভাবে জানানো হবে৷ উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ বন্যা কিংবা মালদার নদী ভাঙন নিয়ে সংসদে প্রসঙ্গ উত্থাপন করবেন আমাদের এই রাজ্য একমাত্র সাংসদ৷ নদী ভাঙনকে জাতীয় বিপর্যয় হিসাবে ঘোষণা না করা হলে এখানকার মানুষের ক্ষতি কমবে না৷ ভালো প্যাকেজ ছাড়া দুর্গতদের কোনও উপকার হবে না৷”
বন্যাদুর্গত ও ভাঙন উদ্বাস্তুদের এসআইআর নথির ইস্যুতে কংগ্রেসের সুরেই মন্তব্য করেছেন রাজ্যের সেচ প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন৷ তিনি বলেন, “যে মানুষগুলোর সমস্ত নথিপত্র নদী গিলে ফেলেছে তারা সেই নথি পাবে কোথায় থেকে? ওদের দোষটা কোথায়? আমি এর প্রতিবাদ করছি৷ প্রয়োজনে দুর্গতদের সমর্থনে আন্দোলনে নামব৷ এসআইআর লাগু হলে এই মানুষগুলোকে আলাদা সুবিধে দিতে হবে৷’’

তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘আমি বিষয়টির উপর নজর রাখছি৷ ভাঙন উদ্বাস্তুদের প্রকৃত সংখ্যা আমার জানা নেই৷ তবে বেশ কয়েক হাজার মানুষ যে নদীর রোষে সব হারিয়েছে তা নিয়ে আমি নিশ্চিত৷ আমি বিষয়টি প্রশাসনের নজরেও আনছি৷ আশা করছি, প্রশাসন সঠিক পদক্ষেপ করবে৷”
জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া এই সমস্যার কথা মেনে নিয়ে বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে৷ দুয়ারে সরকার ক্যাম্প চলছে৷ সেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগে নথিপত্র হারানো মানুষজনকে নকল শংসাপত্রের জন্য আবেদন জানানোর আবেদন জানানো হয়েছে৷ এছাড়াও দুর্গত এলাকায় বিশেষ শিবির শুরু করা হয়েছে৷ সেখানেও দুর্গত মানুষজন নিজেদের প্রয়োজনীয় নথিপত্র করে নিতে পারেন৷ সেই শিবির শুরু হয়ে গিয়েছে৷ দুর্গত মানুষজনের কথা ভেবে আমরা শিবিরগুলির সময়সীমা দু’সপ্তাহ বাড়িয়ে দিচ্ছি৷”

